ইসলামে পাত্র-পাত্রী দেখার বিধান কি?

ইসলামে পাত্র-পাত্রী দেখার বিধান কি?
পাত্রীকে কতটুকু দেখতে পারবে, কতবার দেখতে পারবে এবং কারা দেখতে পারবে?

– শায়খ আব্দুল্লাহ আল মামুন (হাঃ)

বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রী-পাত্রী দেখার শরঈ বিধান কি?
বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রী দেখা ৪ মাযহাব সহ অধিকাংশ আলেমদের মতে এটি একটি মুস্তাহাব কাজ। যেমনটি ইমাম নববী রহঃ উল্লেখ করেন –
وفيه استحباب النظر إلى وجه من يريد تزوجها ، وهو مذهبنا ومذهب مالك وأبي حنيفة وسائر الكوفيين وأحمد
وجماهير العلماء ،
[শরহে মুসলিম নিন নাওয়াউই ৯/৫৫২ হাঃ১৪২৪]
আল্লাহ তা’লা বলেন-
فَانْكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاء
‘তোমরা বিবাহ কর সেই স্ত্রীলোক, যাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে’।
[সূরা নিসাঃ ৩]
অনুরূপভাবে পাত্রীও তার পাত্রকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে দেখতে পারবে।
.
পাত্রীকে কারা দেখতে পারবে?
এক্ষেত্রে পাত্রীকে পাত্রের মা বোন ও পরিবারের মহিলা শ্রেণীর সবাই দেখতে পারবে কিন্তু পাত্র ছাড়া তার পরিচিত আর কোন পুরুষই পাত্রীকে দেখতে পারবেনা। যেমনঃ পাত্রের বাবা,চাচা,দাদা,ফুফা,খালু,
মামা,ভাই,দুলাভাই,বন্ধু ইত্যাদি।
.
পাত্রীর কোন কোন অঙ্গ কতবার দেখা যাবে?
পাত্রের জন্য পাত্রীকে দেখার ক্ষেত্রে কেবল পাত্রীর চেহারা,চোখ, হাতের কবজি অবধি ও পায়ের টাখনু পর্যন্ত দেখার সুযোগ রয়েছে এছাড়া অন্য কোন অঙ্গ দেখা জায়েয নেই এমনকি মাথার চুলও দেখা জায়েয নেই।
অবশ্য প্রয়োজন অনুযায়ী খুব ভালো করে দেখতে এবং বারবার তাকাতেও কোনো অসুবিধা নেই।
.
এ ক্ষেত্রে উত্তম ও সহজ পন্থা হলো- পাত্রপক্ষের নির্ভরযোগ্য কোন মহিলা পাত্রীর খুঁটিনাটি সবকিছু দেখে এসে পাত্রকে অবহিত করবে। এরপর বিবাহের ইচ্ছা হলে পাত্র সরাসরি পাত্রীকে দেখবে।
পাত্রীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করা যাবেনাঃ
আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পাত্র ও পাত্রী নির্জনে আলাদা স্থানে একত্রিত হয়ে কথা বলতে পারবেনা, যা বলার মাহরামদের সামনেই বলতে হবে।
[ সুনানে আবু দাউদ, ২/৩১৫ হাদীসঃ ২০৮২; সুনানে ইবনে মাজাহ,২/৭২৮ হাদীসঃ ১৮৬৬; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৬/১৬৩ হাদীসঃ ১০৩৩৫; হেদায়া ৪/৪৪৩, রদ্দুর মুহতার ১/৪০৭; ফাতাওয়া শামী ৬/৩৭০; বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৩১; ফতহুল বারী ৯/১৮২; নাইলুল আওত্বার ৬/১১১; রওদুত্ব ত্বলেবীন ৭/১৯]
.
এই বিষয়ে কতিপয় হাদীসঃ
১) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম।
এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জানালেন যে, তিনি জনৈক আনসারী মেয়েকে বিবাহ করতে চান। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে দেখেছো?
উত্তরে তিনি বললেন, না, দেখিনি ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “যাও, দেখে এসো।
কারণ, আনসারদের চোখে কিছু ত্রুটি (চক্ষু ক্ষুদ্রতা) আছে।
كنت عند النبي صلى الله عليه وسلم فأتاه رجل فأخبره أنه تزوج امرأة من الأنصار فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم أنظرت إليها قال لا قال فاذهب فانظر إليها فإن في أعين الأنصار شيئا
[সহীহ মুসলিম, ২/১০৪ হাদীসঃ ১৪২৪]
.
২) মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম।
রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন,
هَلْ نَظَرْت إلَيْهَا؟ قُلْتُ : لاَ، قَالَ فَانْظُرْ إلَيْهَا، فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا.
‘তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসা জন্মাবে’।
[সুনানে তিরমিযীঃ১০৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহঃ১৮৬৫;মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৫/২০৫৩ হাঃ৩১০৭;সুনানুল কুবরা ৭/১৩৫-১৩৬ হাঃ ১৩৪৮৮; সুনানুস সুগরাঃ২৩৫৩; মুসনাদে আহমাদ ৪/২৪৬; সুনানে দারেমী ২/১৩৪; মুস্তাদরাকে হাকেম ২/১৬৫]
.
৩) নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا أَلْقَى اللَّهُ فِي قَلْبِ امْرِئٍ خِطْبَةَ امْرَأَةٍ فَلَا بَأْسَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا
‘ আল্লাহ যখন কোন ব্যক্তির অন্তরে কোন নারীকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত ঢেলে দেন তখন উক্ত নারীকে দেখায় কোন সমস্যা নেই।’
[সুনানে ইবনে মাজাহঃ১৮৬৪; মুসনাদে আহমাদঃ১৮০০৫; নাইলুল আওত্বার ৬/১৩২ হাঃ২৬৪৪- হাদিসটির মান সহীহ]
.
৪) নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন-
إذا خطب أحدكم امرأة فلا جناح عليه أن ينظر منها إذا كان إنما ينظر إليها لخطبة ، وإن كانت لا تعلم
“তোমাদের কেউ কোনো নারীর প্রতি বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের পর তাকে দেখলে কোন গুণাহ হবে না, যদিও সে না জানে।”
[মুসনাদে আহমাদ ৫/৪২৪; নাইলুল আওত্বার ৬/১৩২ হাঃ২৬৪৩- হাদীসটির মান সহীহ। ইমাম হাইসামীও একে সহোহ আখ্যায়িত করেছেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/২৭৬)]
.
উল্লেখিত হাদীস দ্বয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম) বলেন, বিয়ের প্রস্তাব দাতা যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রীকে দেখে, তাহলে গুণাহ হবে না। এতে প্রতীয়মান হলো যে, যারা বিয়ের উদ্যোগ না নিয়ে, এমনিই দেখে তারা গুনাহগার হবে। অনুরূপ যারা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের উদ্দেশ্যে নয় বরং মহিলার রূপ লাবণ্য দর্শনের স্বাদ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে দেখে থাকে, তারাও পাপাচারীদের দলভুক্ত হবে।
পক্ষান্তরে একজনের সাথে বিবাহের কথাবার্তা হয়ে বিবাহ – বন্ধনের সময় অন্যের সাথে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে দিলে সে বিবাহ শুদ্ধ নয়। এমন করলে মেয়েকে ব্যভিচার করতে হবে।
[হাশিয়াতু রওদ্বিল মুরবি ৬/ ২৫৪]
.
পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে উল্লেখিত মাসালাহ গুলোর বিস্তারিত দলিল ও ৪ মাযহাবের অবস্থান জানতে দেখুন-
হানাফীঃ
হেদায়া ৪/৪৪৩, রদ্দুর মুহতার ১/৪০৭; ফাতাওয়া শামী ৬/৩৭০; বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৩১; তাবয়ীনুল হাক্বায়েক্ব, যাইলাঈ ৬/১৮; আল বিনায়াহ শরহুল হিদায়াহ ১২/১৩৫; আল মাবসূত্ব ১০/১৫৪-১৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১২২।
মালেকীঃ
আশ শারহুল কাবীর লিদ দারদীর ওয়া হাশিয়াতুদ দাসূক্বী ২/২১৫; আত তাজু ওয়াল ইকলীল ৩/৪০৪; শরহুয যুরক্বানী আলা মুখতাসরিল খলীল; আল কাফী ফী ফিকহি আহলিল মাদীনাহ, ইবনে আব্দিল বার ২/৫১৯; মাওয়াহেবুল জালীল ৫/২১।
শাফেয়ীঃ
রওদ্বাতুত ত্বলেবীন,নববী ৭/১৯;ফতহুল বারী ৯/১৮২; তুহফাতুল মুহতাজ ৭/১৯০; হাশিয়াতু ক্বলইঊবী ওয়া উমাইরাহ ৩/২০৮।
হাম্বলীঃ
আল মুগনী ৬/৫৫৩; আল ইনসাফ,মারদাউই ৮/১৫; আল ইক্বনা ৩/১৫৭; কাশশাফুল ক্বিনা ৫/১০; আহকামুন নিসা, ইবনুল জাওযীঃ৩০৫।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *