ঈদুল আযহার নামায, ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ এবং ঈদের নামায বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর


.

ঈদুল আযহার নামায

.
ঈদুল আযহার নামায প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষের উপর ওয়াজিব। মেয়েদের উপর ওয়াজিব নয়। মেয়েরা ঈদের নামাযের জন্য ইদগাহে যাবে না। তেমনিভাবে নিজ গৃহে নিজেরা জামাত করেও পড়বে না।

عن نافع عن ابن عمر أنه كان لا يخرج نسائه في العيدين.

অর্থাৎ নাফে রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. তাঁর নারীদেরকে দুই ঈদে ঈদগাহে যেতে দিতেন না। আল আওসাত ৪/৩০১

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عن عروة عن أبيه أنه كان لا يدع امرأة من أهله تخرج إلى فطر ولا إلى أضحى.

উরওয়া তার পিতা (যুবাইর রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজ পরিবারের নারীদেরকে ঈদুল ফিতর ও ইদুল আযহাতে যেতে দিতেন না। মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৫৮৪৬

ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল আলআনসারী রাহ. (১৪৩ হি.) বলেন,

لا نعرف خروج المرأة الشابة عندنا في العيدين

অর্থাৎ, আমাদের সময়ে দুই ঈদের জন্য যুবতী নারীদের বের হওয়ার প্রচলন ছিল না। আল আওসাত ৪/৩০২; উমদাতুল কারী ৩/৩০৫

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,

يكره خروج النساء في العيدين.

উভয় ঈদে মহিলাদের (নামাযের জন্য) বাইরে যাওয়া মাকরূহ। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/২৩৪

দেখুন : কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা ১/২০১; কিতাবুল আছার ২৪৭; হেদায়া ১/১২৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৬৬; মাসাইলুল ইমাম আহমদ ১১৫; আল মুদাওওয়ানা ১/১৫৫; শরহুল মুহাযযাব ৫/১৩
.

ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ

.
১. মিসওয়াকসহ অযু করে উত্তমরূপে গোসল করা। ২. নিজের উত্তম কাপড় পরা। ইবনে উমর রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম দুই ঈদে উত্তম কাপড় পরতেন। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৪. কুরবানীর ঈদে নামাযের আগে কিছু না খাওয়া মুস্তাহাব। কোনো কোনো ফকীহের মতে, যে কুরবানী করবে না তার জন্যও ঈদের নামাযের আগে খানা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরে কিছু না খেয়ে নামাযের জন্য বের হতেন না, আর কুরবানীর ঈদে নামাযের আগে কিছু খেতেন না। জামে তিরমিযী ১/৭১, হাদীস ৫৪২;

শাবী রাহ. বলেন, সুন্নত হল, ঈদুল ফিতরের দিন নামাযে যাওয়ার আগে খাওয়া আর ঈদুল আযহার দিন নামায পর্যন্ত খাবারকে বিলম্বিত করা। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫৬৩৭

হযরত বুরাইদা রা. বলেন,

أن النبي صلى الله عليه وسلم كان لا يخرج يوم الفطر حتى يطعم وكان لا يأكل يوم النَّحْرِ شيأ حتى يرجع، فيأكل من أضحيته.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের জন্য না খেয়ে বের হতেন না। আর ঈদুল আযহাতে নামাযের থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত কিছু খেতেন না। এরপর প্রথমে কুরবানীর গোস্ত খেতেন। মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২৯৮; সুনানে দারাকুতনী ১/৪৫, হাদীস ১৭১৫; মেরকাত ৩/৪৯২; মাআরিফুস সুনান ৪/৪৫১; শরহে মুনয়া ৫৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৬; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২১১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২৪

৫. ওযর না থাকলে ঈদগাহে নামায পড়া। আবু সাঈদ রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর এবং আযহাতে ইদগাহে যেতেন। সহীহ বুখারী ১/১৩১

৬. রাস্তায় উচ্চস্বরে তাকবীরে তাশরীক পড়া।

৭. সম্ভব হলে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে আসা। সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৮৬

মাসআলা : ঈদের নামাযের পূর্বে কোথাও কোনো ধরনের নফল নামায না পড়া এবং নামাযের পর ঈদগাহেও না পড়া। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামায পড়েছেন, কিন্তু এর আগে বা পরে কোনো নামায পড়েননি। সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৪
.

ঈদের নামায বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর

.
প্রশ্ন : আমাদের কিছু ভাই বলে থাকেন যে, আমরা যে পদ্ধতিতে ঈদের নামায পড়ে থাকি তা সুন্নাহসম্মত নয়। সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হল বারো তাকবীরের সঙ্গে নামায আদায় করা। তাদের কথা কতটুকু ঠিক? আর আমরা যে পদ্ধতিতে নামায আদায় করি তার দলীল কী?
.
উত্তর : ইবাদতের নিয়ম-পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে ওহীর উপর নির্ভরশীল। তাই এ ধরনের বিষয়ে বুনিয়াদ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষা। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে ঈদের নামাযের নিয়ম-পদ্ধতি শিখিয়েছেন এবং তাঁরা পরবর্তী লোকদেরকে সেই নিয়মই শিখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি শিখিয়েছেন তার সবগুলোই সঠিক ও জায়েয। ঈদের তাকবীর বলার ক্ষেত্রেও একাধিক নিয়ম পাওয়া যায়, যার সবগুলোই সঠিক। এক্ষেত্রে বারো তাকবীরের নিয়ম যেমন হাদীসে পাওয়া যায় তেমনি চার তাকবীরের নিয়মও হাদীস শরীফে রয়েছে। তাই বারো তাকবীরের পন’াও জায়েয পন’া। কোনো দেশে বা কোনো ঈদগাহে যদি এই পদ্ধতিতে নামায হয় তাহলে আপত্তি করার কিছু নেই। ঝগড়া-বিবাদের তো প্রশ্নই ওঠে না। তদ্রূপ যে পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা নামায পড়ে থাকি সেই পদ্ধতিও সহীহ হাদীস দ্ব

ারা প্রমাণিত এবং একাধিক জলীলুল কদর সাহাবী এই পদ্ধতির উপর আমল করেছেন। অতএব এ বিষয়ে কোনো বিভ্রানি- ছড়ানো সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচায়ক। নিম্নে এ পদ্ধতির দু’টি দলীল উল্লেখ করা হল। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী আবু আবদুর রহমান কাসিম বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবী হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, ‘‘নবীজী ঈদের দিন আমাদের নামায পড়ালেন এবং চারটি করে তাকবীর দিলেন। নামায শেষে আমাদের দিকে তাকিয়ে ইরশাদ করলেন, ‘ভুলো না যেন, তারপর হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বন্ধ করে বাকি চার আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করে বললেন, জানাযার তাকবীরের মতো (ঈদের নামাযেও চারটি করে তাকবীর হয়ে থাকে)’।’’-তহাবী ২/৩৭১ (কিতাবুু যিয়াদাত ১ম বাব) এই হাদীসটি সহীহ এবং এর সকল রাবী ‘ছিকাহ’ নির্ভরযোগ্য। ইমাম তহাবী রাহ.-এর ভাষ্য অনুযায়ী এদের বর্ণনাসমূহ সহীহ হওয়া বিশেষজ্ঞদের নিকট সর্বজনবিদিত। ইমাম তহাবী রাহ. একথাও বলেছেন যে, এই হাদীসের সনদ ওই সব হাদীসের সনদ থেকে অধিক সহীহ যেখানে বারো তাকবীরের কথা বলা হয়েছে। ২. (প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম) মাকহুল বলেছেন, আমাকে আবু হুরায়রা রা.-এর সহচর আবু আয়েশা জানিয়েছেন যে, (কূফার আমীর) সাঈদ ইবনুল আছ হযরত আবু মুসা আশআরী রা. ও হযরত হুযায়ফা রা.কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরে কয় তাকবীর দিতেন? আবু মুসা আশআরী রা. উত্তরে বললেন, জানাযার তাকবীরের সমসংখ্যক (চার) তাকবীর দিতেন। হুযায়ফা রা. (আবু মুসা রা.-এর সমর্থনে) বললেন, তিনি ঠিক বলেছেন। আবু মুসা রা. আরো বললেন, আমি যখন বসরার আমীর হিসাবে সেখানে ছিলাম তখন চার তাকবীর দিয়েছি। আবু আয়েশা বলেন, সাঈদ ইবনুল আছ-এর এই প্রশ্নের সময় আমি সেখানে উপসি’ত ছিলাম। তিনি আরো বলেন, আবু মুসা রা-এর বাক্য ‘জানাযার মতো চার তাকবীর’ এখনো আমার স্পষ্ট মনে আছে।-সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ১১৫০; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ২/৭৮, কিতাবু সালাতিল ঈদাইন, বাব নং ১২; মুসনাদে আহমদ ৪/৪১৬ সনদের বিবেচনায় এই হাদীসটি হাসান এবং হাসান হাদীস গ্রহণযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার। বিস-ারিত আলোচনার জন্য আলকাউসার অক্টোবর ও নভেম্বর ২০০৫ সংখ্যা অথবা মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে প্রকাশিত পুসি-কা ‘সহীহ হাদীসের আলোকে তারাবীর রাকাআত সংখ্যা ও সহীহ হাদীসের আলোকে ঈদের নামায’ অধ্যয়ন করা যেতে পারে।

.

.
প্রশ্ন:
আমাদের মসজিদে উভয় ঈদের নামাযের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় এবং ঠিক সময়েই নামায শুরু করা হয়। যার কারণে অনেক মুসল্লি মাসবুক হয়। তাই আমি ঈদের নামাযের মাসবুক সম্পর্কে কিছু মাসআলা জানতে চাই।
ক) ইমাম সাহেবকে প্রথম রাকাতে কিরাত অবস্থায় পাওয়া গেলে তখন কী করবে?
খ) আর এক রাকাত ছুটে গেলে তা পরবর্তীতে কোন নিয়মে আদায় করবে?
গ) ইমাম সাহেবকে তাশাহহুদে পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ঈদের নামায পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে কি? হলে এক্ষেত্রে সালামের পর দু রাকাত কীভাবে আদায় করবে?
.
উত্তর:
ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতের কিরাত অবস্থায় শরিক হলে তাকবীরে তাহরীমার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে। অতপর বাকি নামায যথানিয়মে ইমামের সাথে আদায় করবে। আর ঈদের নামাযের এক রাকাত ছুটে গেলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে আগে সূরা-কিরাত পড়বে এরপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে।
আর কোনো ব্যক্তি ইমামের তাশাহহুদ অবস্থায় জামাতে শরিক হলে তার নামাযও সহীহ হবে। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের সালামের পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই দুই রাকাত নামায পড়বে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের শুরুতেই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নিবে। অতপর সূরা-কিরাত পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯২; কিতাবুল আছল ১/৩২২; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, আছর : ৫৮৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৫

.

.
৩৩৮০ . আনোয়ার শাহ মাবরূর . মাদানী মঞ্জিল, বারাহীপুর
প্রশ্ন:
মাঝেমধ্যে কোনো কোনো মুসল্লিকে নামায শেষে পাশের জনের সাথে মুসাফাহা করতে দেখা যায়। আবার অনেককে দেখা যায়, ঈদের নামাযের পর মুসাফাহা-মুআনাকা করেন। শুনেছি, এগুলো নাকি বিদআত। এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান জানালে উপকৃত হব।
.
উত্তর:
মুসাফাহা-মুআনাকা সাক্ষাতের সময়ের একটি সুন্নত। এটি নামাযের পর করণীয় কোনো আমল নয়। নামাযের পর পরস্পরে মুসাফাহা-মুআনাকা করা সাহাবা-তাবেয়ীন ও সালাফে সালেহীন থেকে প্রমাণিত নেই।
সুতরাং কেউ যদি নামাযের পর মুসাফাহা-মুআনাকাকে এ সময়ের করণীয় আমল কিংবা সুন্নত মনে করে পালন করে তবে তা বিদআত হবে। অবশ্য কেউ যদি নামাযের পর কোনো ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের কারণে পাশের ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করে তবে তা সঠিক হবে এবং সুন্নত হিসেবেই ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে এটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮১; আসসিআয়াহ ২/২৬৪, ২৬৫

.

.
১৮৭৩, ১৮৭৪, ১৮৭৫ . মুহাম্মাদ আবদুর রহমান . নরসিংদী
প্রশ্ন:১৮৭৩. প্রশ্ন : ক) যদি কোনো ব
্যক্তি ঈদের নামায নিজে আদায় করার পর ঈদের নামাযের দ্বিতীয় জামাতের ইমামতি করেন তাহলে তার উক্ত ইমামতি বৈধ হবে কি না? ১৮৭৪. প্রশ্ন : খ) যারা তার পিছনে ইক্তেদা করে ঈদের নামায আদায় করবেন তাদের নামায সহীহ হবে কি না? ১৮৭৫. প্রশ্ন : গ) ঈদের নামাযের প্রথম জামাতের মুক্তাদি দ্বিতীয় জামাতের ইমামতি করতে পারবে কি না-প্রশ্ন করা হলে এক আলেম সাহেব বৈধ বলে ফতোয়া প্রদান করেন। এ ফতোয়া সঠিক কি না? শরীয়তের দৃষ্টিতে ফতোয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবাদির উদ্ধৃতি সহকারে উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ হব।
.
উত্তর:উত্তর : ক ও খ) যে ব্যক্তি একবার নামায আদায় করেছে তার জন্য দ্বিতীয় জামাতের ইমাম হওয়ার সুযোগ নেই। শরীয়তে ঈদের নামায একবার, দুইবার নয়। যে ব্যক্তি একবার নামায পড়েছে তার জন্য দ্বিতীয় নামায ঈদের নামায নয়; বরং তা নফল নামায হবে। আর নফল আদায়কারী ইমামের পিছনে, ঈদের নামায আদায়কারী মুসল্লির ইক্তেদা করা বৈধ নয়। উক্ত মাসআলায় যদিও বিভিন্ন ফিকহী মাযহাবে মতভেদ রয়েছে, কিন্তু দলীলের বিচারে উল্লেখিত সিদ্ধান্তই অগ্রগণ্য এবং অধিকাংশ ফকীহ এই সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সহীহ বুখারীর এক হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমাম বানানো হয় তাঁর অনুসরণের জন্য অতএব তোমরা ভিন্নতা অবলম্বন করবে না।’-সহীহ বুখারী ১/১০ জানা কথা, ঈদের নামাযের মুক্তাদীগণ নফল আদায়কারী ইমামের ইক্তেদা করলে ইমামের অনুসরণ হয় না; বরং ইমাম মুক্তাদীর নামায ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত কাতাদাহ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব ও হাসান বসরী রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি যোহরের জামাত মনে করে আসরের নামায আদায়রত জামাতে শরীক হল এবং নামাযের পর সে জানতে পারল, তারা আসর আদায় করেছে, উক্ত ব্যক্তি আসর ও যোহর উভয় নামায পুনরায় পড়বে।’-মুসন্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪ আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, ইমাম যখন ঈদের নামায পড়বেন, তিনি অতিরিক্ত তাকবীরের সাথে পড়াবেন। অথচ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো নফল নামাযে ঈদের নামাযের মতো অতিরিক্ত তাকবীর নেই। বিশেষ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ জীবনে কখনো আদায়কৃত ঈদের নামায পুনরায় পড়াননি। কোনো সাহাবীকে এমন করতে আদেশও করেননি বা কোনো সাহাবী এমন করেছেন তার প্রমাণ নেই; বরং হাদীস শরীফে এক নামায একাধিকবার পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কোনো নামায একদিনে একাধিকবার পড়ো না।-আবু দাউদ ১/৮৫ উত্তর : গ) সম্ভবত তিনি অন্য কোনো মাযহাব অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন। এটা ঠিক হয়নি। এর প্রথম কারণ হল, যে মত অনুযায়ী তিনি ফতোয়া দিয়েছেন তা দলীলের বিচারে দুর্বল। দ্বিতীয় কারণ হল এতদাঞ্চলে ফিকহে হানাফী অনুযায়ী কুরআন ও হাদীসের উপর আমল করা হয়। তাই শরীয়তসম্মত প্রয়োজন ছাড়া বিপরীত ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা দ্বীনী মাসলাহাতের পরিপন্থী। -আততামহীদ ২৪/৩৬৭; আলমাজমূ’ ৪/১৬৯; ফাতহুল বারী ২/২২৬; কিতাবুল উম্ম ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৬; যাখীরা ২/২৪২; আলমুনতাকা, ইবনে তায়মিয়া ১/৬৩২; তাসহীলুল মাসালিক ২/৪৯৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
আততামহীদ ২৪/৩৬৭; আলমাজমূ’ ৪/১৬৯; ফাতহুল বারী ২/২২৬; কিতাবুল উম্ম ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৬; যাখীরা ২/২৪২; আলমুনতাকা, ইবনে তায়মিয়া ১/৬৩২; তাসহীলুল মাসালিক ২/৪৯৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪

.

.
১৮৭০ . মুহাম্মাদ সালমান . ত্রিশাল, মোমেনশাহী
প্রশ্ন:গত ঈদুল ফিতরের দিন আমাদের শহরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। ফলে মুসল্লীগণ ঈদগাহে না গিয়ে নামাযের জন্য জামে মসজিদে একত্রিত হয়। কিন’ সে সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে ঈদের নামায মসজিদে পড়া ঠিক নয়; বরং বৃষ্টির কারণে ঈদগাহে পড়া সম্ভব না হলে দ্বিতীয় দিন ঈদগাহে পড়তে হবে। মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল বৃষ্টির কারণে কি ঈদের নামায জামে মসজিদে পড়া বৈধ? প্রথম দিন মসজিদে পড়ে নেওয়া উত্তম হবে না দ্বিতীয় দিন ঈদগাহে পড়া উত্তম হবে?
.
উত্তর:স্বাভাবিক অবস্থায় ঈদের নামায ঈদগাহে পড়াই সুন্নত। তবে ওজরের কারণে মসজিদে আদায় করতে কোনো অসুবিধা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বৃষ্টির কারণে মসজিদে ঈদের নামায আদায় করেছেন বলে হাদীস শরীফে আছে। তাই ১ম দিন মসজিদে ঈদের নামায না পড়ে দ্বিতীয় দিনের জন্য বিলম্বিত করা জায়েয হবে না।
সুনানে আবু দাউদ ১/১৬৪; ইলাউস সুনান ৮/১১৩; বযলুল মাজহুদ ৬/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৮৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/১১৪; কিতাবুল উম্ম ১/২৮৬; কিতাবুল মাজমূ’ ৫/৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬
.
প্রশ্ন:
ঈদের খুতবায় অনেককে প্রথম খুতবার শুরুতে ৯ বার, দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে ৭বার এবং খুতবা শেষে ১৪ বার তাকবীর বলতে লক্ষ্য করা
যায়। জানার বিষয় হল, এভাবে তাকবীর বলার হুকুম কী? এটি কি হাদীস বা আছার দ্বারা প্রমাণিত? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
.
উত্তর:
ঈদের নামাযের প্রথম খুতবার শুরুতে নয়বার ও দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে সাতবার ধারাবাহিকভাবে‘আল্লাহু আকবার’বলামুস্তাহাব। এটি বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ ইবনে মাসউদ রাহ. থেকে বর্ণিত আছে। আর খুতবাহ শেষে ১৪ বার তাকবীর বলার কথা হাদীস বা আছারে পাওয়া যায়নি। ফিকহের কোনো কোনো কিতাবে এভাবে ১৪বার তাকবীর বলার কথা উল্লেখ আছে। তবে উভয় ঈদের খুতবায়ই ব্যাপকভাবে বেশি বেশি তাকবীর বলা সাহাবী ও তাবেয়ীদের আছার দ্বারা প্রমাণিত।
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/২৯০; সুনানে বাইহাকী ৩/২৯৯; মাআরিফাতুস সুনান ওয়াল আছার ৩/৪৯; আলআওসাত ৪/৩২৮; কিতাবুল উ্‌মম,শাফেয়ী ১/২৭৩; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/২৭৭; আলবয়ান ওয়াততাহসীল ১/৩০০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; ইলাউস সুনান ৮/১৬১-১৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৫
.
[ মাসিক আলকাউসারের বিভিন্ন সংখ্যা থেকে সংগৃহীত ]

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *