ওরিয়েন্টালিস্ট এবং ওরিয়েন্টালিস্টদের ভাবশিষ্যদের অন্যতম কাজ হচ্ছে ইসলাম ও ইসলামের ধারক ও বাহক উলামায়ে কিরাম নিয়ে লাগাতার সন্দেহ সৃষ্টি করা। এটা তারা বহুকাল ধরে করে আসছে। একটা সময় ছিল যখন গোল্ড যিহারের মত অন্যান্য ওরিয়েন্টালিস্টরা ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে সংশয় তৈরি করত, এখন আক্রমণটা সেরকম নয়।
ওরিয়েন্টালিজমের বিশাল ইতিহাসে আমরা Robertus Rontenesis, Dalmata, Maracci, Sale, Palmer, Lane, Jeffery, Menezes, Bell প্রমুখকে পাই। এরা কিছুটা পশ্চাদপদ ছিল। এদের অধিকাংশেরই আরবির জ্ঞান ছিল দুর্বল, এদের মূল টার্গেট ছিল কুর’আন ও হাদিস। তারা কেউ কুর’আনের বিকৃত অনুবাদ করে নিজেই সেটাকে আক্রমণ করেছে, কেউ কুর’আনের সূরাক্রমের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছে।
আপনারা হয়ত জানেন না Rodwell, Jeffery, Muir এবং Noldeke কুর’আনের সূরাক্রমকে পুনর্বিন্যাস্ত করতে চেষ্টা করেছে। অবশ্য ৪ জনের কেউই নিজের ক্রমের সাথে অপরের ক্রমে একমত হয়নি।
এরা কেউ কুর’আন সংরক্ষণ নিয়ে সংশয় তুলেছে, কেউ হাদিসের প্রামাণিকতা নিয়ে তুলেছে, কেউ বলেছে হাদিসে অনেক Bizarre জিনিস আছে, কেউ আবার কুর’আনের হুরুফ নিয়ে প্রশ্ন উঠিয়েছে। এভাবে এদের আক্রমণ চলেছে।
কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, উলামায়ে কিরাম সম্মুখ সারিতে থেকে এর উত্তর দিয়েছেন। এটা সত্য যে আমাদের অঞ্চল এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানিতে অন্যান্য অঞ্চলের উলামায়ে কিরাম এর জবাব দিয়েছেন। আর আমাদের অঞ্চল আসলে তাকলিদের ফায়দা পেয়েছে, অজ্ঞতার নিরাপত্তা আর কি।
কিন্তু Oriental study -এর চিন্তা অনেকদূর বিস্তৃত। তারা কোনো মুসলিম জনপদকেই ছেড়ে কথা বলবে না। ফলে আমাদের এদিকেও ধেয়ে আসছে মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচর্চার ঢেউ।
এজন্য প্রয়োজন প্রথম শত্রুকে চিহ্নিত করা। শতাব্দীর শিক্ষা থেকে তারা বুঝেছে তাদের মূল সমস্যা রিজাল- উলামায়ে কিরাম। হ্যা এককভাবে অনেকের অনেক ত্রুটি আছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই লৌহ প্রাচীর রুখে দিতে পারে, এবং দিয়েছেও নানা ফিতনাকে। তাই পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে, ইসলামিক মাগরিবে তাদের মূল কাজ ছিল মানুষকে উলামা বিমুখ করে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক limited ও পাশ্চাত্য প্রভাবিত সিলেবাস পড়া মানুষগুলোর দিকে ধাবিত করা।
এজন্য প্রয়োজন পৃথক সংজ্ঞায়ন। তাই তারা মানুষকে বোঝাচ্ছে আলিমের সংজ্ঞা তা নয় যা তোমরা এতদিন বুঝেছ, এসকল মূর্খ, গেঁয়ো, অজ্ঞ ও অশুদ্ধভাষী লোকগুলো আলিম না, তা যত আরবি বুঝুক আর বুখারি-মুসলিম পড়াতে পারুক, আলিম সে যে পশ্চিমের স্ট্যান্ডার্ডে উত্তীর্ণ হবে, যে পশ্চিম প্রভাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে ও ডিগ্রী নেবে, পশ্চিম প্রভাবিত জার্নালে যার গবেষণা প্রকাশিত হবে, পশ্চিমের অনুষ্ঠানে যে দাওয়াত পাবে, হ্যা আলিম তো সে-ই!
তো আমাদের এসব বুঝতে হবে। এখন পশ্চিমা ইসলাম প্রচারকারীরা আগের মত নেই, orientalist দের অগ্রগতিও হয়েছে বেশ, এক কালে তারা মিসরীয় আরবিতে আবদ্ধ থাকায় আমরা যে সুবিধা পাচ্ছিলাম সেই দিন আর নেই। এখন ওদের হাতে আছে মুসলমান নামধারী Orientalist যাদের দেহ মুসলিম দেশে থাকলেও ক্বলব পড়ে থাকে পশ্চিমে, আবার কেউ কেউ পশ্চিমে থেকেই পশ্চিমী ইসলামের প্রচার করে। এজন্য এসব লোকের মুখে আজ সেসব বস্তাপচা কথা শুনতে পাওয়া যায় যা বহু আগেই Orientalist দের মুখে শোনা গিয়েছিল, যার রদ অনেক আগেই করা হয়েছে। এরা হয় জানে না, নয় না জানার ভান করে, কিংবা গোলামী এদের অন্তরকে জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে ফেলেছে।
এই সবগুলোই সামনে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এটাকে খাটো করে দেখা নির্ঘাৎ নির্বুদ্ধিতা। সময়ের আগেই সময়ের প্রয়োজন বুঝতে পারা সার্থকতার প্রথম সোপান। গোড়ায় হাত দিন, মূল সমস্যাকে উপড়ে ফেলুন, গোড়াটা টানুন, কীসব আগাছা নিয়ে পড়ে আছেন আপনারা!
~ মানজুরুল কারীম