অযুহাত!

‘অমুক মহিলা হিজাব করে তমুক তমুক কাজ করে বেড়ায়। সে হিজাবের অপমান করছে!

‘কাণ্ড দেখেছ! মুখে এত লম্বা দাড়ি আর কাজ এই রকম। এরা তাে দাড়ির মর্যাদা নষ্ট করছে।
.
এ ধরনের কথা আমরা প্রায়ই শুনি, তাই না? আমরা অনেকে এ ধরনের কথা বলেও ফেলি। কিন্তু কথাগুলাে আর এর পেছনের যুক্তিগুলাে ঠিক না। ইসলামের সম্মান বা ভাবমূর্তি কেউ নষ্ট করতে পারে না। ইসলামের চিহ্ন বা শিয়ারগুলাের মর্যাদা কমানাে কারও পক্ষে সম্ভব না। কেউ আক্রমণ করতে পারে, ইসলামের ব্যাপারে কুৎসা রটাতে পারে। কিন্তু তাতে ইসলামের সম্মান, মর্যাদা এক বিন্দু কমে না। হিজাব করা কিংবা দাড়িরাখা লােকের অপরাধের কারণে ইসলামের কোনাে ক্ষতি হয় না।

আল্লাহ বলেন,
যে সঠিক পথে চলবে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই সঠিক পথে চলবে, আর যে গুমরাহ হবে তার গুমরাহীর পরিণাম তার নিজের ওপরেই পড়বে। কোনাে বােঝা বহনকারী অন্যের বােঝা বহন করবে না। [তরজমা, সূরা আল-ইসরা, ১৫]

এবং তিনি বলেন,
من عمل صاا قلنفسيه يد ومن أساء فعليها وما ربك بظلام للعبيد
যে সৎকাজ করবে নিজের কল্যাণেই করবে; যে অসৎ কাজ করবে তার পরিণতি তাকেই ভােগ করতে হবে। তােমার প্রতিপালক বান্দাদের প্রতি যালিম নন।
[তরজমা, সূরা হা-মীম-আস-সাজদা, ৪৬]

এখন আবার বলে বসবেন না যেন, “আরে, আপনি তাে কথা বােঝেনইনি। আক্ষরিক অর্থের ওপর এত জোর দেয়া যাবে না। বক্তা কী বােঝাতে চাচ্ছে সেটা বােঝার চেষ্টা করুন।

কারণ, এ ধরনের কথার পেছনে উদ্দেশ্য সাধারণত ভালাে হয় না। দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন লােকেরা তাদের উদাসীনতা আর অবহেলাকে জায়েজ করার জন্য এ ধরনের কথা বলে।

‘অমুক যেহেতু নামায পড়ে আবার ঘুষও খায়, তাই আমি নামায পড়ব না। কিন্তু নামায না পড়লেও আমি কিন্তু ঘুষ খাই না। আমার মধ্যে দ্বিমুখিতা নেই।’

‘অমুক মহিলা হিজাব করে তমুক তমুক কাজ করে বেড়ায়। সে হিজাবের অপমান করছে! আমি তাে শালীনতা বজায় রেখেই চলাফেরা করি। আমার মন পরিষ্কার।’

‘মৌলবিরা তাে সারাদিন কুরআন-হাদিস নিয়ে থাকে, আবার পত্রিকায় দেখি মাদরাসায় ধর্ষণ হয়। কাজেই অত কুরআন-হাদিস মানার দরকার নেই। সবকিছুতে কুরআন-হাদিস টেনে সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। তবে আমার মনে ভক্তি-বিশ্বাস আছে। আমি ওসব মৌলবিদের মতাে না!’

এ ধরনের কথা বলা লােকগুলো কি আসলে ইসলাম নিয়ে আন্তরিক চিন্তা আর উদ্বেগের জায়গা থেকে এগুলাে বলে? নাকি কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার অজুহাত দিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি আর সীমালঙ্ঘনকে জায়েজ করতে চায়?
.
শিক্ষিত লােকদের অনেকেই দুর্নীতিবাজ হয়, তাই আপনি পড়াশুনা করবেন না? অনেকে ঘুষ খায় আবার দানও করে, তাই আপনি দান করা ছেড়ে দেবেন? অনেকের আচরণ সামনাসামনি খুব ভালাে, কিন্তু পেছনে গীবত করে। তাই আপনি এখন সবার সাথে খারাপ আচরণ করবেন? এগুলাে কি সুস্থ কোন মানুষের কথা হতে পারে? অথচ আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে কিন্তু এসব কথাই বছরের পর বছর বলা হচ্ছে। কেউ দাড়ি রেখে, কিংবা হিজাব রেখে কোন গুনাহর কাজ করলে তাতে আল্লাহর হুকুম পালন কার বাধ্যবাধকতা তাে বদলে যায় না। আরেকজন কী করলাে তাতে আমার দায়িত্ব, আমার হিসেব তাে বদলাবে না। এসব কথা আসলে আল্লাহর অবাধ্যতা করার জন্য দুর্বল অজুহাত ছাড়া আর কিছুই না।

যে হিজাব করতে চায় না, সে নিজের অবাধ্যতাকে জায়েজ করার জন্য এসব কথা বলে। যে দাড়ি রাখতে চায় না, সে নিজের অপরাধবােধকে ঢাকার জন্য এসব অজুহাত দেয়। আল্লাহর প্রতি নিজেদের অবাধ্যতাকে আড়াল করার জন্য সে আরেকজনের অপরাধের ফিরিস্তি টানে।
.
তাছাড়া কারও খারাপ কাজের কারণে যদি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় তাহলে একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলাে ভালাে কাজের মাধ্যমে তা দূর করে দেয়া। এ জন্য আমি ইসলামের একটা বিধান পালন করা ছেড়ে দেব, এটা কোন ধরনের যুক্তি?

কেমন বিবেচনা? কেউ দাড়ি রেখে ঘুষ খায়। আপনার দায়িত্ব হলাে দাড়ি রাখার পর এমনভাবে নিজের আচরণকে উন্নত করা, যাতে ঘুষখােরের কারণে মানুষের মনে যে খারাপ ধারণা হয়েছিল সেটা আপনাকে দেখার পর চলে যায়। তবে আবারও মনে করিয়ে দিই যে, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ কর্মফল ভােগ করবে। কেউ অপরের বােঝা বহন করবে না।
.
আল্লাহ বলেন,
হে মুমিনগণ, তােমাদের ওপর তােমাদের নিজেদের দায়িত্ব। যদি তােমরা সঠিক পথে থাকো তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তােমাদের ক্ষতি করতে পারবে না…
[তরজমা, সূরা আল-মা’ইদা, ১০৫]
.
যদি আমি সীরাতুল মুস্তাকীমের ওপর থাকি, আল্লাহ আমাকে যে যে হুকুম করেছেন। সেগুলাে সঠিকভাবে মেনে চলি, তাহলে কে কী করল তাতে আমার কোনাে ক্ষতি হবে। এটাই আল্লাহর ফায়সালা। আর যে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখে তাঁর জন্য এই ফায়সালা যথেষ্ট।
.
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ। [তরজমা, সূরা আল-মুদাসসির, ৩৮]

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *