আমি আশ্চর্যান্বিত হই ওই মানুষগুলোকে দেখে যারা এখনও গান, মুভি – সুমাইয়া সুলতানা (মীম)

আমি আশ্চর্যান্বিত হই ওই মানুষগুলোকে দেখে যারা এখনও গান, মুভি, নাটক সাজেস্ট করে দেখছে, তারপর রিভিউ দেয়, এবং অন্যকে উৎসাহিত করে দেখার জন্য, নিজে সিরিয়াল নাটক দেখতে না পারলে গ্রুপে গ্রুপে পোস্ট দিয়ে আস্ক করছে, কি হয়েছে? কতটুকু গেছে? আবার বাসার আশেপাশে মানুষ টিভির সাউন্ড এতো জোরে দেয় অন্যদের বাসায়ও শুনা যায়।
আচ্ছা এই টিভিতে এবং ফোনে নাটক, মুভি, গান, অশ্লীল ভিডিও দেখে কি ফায়দা? এসব থেকে অাদৌ কি কোন ভালো কিছু শিখার আছে?

এসব দ্বারা বেপর্দা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, সমকামিতা, হারাম ভালবাসার প্রতি উৎসাহিত, ঝগড়া-বিবাদ, হত্যা, মিথ্যা, পরনিন্দা এবং নানারকমের শিরকি, কুফরি আরো বহু জঘন্য পাপকে প্রমোট করা হয়। আর এসব দেখার জন্য আকুলতা, এসব জঘন্য পাপকে পছন্দ করা এবং তার থেকে স্বাদ নেয়া দ্বারা এসব জঘন্য পাপগুলোকে নিরবে সমর্থন করছেন না ? হিন্দি মুভি, গান, নাটক গুলো দেখার মাধ্যমে আপনি মূর্তি পূজার প্রচার-প্রসারে অংশ নিচ্ছেন না? আপনার এই দেখার দ্বারা এবং ভালোলাগার রিভিউ দ্বারা যারা এসব যারা নির্মাণ করে তারা উৎসাহ পাচ্ছে না আরো নির্মাণ করার? প্রচুর মুনাফা অর্জন করছে না? মূর্তি পূজাকে সমর্থন করছেন না? মূর্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন হয়ে যাচ্ছে না? আর শিরক কত ভয়ংকর পাপ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা শিরক ব্যতীত বান্দার সব পাপ ক্ষমা করে দেন। আর এই শিরক, মূর্তিপূজা, অশ্লীলতা ও অবাধ্যতার কারণে বহু সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

তারপর সাধারণ মুসলমান তো পরের কথা দেখা যায় যারা মাদ্রাসায় পড়ে এবং অনেক নামধারী আলেম, নিকাবী বোন ও এই ব্যাধিতে ব্যাধিগ্রস্ত। কোন মুভি, গান, নাটক দেখা বাদ যায়না। আহ! তাদের কত স্টার ক্রাশ, “ইশ! যদি বিয়ে করতে পারতাম তাদের” এমন কথাও বলে।

(আল্লাহুম্মাগ ফিরলী) স্টারদের কিছু হলে বা বিয়ে হয়ে গেলে তাদের মন খারাপ হয়ে যায়।ইন্ডিয়ান স্টাররা অথবা তাদের প্রিয় যে কোন স্টার কি করছে না করছে তা নিয়ে কত আলোচনা। অধিকাংশ মুসলমান অভিনেত্রী, মডেলদের এতো পরিমাণে পছন্দ করে যে, তাদের দেখে মনে প্রশ্ন জাগবে যে, এরা কি মুসলমান?

আচ্ছা স্টাররা কি ভালো মানুষ? এদের পছন্দ করার কি কোন কারণ আছে? এদের বাস্তব জীবন সম্পর্কে জানলে কেউই পছন্দ করতো না এদের। হয়তো ভালো অল্পকিছু গুণ থাকে তবুও এরা তো দ্বীনের ক্ষতি করছে। তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা কাকে কোন আমলের জন্য নাজাত দেয় জানা নেই। তবুও এদের পছন্দ করার কোন কারণ দেখিনা।

আর তাদের সৌন্দর্যের জন্য পছন্দ করেন? এ সৌন্দর্য কয়দিনের? কিছুদিন পর তো তা ক্ষয় হয়ে যাবে। কবরে পোকামাকড়ের খাদ্য হয়ে যাবে। এ তো ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য। প্রকৃত সৌন্দর্য তো আখিরাতের চিরস্থায়ী সৌন্দর্য। তাহলে এ সৌন্দর্য দেখে পাগল হয়ে কি ফায়দা? যারা হারাম প্রচার করে তাদের পছন্দ করা কি কোন মুসলমানের শান? আর মানুষ যাদের পছন্দ করে তাদের সাথেই কিয়ামত হবে, তবে কেউ কি পছন্দ করে যে নবী রাসূলগনের সাথে না হয়ে কোন অমুসলিমের সাথে তার কিয়ামত হউক?

আফসোসের বিষয় হচ্ছে যে, সাময়িক কিছু আনন্দের জন্য আমরা কত ভয়ংকর পাপ ই না করছি। আচ্ছা কয়েকবছর আগে কোন মুভি, গান, নাটক দেখেছেন কি মনে আছে? তার স্বাদ কি এখনও লেগে আছে? তার বিবরণ দিতে পারবেন? অবশ্যই না তো তাই না? কিন্তু আমলনামায় পাপ তো লিখা হয়ে গেছে, যা তাওবা ছাড়া মুছা হবেনা। আর তাওবা-ই যদি না করা হয়? আমাদের কোন পাপ ই বাদ যাবেনা সব আমলনামায় লিখা হবে। ভয় করার জন্য এই একটা আয়াত যথেষ্ট।

يا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا.(سورة الكهف:٤٩)
হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি – সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।

তো কি ফায়দা এসব দেখে? এসব দেখে নিজেদের চোখে বিচ্ছুর পয়জন ভরা এবং কবরে নিজেদের জন্য সাপ-বিচ্ছু তৈরি করা এবং জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির জন্য নিজেকে তৈরি করা ছাড়া আর কিছু অর্জন হয় না। কিন্তু অনেক আনন্দের সাথে উপভোগ করি এবং বলি, ওহ! কি দারুণ দৃশ্য! আখিরাতে বুঝা যাবে এটা সীন(দৃশ্য) না সুম (বিষ) ছিল।

তারপর যদি কাউকে বলা হয় যে, টিভি ঘরে না রাখলে, না দেখলে এবং ফোনে মুভি, গান, নাটক, কার্টুন নাহ দেখলে সমস্যা কোথায়?
তারা বলে আমাদের সময় কাটেনা এ জন্য এসব দেখি, আরও বলে এখন কালচার ই এমন! পরিবেশই এমন! এসব ছাড়া এখন চলেনা!
ইন্নালিল্লাহ! মুসলমানের জন্যও কি সময় কাটানোর প্রশ্ন উঠতে পারে?

আমি বলি যে কি কোথায় চলে না? মুসলমানের নিকট কুরআন আছে, হাদিস আছে, ফিকহ বা ইসলামী আইন শাস্ত্র তথা মাস’আলা মাসায়িলের আলোচনা আছে, দ্বীনি কথাবার্তা আছে, যিকির-তাসবীহ আছে, আখিরাতের চিন্তা আছে, আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে চিন্তা আছে, মানুষের প্রতি সহমর্মিতা এবং তাদের জন্য কল্যাণ কামনা আছে, তাদের উদ্দেশ্যে দু’আ আছে, দ্বীনি ইলম অর্জন, বাচ্চাদের লালন পালন, ঘরের কাজকর্ম, মা-বাবার খেদমত, স্বামীর খেদমত ইত্যাদি ইত্যাদি শত-সহস্র কাজ আছে। আসেন করে তো দেখে যান। এসবের পর আবার কিভাবে সময় কাটানোর প্রশ্ন আসে?

মানুষ যে কাজে লিপ্ত থাকে এবং কাজ করতে পছন্দ করে সে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। হারামে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে কত নিকৃষ্টই না মৃত্যু হবে ভাবা যায়?

যারা এখনো গান নিয়ে মত্ত আছেন তাদের উদ্দেশ্যে সেইসব দিন রাত্রির বইয়ের একটা গল্পের অল্প কিছু অংশ উল্লেখ করলাম :

(একদিনের কথা । কাজের ফাঁকে আমি আর আমার সহকর্মী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম । এমন সময় পাশ থেকে বিকট সংঘর্ষের শব্দ আসে ! আমরা হকচকিয়ে উঠি । তাকিয়ে দেখি, দুটি গাড়ির মুখােমুখি সংঘর্ষ হয়েছে । তৎক্ষণাৎ আমরা হতাহতদের উদ্ধার করতে ছুটে যাই । এই ভয়াবহ অ্যাক্সিডেন্টের বর্ণনা দিতে গেলে আজও আমার বুক কেঁপে ওঠে । প্রথম গাড়ির দুজন যাত্রীর অবস্থা ছিল খুবই আশংকাজনক । দুজনকেই গাড়ি থেকে বের করে এনে সােজা করে মাটিতে শােয়াই । এরপর দ্রুত দ্বিতীয় গাড়ির দিকে ছুটে যাই । গিয়ে দেখি , গাড়িচালক মারা গেছে । আবার আমরা প্রথম গাড়ির কাছে ছুটে আসি । দুজনই তখন মুমূর্য । আমার সহকর্মী তাদের ‘কালিমাতুশ শাহাদাহ ’ পড়ানাের চেষ্টা করছে । সে বার বার বলছে , বলুন , লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ! মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ’।

কিন্তু তাদের দুজনের মুখ দিয়ে শুধু গানের মতাে আওয়াজ বের হচ্ছে । তাদের এ অবস্থা আমাকে প্রচণ্ড ভয় পাইয়ে দেয় । আমার সহকর্মী মৃত্যুর সময় মরণাপন্ন ব্যক্তির মানসিক অবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে জানত । তাই সে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। আমি মরণাপন্ন ব্যক্তিদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি । নড়াচড়ার শক্তিটুকও যেন হারিয়ে ফেলেছি । এর আগে কখনাে এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি । মৃত্যুর এরকম ভয়াবহ চিত্র আগে কখনাে দেখিনি । তাদের শাহাদাহ পাঠ করানাের চেষ্টা করা হচ্ছে , অথচ এই অন্তিম মুহূর্তেও তারা গানে মত্ত । কিছুতেই কোনাে লাভ হচ্ছে না । তবুও আমার সহকর্মী ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে । ধীরে ধীরে গানের আওয়াজ স্তিমিত হয়ে আসে । এক এক করে দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে যায়। নিস্তব্ধতায় চারিদিক ছেয়ে যায় । দুজনই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে । আমরা তাদেরকে আমাদের গাড়িতে তুলে নিই । সহকর্মী কোনাে কথা বলতে পারছে না । গাড়ির ভেতর দমবদ্ধকর পরিস্থিতি । হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙে সে খারাপ মৃত্যুর বর্ণনা দিতে শুরু করে । সে বলতে থাকে , মানুষের মৃত্যু ভালাে – খারাপ দুই রকমই হতে পারে । তবে মানুষ সারা জীবন যে কাজ করে , সাধারণত তার ওপরই মৃত্যু নির্ভর করে থাকে । সেদিন সে আমাকে ইসলামী – বইপত্রে বর্ণিত অনেকগুলাে গল্প শােনায় । ব্যক্তির বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ অবস্থার ভিত্তিতে মৃত্যু হওয়ার রহস্য জানায় ।

আমরা মৃত্যু আর মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে কথা বলতে বলতে হাসপাতালে পৌঁছে যাই । এ ঘটনা আমাকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয় । আমি মৃত্যুকে ভীষণভাবে ভয় পেতে শুরু করি । বাসায় ফিরে সেদিন অত্যন্ত মনােযােগ দিয়ে বিনয়ের সাথে সালাত আদায় করি ; কিন্তু সময়ের সাথে সাথে একসময় আমি এই ঘটনা থেকে বিস্মৃত হয়ে যাই । ঠিক আগের মতাে হয়ে যাই । যেন এই দুই লােকের মৃত্যু আমি দেখিইনি । তবে ওই ঘটনার পরে আমি আর কখনােই গান শুনিনি । গান শুনার যে নেশা ছিল , তা একেবারেই মুছে যায় । ওই দুই লােকের গান গাইতে গাইতে মৃত্যুর দৃশ্যই আমার মধ্যে এ পরিবর্তন এনেছিল)

– আচ্ছা কেউ কি চায় এমন মৃত্যু?

– হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা আমাকে সমস্ত জগতের জন্য রহমত এবং হেদায়েত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। আর আমার পরওয়ারদেগার আমাকে খেলা-ধুলার সরঞ্জামাদি, বাদ্যযন্ত্র, দেব-দেবী (মূর্তি) , (খ্রিস্টানদের) ক্রুশ চিহ্ন এবং সমস্ত জাহেলী প্রথার বিনাশ সাধন ও তা ধ্বংস করতে আদেশ দিয়েছেন। (আহমদ, মেশকাত পৃঃ ৩১৮)

– হযরত আবু মালেক আশ’আরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক এমন হবে, যারা মদকে ভিন্ন নাম দিয়ে পান করবে। তাদের মাথার কাছে সবসময় খেলার সরঞ্জামাদি এবং গায়িকার দল শোভা পাবে। আল্লাহ পাক তাদেরকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদেরকে পরিণত করবেন ঘৃণিত বানর ও শুকরে। (ইবনে মাজাহ পৃঃ ২৯০)

– হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, গান-বাজনা অন্তরে ওইরকম কপটতা উৎপন্ন করে, যেমন পানি শস্যাদি উৎপন্ন করে। (বায়হাকী ১০ঃ২২৩, মেশকাত পৃঃ৪১১)

– রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, শেষ জামানায় এ উম্মতের কিছু লোকের অাকৃতি বানর ও শুকরে বিকৃত হবে৷ সাহাবারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কি এ কথার সাক্ষ্য দিবে না যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল! হুজুর (সা.) বললেন হ্যাঁ। এমনকি তারা রোজাও রাখবে, হজ্জ করবে এবং নামাজও পড়বে। কেউ জিজ্ঞাসা করল, তাহলে তাদের অবস্থা এমন হবে কেন? উত্তরে হুজুর (সা.) বললেন, তারা খেলার সরঞ্জামাদি এবং গায়িকা ব্যাপক হারে অবলম্বন করবে। – (ইহা ইবনে আবুদ্দুনিয়ার বর্ণনা। তার অপর বর্ণনায় হযরত ওলীদ কর্তৃত বর্ণিত আছে যে, তোমরা গান থেকে দূরে থাক। কেননা গান বাজনা লজ্জা-শরম হ্রাস করে দেয় এবং শাহওয়াত তথা যৌন লিপ্সা বাড়িয়ে দেয়। (ফতুয়ায়ে লাখনবী)

– হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা গায়িকাদের ক্রয়-বিক্রয় করো না। তাদেরকে উহার শিক্ষাও দিওনা। তাদের ব্যবসায়ে কোন লাভ নেই, তাদের (ক্রয়-বিক্রয়কৃত লভ্যাংশ) মূল্য ও হারাম। আর এ ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে এ আয়াত – وَمَنْ يَّشْتَرِیْ لَهْوَ الْحَدِثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ ـ
অর্থাৎ মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা অবান্তর কথামালা (নভেল, উপন্যাস ইত্যাদি কল্পকাহিনী) ক্রয় করে। যাতে সে কোন জ্ঞান ছাড়াই মানুষদেরকে আল্লাহর রাস্তা তথা হেদায়েত থেকে গোমরাহ ও ভ্রষ্ট করতে পারে। (তিরমিযী ২ঃ১৫৪)

(ওহ হ্যাঁ বটতলার উপন্যাস থেকেও অশ্লীলতা এবং হারাম ভালবাসা ছাড়া আর কিছু শিখা যায় না। তাই এসবের ধারে কাছেও না যাওয়া উত্তম। বই পড়ার নেশা হলে ইসলামিক উপন্যাস পড়তে পারেন।)

– হযরত নাফে’ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি এক রাস্তায় ইবনে ওমরের সাথে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনা মাত্রই কর্ণকুহরে অঙ্গুলি প্রবিষ্ট করালেন এবং রাস্তার অপর পাশে সরে গেলেন। খানিক পর কিছুদূর গিয়ে আমাকে বললেন, হে নাফে’! তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছ? আমি বললাম না। অতঃপর তিনি কান থেকে অাঙ্গুল সরিয়ে বললেনঃ আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে ছিলাম। তিনি এক বাঁশির আওয়াজ শুনে ঐরূপই করেছিলেন যেরূপ আমি করেছি। নাফে’ বলেনঃ এ সময় আমি ছোট ছিলাম। (আহমদ, আবূ দাউদ ২ঃ৩১৮, মেশকাত পৃঃ ৪১১)

ফায়দাঃ ফতুয়ায়ে কাজীখানে আছে যে, বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শ্রবণ হারাম এবং বড় গুনাহ। কেননা হাদীসে আছে- اِسْتِمَاعُ الْمَلَاهِیَ مَعْصِيَةٌ وَالْخُلُوْسُ عَاَيْهَا فِسْقٌ وَالتَّلَذُّذُبِهَا مِنَ الْفْرِـ
অর্থাৎ গান বাজনো এবং শুনা গুনাহ, সেখানে বসা ফিসক ও অন্যায়, আর তা থেকে স্বাদ (পুলক) অনুভব ও মজা নেয়া কুফরী।

হঠাৎ গানের আওয়াজ কানে এলে তাতে গুনাহ নেই। অবশ্য খুব চেষ্টা করতে হবে যাতে কানে গানের আওয়াজ না ঢুকতে পারে। অন্তত এটুকু প্রত্যেকের উপর জরুরি যে সে উহা শোনার ইচ্ছে করবে না এবং রাখবেও না।

এই হাদিস গুলো দ্বারা বুঝা যায় যে গান-বাজনা কত নিকৃষ্ট। এসব দ্বারাই কঠিন আজাব আসে। অথচ ভাই বোনরা এসব গান দেখে আবার টিকটক ভিডিও করে, নিজেকে যত নগ্ন ভাবে প্রকাশ করা যায় করে, আবার অভিনেত্রীদের আইডল হিসেবে গ্রহণ করে। এরা কি আদৌ আইডল হওয়ার যোগ্য?

অনেককে দেখা যায় এমন পোস্ট করতে যে, Music is my life, Music is better than people, I love music so much than people, Music is my therapy, Music is my soul, Music is my life, the lyrics are my story, Music remove sadness etc, etc.

“গান না থাকলে কিভাবে বেঁচে থাকতাম ?” (আল্লাহুম্মাগ ফিরলী) এমন আরো বহু পোস্ট দেয়। তাদের যদি এসবের থেকে নিষেধ করা হয় এবং বলা কিভাবে যায় না এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা কে ভয় করে এসব ছেড়ে দিন । তো তারা দোষ খুঁজতে উঠে পড়ে লেগে যায়। কিছু না পেলে শেষমেশ বলে যে ফেইসবুক কেন ইউজ করেন? ফেইসবুকে কি করেন? যান গিয়ে নামাজ পড়েন, আপনাদের মাইন্ড এতো নেগেটিভ কেন? সবসময় সবকিছুতে ইসলাম টেনে আনেন কেন?

আপনাদের জন্য কি মানুষ একটু ইচ্ছে মতো চলতে পারবেনা? আরো বলে আমার জীবন আমার ইচ্ছে আমি কি করবো না করবো, আমার বাপের খাই আমার যা ইচ্ছে করবো। আপনি নিজের বাপের খেয়ে অন্যের পিছনে লেগে আছেন কেন? এটা হাদীসের গ্রুপ না যে এখানে হাদীসের আলোচনা করবো। নিজের চর্কায় তেল দেন। আইসছে হুজুর, পীর, যত্তসব। এতো ভালো হইলে ফেইসবুকে কি করেন? আরো কত বাজে গালি দেয় তা প্রকাশ করা যাবেনা।

অথচ তাদের না জোর করা হয়, না তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলা হয়। শুধুমাত্র উত্তমরূপে এসব হারামের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয় অথবা ছেড়ে দেয়ার জন্য উপদেশ দেয়া হয়। দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই, যে আল্লাহকে মান্য করবে এবং সৎকাজ করবে তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান, আর যে অমান্য করবে এবং পাপকাজ করবে তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

– হ্যাঁ আমিও জানি ফেইসবুক ইউজ করা ঠিক নাহ, এখানে ভালোর থেকে খারাপ কাজ বেশি হয়। ব্যক্তির উপর নির্ভর করবে সে এটাকে ভালো কাজে লাগাবে নাকি খারাপ কাজে লাগাবে। তবে আমি এখানে কোন খারাপ কাজ করছিনা, হারাম কিছু করছিনা, নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন করছিনা, এমন কোন পোস্ট এবং শেয়ার করছিনা যাতে ইসলামের ক্ষতি হবে, কোন গাইরে মাহরাম এর সাথে বেহুদা আলাপে মত্ত হচ্ছিনা, কোন গাইরে মাহরাম ফ্রেন্ডলিস্টে রাখছিওনা, যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। এখান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখি যা দ্বারা জীবন পরিবর্তন করা যায়। হ্যাঁ তবুও আমার কাছে ফেইসবুক খুব ভালো মনে হয় না। কারণ এখানে অধিকাংশ সময় বেহুদা নষ্ট হয়।

তারপর শাস্তি? এতো সহজ?
দুই মিনিট সময় চাচ্ছি আপনার কাছে।রান্নাঘরে গিয়ে চুলাটা জ্বালিয়ে নিজের হাতটা একবার আগুনের উপর থেকে ঘুরিয়ে আসুন তো।বাকি লেখা এরপর পড়তে পারবেন..
কেমন লেগেছে বোন?

যদি না গিয়ে থাকেন তো আগে কখনো আগুনের স্পর্শ লাগার অভিজ্ঞতা থাকলে এবার আপনাকে আরেকটা অনুরোধ করতে চাই।আশা করি এটা রাখবেন।

চোখটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ ঐ সময়ের অনুভূতিটা আনার চেষ্টা করুন তো।
এবার ভাবুন এর চেয়ে ৭০ গুণ বেশি তীব্রতার আগুনে জ্বলতে হবে!
আপনার অভিজ্ঞতার চেয়ে অনেক ভয়ংকর সে আগুন!

কল্পনা করুন! আপনার সুন্দর চেহারা পুড়ে আগুনের মতো হয়ে যাবে। আপনার সারা শরীর থেকে পুঁজ বের হবে। আর আপনার নিজের এবং অন্যান্যদের শরীর থেকে বের হওয়া এই পুঁজ আর ঘামই হবে আপনার খাবার!

ছিঃ! কি খারাপটাই লাগছে ভাবতে, তাই না?
এবার আসুন আমরা লেখার শুরুতে ফিরে যাই।আপনি এবার বলুন, কেন নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন করছেন, কেন আপনি মুভি দেখছেন, কেন গান শুনছেন, কেন নামাজ পড়ছেন না, কেন হারাম সম্পর্কে লিপ্ত আছেন? কেন? এসবে কি ফায়দা?

আপনি কি এতই সাহসী হয়ে উঠেছেন যে এই আগুনের পরোয়া করছেন না?

আপনি কি নিশ্চিত আল্লাহ্ আজ্জাওয়াজাল আপনার সৃষ্টিকর্তা,তিনি কখনো মিথ্যা বলেন না, তাহলে সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করার পরও, বারবার ভয় দেখানোর পরও কেন আপনি সতর্ক হচ্ছেন না? কেন তওবা করছেন না?কেন আপনার রবের পথে ফিরে আসছেন না?

আর গালিগুলো গায়েই নিই না, আসলে যার তহবিলে যা আছে সে তো অন্যকে তাই দান করবে।

আমরা যেহেতু মুসলমান তো সবকিছুতেই ইসলামকে টানবোই, যা করা হয় তা ইসলাম সমর্থন করে কিনা তা অবশ্যই দেখবো। যা সমর্থন করে না তা সাথে সাথে পরিহার করতে হবে এবং সাথে অন্যকে পরিহার করার আদেশ দিব।

উপদেশ গ্রহণ না করা এবং পাপ যেনেও তার উপর অটল থেকে অন্যকে অনধিকার চর্চাকারী বলা অহংকারের নামান্তর। অহংকার থেকে আত্মা রক্ষার জন্য সবসময় আল্লাহর বড়ত্ব ও তার সৃষ্টিজগত নিয়ে ভাবা যেতে পারে। ভাবা যেতে পারে নিজের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়েও। আমার সৃষ্টি-উপাদান আর কী? মাটি! পরিণতি আর কী? বিনাশ! তাই তো রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,

“অভিশাপ মানুষের প্রতি! কীসে তাকে অস্বীকার করালো আল্লাহ তাকে কী থেকে সৃষ্টি করেছেন! সে জানেন, এক বিন্দু শুক্র হতে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার দেহের সবকিছুর পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অতঃপর সহজ করে দিয়েছেন তার চলার পথ। অতঃপর তাকে অচিরেই মৃত্যু দান করবেন এবং সমাহিত করবেন।” (সূরা আবাসা, ১৭-২১)

এই আয়াত দেখলেই খুউব ভয় হয়।
রাসূল সাঃ থেকে বর্ণিত,মহান আল্লাহ তা’আলার ইরশাদ করেছেন, “অহংকার আমার চাদর, বড়ত্ব আমার পরিধেয়, সুতরাং যে এ দুটি নিয়ে আমার সাথে বিবাদ করবে, তাকে ধ্বংস করে দেব-পরোয়া করবোনা। “

তাহলে অহংকার করে নিজের জন্য ধ্বংস ডেকে আনা না? আল্লাহর ধ্বংস, অভিশাপ থেকে কেউ কি আছে যে আপনাকে, আমাকে বাঁচাতে পারবে?

আমাদের জীবন তো ক্ষণস্থায়ী এক মূহুর্তের ও ভরসা নেই। সকাল হলে সন্ধ্যার আশা করা যায় না আবার সন্ধ্যা হলে সকালের আশা করা যায় না। আমাদের অহংকার করার কি কিছু আছে?
তবুও মানুষকে যখন সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা হয়, তখন কিভাবে বলে যে আমার জীবন আমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে চলবো। আমার বাবার খাচ্ছি, আমার যা ইচ্ছে তাই করবো। নিজের আমল নিজে করুন, আমার পাপের হিসাব আমি দিব, আমার শাস্তি আমি ভোগ করবো আপনাদের কি?
আসলেই কী আমাদের জীবন আমাদের ইচ্ছে? নাকি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার দেয়া জীবন এবং তার ইচ্ছে? আর আল্লাহ তা’আলা যদি রিজিক না দেয় তো কোন বাবা আছে যে খাওয়াবে? কোন বাবা আছে যে তার সন্তানের প্রয়োজন পূরণ করবে?

ইসলামে কি নিজের ইচ্ছে মতো চলা যায়? নাকি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ইচ্ছায় চলবে? আল্লাহর দেয়া সবকিছুই গ্রহণ করে, তার অবাধ্যতা করে আবার কিসের ভিত্তিতে আমরা বলি যে আমার পার্সোনাল মেটার? হ্যাঁ নিজের ইচ্ছে মতোও চলা যায় তবে তা যেন শরিয়ত সম্মত হয়। শরিয়ত বিরোধী কাজ কিভাবে নিজের ইচ্ছে হয়? ইসলাম শুধু কয়েকটি ইবাদতের নাম নয়, পূর্ণ একটি জীবনব্যবস্থা। ইচ্ছে হলে একটা মানলাম অন্য একটা মানলাম না এমন তো হবেনা । হ্যাঁ সব মানতে পারিনা আমরা, আমাদের ভুল হয়েই যায়, এজন্য কি ভুলের মধ্যেই থাকবো? তাওবা করবো না? চেষ্টা করবো না সব মানার?

.যে ব্যক্তি সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে, তাকে যদি কেউ অনধিকার চর্চাকারী বলে তবে সে দ্বীনত্যাগকারী এবং মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহুমাগ ফিরলি!
মানুষের অজ্ঞতার পরিণাম কি ভয়াবহ!

অজান্তেই কত মানুষ আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করে ধর্ম ত্যাগের পথে ধাবিত হয়।
আর গান ছবি দ্বারা অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে যায়। কখনো দুঃখ দূর হয় না বরং আরো বৃদ্ধি পায়। অন্তর কালো হয়ে যায়। তখন ভালো কিছু ও ভালো লাগেনা এবং খারাপ কিছুও খারাপ মনে হয় না। আমাদের ভিতরগত যে ব্যাধি আছে আল্লাহর ওয়াস্তে এগুলো দূর করতে হবে। আমাদের এ কথা গুলো চিন্তা করা উচিৎ। দেখুন! যতক্ষণ বাদ্যযন্ত্রের প্রতি ভালবাসা থাকবে ততক্ষণ ইবাদতে স্বাধ পাবেননা। নামাজে খুশুখুজু আসবে না, কুরআন তিলাওয়াত ভালো লাগবেনা। উপদেশ ভালো লাগবেনা। অথচ আমাদের জীবনে উপদেশ খুউউবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যা সবার ই দরকার হয়।

ওয়াল্লাহি! যখন হারাম ছেড়ে দিবেন তখন আমলে আলাদা একটা প্রশান্তি অনুভব করবেন। কুরআন তিলাওয়াত ভীষণ ভালো লাগবে। হারাম হালাল কখনো এক হয়না, একটাকে ভালো লাগলে অন্যটাকে লাগে না, তাই যথাসম্ভব সমস্ত হারাম কাজ পরিহার করতে হবে এবং করার চেষ্টা করতে হবে।

আমরা এ সিদ্ধান্ত নেই যে, আমরা বর্তমান বিষাক্ত পরিবেশ পরিবর্তন করবো। আর যখন পরিবেশ বদলে যাবে তখন দ্বীনের উপর চলা সহজ হয়ে যাবে। এজন্য দ্বীনকে দিলের ভিতরে বসানো প্রয়োজন। কিভাবে বসাবেন? মহান রাব্বুল আলামীনের মুহাব্বতের দ্বারা। দিলে মধ্যে যদি তার মুহাব্বত পূর্ণ মাত্রায় হয় তবে তার আনুগত্যও পূর্ণ মাত্রায় হবে। ইন শা আল্লাহ।

লেখাঃ সুমাইয়া সুলতানা (মীম)


?Donate for camera project ?http://tiny.cc/donate-for-camera

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *