খলিফা হিশাম ইবনু আব্দুল মালিক একদিন দামেস্কে জুমু’আর নামাজ আদায়ের সময় তাঁর এক পুত্রকে অনুপস্থিত দেখলেন। সঙ্গে সঙ্গে পুত্রকে নিজ দরবারে ডেকে কৈফিয়ত তলব করলেন।
শাহযাদা জানালেন, ‘আমার মসজিদ অবধি যাবার মত কোন যান-বাহন ছিল না। আর মসজিদ তো অনেক দূর।’ আদতেও তখনকার দিনে জামে মসজিদ ছিল অনেক দূরে দূরে।
খলিফা বললেন, ‘তাহলে কেন সকালেই পায়ে হেঁটে রওয়ানা করো নি?’ এবারও শাহযাদা জবাব দিতে চাইলে, তিনি থামিয়ে দিলেন।
শাহযাদার জন্য আগামী এক বছর সকল যানবাহন নিষিদ্ধ করে ফরমান জারি করলেন। ফরমানে এও বলা হলো যেন অন্য কেউই তাঁকে নিজের ব্যক্তিগত বাহনেও আগামী এক বছর যেন তাকে কখনও বসতে না দেয়।
খলিফা হিশাম ছিলেন সেই শাসক যাঁর শাসনের অধীন ছিল তদানীং সিন্ধ আর চীন সীমান্ত থেকে শুরু করে পুরো ইরবিয়ান পেনিনসুলা অর্থাৎ একেবারে আধুনিক ফ্রান্সের সীমানা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এক অঞ্চল।
তামাম আরব উপদ্বীপ থেকে সমরকন্দ পর্যন্ত বিস্তৃত্ব তাঁর শাসনভূমি। তাঁর সেনাবাহিনী পৌঁছে গিয়েছিল ককেশীয় অঞ্চলেও। ১০৫ থেকে ১২৫ হিজরি পর্যন্ত সুদীর্ঘ বিশটি বছর প্রবল পরাক্রমে এই সুবিশাল অঞ্চল তিনি শাসন করেছেন।
মাত্র ৫২ বছর বয়সে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। তদানীং দুনিয়ার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রটির এই প্রধান ক্ষমতায় থাকাকালীনও নিজের জন্য নিজে রুটি বানাতেন, পান করার জন্য ছাগলের দুধ দোহাতেন।
আমাদের অনেক সাহেবযাদারূপী নব্য ‘শাহযাদাদের’ জন্য তিনি হতে পারতেন নসিহাতের ভিত্তি এবং অভিভাবকদের জন্যও হতে পারতেন অনুকরণীয়।
কিন্তু আফসোস, আমাদের নিজেদের যে সোনালী অতীত আমরা তার কিছুকেই ধারণ করতে পারি নি। যখনই সে পথ থেকে সরেছি। অকল্যাণ আমাদের স্পর্শ করেছে।
পরিবারের প্রতি আমাদের যত্নশীল হওয়া উচিত। এমনকি শেষ সময়টা অবধি নিজের চেষ্টা করা উচিত।
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে একটা হাদীস বর্ণিত আছে বুখারী, মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদসহ আরও বহু কিতাবে। যেখানে আল্লাহ্ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম মানুষের দায়িত্বভারকে ‘রাখালের’ উপমা ব্যবহার করে বুঝিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল। পরিবার প্রধান তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।’ (আরজু আহমেদ)
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লামা শফী সাহেব পদত্যাগ করেছেন। তার ছেলে আনাস মাদানীকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। একজন নেককার সন্তান যেমন জান্নাতে নিতে পারে তেমনি একজন বদকার সন্তান দুনিয়াতেই জাহান্নামের ঝলক দেখিয়ে দিতে পারে। আল্লাহ্ আমাদের এই ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমি কওমীদের কেউ না তাই গত কিছুদিনে চলা আন্দোলন এবং পূর্বের ব্যাপারগুলো নিয়ে বলার যোগ্য মনে করিনি নিজেকে। যাই হোক, আমরা ফিতনার অবশান চাই। শহিদের রক্ত যাদের হাতে লেগে আছে তাদের জন্যে এটি একটি উত্তম সতর্কবার্তা।