ভারতীয় উপমহাদেশে (ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে যাওয়া) মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এক ঝলক !

ভারতীয় উপমহাদেশে (ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে যাওয়া) মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এক ঝলক !
ইদানিংকালে বেশ কিছু সিনেমা তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে মুসলমানদেরকে দেখানো হচ্ছে রক্তপিপাসু দানব হিসেবে। বিশেষ করে আলাউদ্দিন খিলজিকে দেখানো হয়েছে রক্তপিপাসু অর্ধোন্মাদ সম্রাট হিসেবে। মুসলিম মাত্রই হানাদার, অত্যাচারী, নৃশংস ও ধর্ষক এটাই বর্তমান মুসলিম বিদ্বেষী ভারতীয় মিডিয়ার মূল উপজীব্য।
এমনকি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করার মোজেজা দেখে মুসলমান হওয়া রাজা চেরুমল পেরুমলের নাম ভিলেন হিসেবে রাখা হয় বিভিন্ন সাউথ মুভি গুলিতে।
অথচ ইতিহাস কি বলে,যদি মুসলিমরা বুকের রক্ত ঢেলে না দিতেন তাহলে কি ভারতবর্ষ আদৌ ব্রিটিশদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে পারত? কখনোই না। ইতিহাসের শিক্ষা এটাই যে প্রকৃত ভিলেনদের কে হিরো সাজানো হয়। এবং মিডিয়া তাদের মন মন্দিরে তাদের পুজোর স্তাবকে পরিণত হয়।
ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুসলিমদের অবদানঃ
প্রায়ই একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার করতে দেখা যায় যে, ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে নাকি মুসলিমদের কোন অবদান নেই। এই ধরনের মিথ্যাচারগুলি করতে এমনকি নাস্তিক সম্প্রদায়ও পিছপা হয় না।
অপরদিকে সত্য ঘটনা সম্পুর্ন বিপরীত। সত্য ইতিহাস বলছে মুসলিমদের তাজা রক্তে এই ভারত মুক্তি পেয়েছে । জেল খাটা ১ কোটি মুসলমানের আত্ম বলি দান ও ফাঁসি হওয়া ৫ লক্ষ মুসলমানের প্রানের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন । সেই চেপে যাওয়া ইতিহাসের মুছে যাওয়া কিছু নাম আমি শেয়ার করলাম ।
বখত খান, যখন মিরাটে ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তখন তিনি রোহিল্লা সেনাবাহিনী গঠন করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দিল্লির জন্য যুদ্ধ করেন।
বেগম হযরত মহল, ১৮৫৭ সালে তার অনুসারীদের নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন, তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে লক্ষ্ণৌ দখল করতে সমর্থ হন।
খান বাহাদুর খান, যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নিজ সরকার গঠন করে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। ১৮৬০ সালে তাকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়।
লিয়াকত আলী, একজন মৌলভি এবং যিনি নিজ অনুসারীদের নিয়ে এলাহাবাদে ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন শুরু করেন।
খান আব্দুল গাফফার, যিনি একজন আফগানী পলিটিকাল ও আধ্যাত্নিক মুসলিম নেতা, যিনি ব্রিটিশদের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের জন্য বিখ্যাত, যিনি ছিলেন গান্ধীজীর একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু।
স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, যিনি একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক এবং ইসলামিক ব্যাক্তিত্ত, তার ঐকান্তিক চেষ্টায় আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয় যা ছিল ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের অন্যতম দিক উন্মোচনকারী।
আবুল কালাম আজাদ, মুসলিম পন্ডিত এবং ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের সিনিয়র পলিটিকাল লিডার।
আশফাকুল্লাহ খান একজন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম যোদ্ধা, যিনি দেশের জন্য নিজের জীবন দান করেন রাম প্রসাদ বিসমিল এর সাথে। তিনি এবং রাম প্রসাদ উভয়ই ছিল ভাল বন্ধু এবং উর্দু ভাষার কবি।
মৌলভী আহমানুল্লাহ খান, প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন আওয়াদে ১৮৭৫ সালের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের। তিনি স্যার কলিন ক্যাম্পবেলকে দুইবার ময়দানে পরাজিত করেন।
মাওলানা কাসেম সাহেব, উত্তর প্রদেশর দেওরবন্ধ মাদ্রাসাকে ব্রিটিশ বিরোধী এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন । তিনি ফতোয়া জারি করেন মুসলিমদের আই এনসিতে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন ত্বরান্নিত করেন।
হোসেন আহমেদ মাদানি, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেন এবং ব্রিটিশ কর্তৃক ৩ বছরের কারাদন্ড ভোগ করেন, ছাড়া পেয়ে পুনরায় আন্দোলনে যোগ দেন।
মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি, যিনি একজন আই এন সি এর একজন উল্লেখযোগ্য নেতা, যিনি শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ইসলাম কবুল করেন, এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
মাওলানা মুহাম্মদ আলি জওহর, ভারতীয় মুসলিম নেতা, পন্ডিত, সাংবাদিক, কবি এবং খিলাফত আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা।
সৈয়দ মীর নিসার আলী, যিনি তিতুমীর নামে খ্যাত। যিনি উনিশ শতকে জমিনদার ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেন বাংলায়। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন করেন, ব্রিটিশরা তাঁর বাঁশের কেল্লা গুড়িয়ে দেয়, তার সেনাপতি গোলাম মাসুমকে কেল্লার সামনে ফাঁসি দেয়, ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন।
প্রফেসর মাওলানা বরকতুল্লাহ, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকারী, Ghadar party এর প্রতিষ্টাতা, যা আমেরিকা ও কানাডাতে প্রতিষ্টিত হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্ত করা।
মাওলানা হযরত মোহানী, যিনি উর্দু কবি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, এবং সাহসী ব্রিটিশবিরোধী মুক্তিযোদ্ধা, আন্দোলনের কারনে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক যাঁকে বহুবছর জেলে আটকে রাখা হয়েছিল।
ভারতের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যাদের নাম অবশ্যই পাওয়া যায় তারা হল – গান্ধীজি, নেতাজী সুভায, অরবিন্দ, জোহরলাল, মোতিলাল..।
এদের সমতুল্য নেতা আতাউল্লা বুখারী, মাওলানা হুসেন আহমাদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা গোলাম হোসেন প্রমুখ..( এনারা বহু বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন) ইংরেজ বিরোধী কর্যকলাপের জন্য যার নামে সর্বদা ওয়ারেন্ট থাকতো। সেই তাবারক হোসেনের নামও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না ।
হাকিম আজমল খাঁ যিনি তৎকালিন সময়ে সারা হিন্দুস্থানের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন । যার সংস্পর্শে আসলে হিন্দু মুসলিম নবপ্রাণ পেতেন, সেই মানুষকে ঐতিহাসিকরা বোধ হয় ইচ্ছা করেই ভুল গিয়েছেন ।
মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল যার সাহায্য ছাড়া চলতো না, যিনি না থাকলে গান্ধী উপাধি টুকু পেতো না; সেই মাওলানা আজাদকে ইতিহাসের পাতা থেকে প্রায় বাদ দেওয়া হল ।
মাওলানা মহম্মদ আলি ও শওকত আলি – ৫ বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন । ‘ কম রেড ‘ ও ‘ হামদর্দ ‘ নামক দুটি ইংরেজ বিরোধী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন । তাদের নাম ভারতের ইতিহাসের ছেড়া পাতায় জায়গা পায় না ।
খাজা আব্দুল মজীদ ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টার হন ।
জওহরলালের সমসাময়িক কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন । প্রচন্ড সংগ্রাম করে তার এবং তার স্ত্রী উভয়ের জেল হয় । ১৯৬২ সালে তার মৃত্যু হয় ।
ডবল A.M এবং P.H.D ডিগ্রিধারী প্রভাবশালী জেল খাটা সংগ্রামী সাইফুদ্দিন কিচলু । বিপ্লবী মীর কাশেম, টিপু সুলতান , মজনু শা , ইউসুফ… এরা ব্রিটিশদের বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হলো কিভাবে..?
সর্ব ভারতীয় নেতা আহমাদুল্লাহ । তৎকালীন সময়ে ৫০ হাজার রুপি যার মাথার ধার্য করেছিল ব্রিটিশ রা । জমিদার জগন্নাথ বাবু প্রতারনা করে, বিষ মাখানো পান খাওয়ালো নিজের ঘরে বসিয়ে । আর পূর্ব ঘোষিত ৫০ হাজার রুপি পুরষ্কার জিতে নিলো।
মাওলানা রশিদ আহমদ । যাকে নির্মম ভাবে ফাঁসি দিয়ে পৃথিবী থেকে মুছে দিলো ইংরেজরা । ইতিহাস লেখক কেন তার নাম মুছে দিলো ইতিহাস থেকে ।
জেল খাটা নেতা ইউসুফ, নাসিম খাঁন, গাজি বাবা ইয়াসিন ওমর খান তাদের নাম আজ ইতিহাসে নেই কেনো…
ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরে, কুদরাতুল্লা খানে মৃত্যু হল কারাগারে । ইতিহাসের পাতায় তার মৃত্যু ঘটলো কিভাবে…?
নেতাজী সুভাষ বসুর ডান হাত আর বাম হাত যারা ছিলেন..।ইতিহাসে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না । তারা হলেন আবিদ হাসান শাহনাওয়াজ খান , আজিজ আহমাদ, ডি এম খান , আব্দুল করিম গনি , লেফট্যানেন্ট কর্নেল , জেট কিলানি , কর্নেল জ্বিলানী প্রমুখ ..। এদের অবদান লেখক কি করে ভুলে গেলেন…?
বিদ্রোহী গোলাম রব্বানী, সর্দ্দার ও হয়দার, মাওলানা আক্রম খাঁ , সৈয়দ গিয়াসুদ্দিন আনসার । এদের রক্ত আার নির্মম মৃত্যু কি ভারতের স্বাধীনতায় কাজে লাগেনি …?
বিখ্যাত নেতা জহুরুল হাসানকে হত্যা করলে মোটা অঙ্কের পুরষ্কার ঘোষনা করে ইংরেজ সরকার ।
মাওলানা হসরত মুহানী এমন এক নেতা, তিনি তোলেন সর্ব প্রথম ব্রিটিশ বিহীন চাই স্বাধীনতা ।
জেলে মরে পচে গেলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, তার নাম কি ইতিহাসে ওঠার মতো নয়…!?
কিংসফোর্ড কে হত্যা করতে ব্যার্থ ক্ষুদিরামের নাম আমরা সবাই জানি, কিন্তু ভারতের বড়লাটকে হত্যাকারী শের আলী খান বিপ্লবীকে আমরা কেউ জানিনা ।
কলকাতার হিংস্র বিচার পতি জর্জ নরম্যান হত্যাকরী আব্দুল্লার নামও শের আলীর মতো বিলীন হয়ে আছে..।
টিপু সুলতানকে বলা হয় মহীশূরের বাঘ, যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং তাদের হাতে শহীদ হন।
এছাড়াও ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু মুসলিম আলেমদের নাম পাওয়া যায়, যা লিখতে গেলে শেষ হবে না, যেমন,
মাওলানা মাহমুদুল হাসান,
মাওলানা রাশেদ আহমেদ গাংগোহী,
মুফতি কিফায়তুল্লাহ,
মাওলানা লুফতুল্লাহ,
মৌলভী ওয়াহেদ আহমেদ,
মাওলানা ওয়াজির গুল,
মাওলানা হোসেন আহমেদ মাদানী,
মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি,
মাওলানা সাজ্জাদ বিহারী,
মাওলানা আব্দুল বারী,
মাওলানা জাফর আলি খান,
মাওলানা হিফাযুর রহমান,
প্রমুখ।
এরপরও যদি একটি বিশেষ গোষ্ঠী দাবি করে স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের কোন অবদান নাই, তবে আর কি বলার আছে ?
মূলত হিন্দুরা ব্রিটিশদের বিরোধিতা করেছে শুধুমাত্র মুসলমানদের কে কোন সুবিধা পেতে দেখলে। বাকি সময়টুকু হিন্দুদের কাজ ছিল ব্রিটিশ শাসকদের ঘরে নিজের মা বোনদের কে পাঠিয়ে ঐতিহ্যবাহী শৌর্যবীর্য প্রদর্শন করা।প্রকৃতপক্ষে সত্যিকার অর্থে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য উত্তোলন করেছিলেন মুসলিম সিংহ শার্দূলেরা।
অতএব এই হীনমন্যতায় ভোগা ইতিহাস বিস্মৃত জাতি, ভালো করে ঘুমান। আর পশ্চাদ্দেশে সরিষার তেল মাখিয়ে রাখুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *