▌মেয়েদের এত বেশি জ্বীনে ধরে কেন! জাদু ও জ্বীনের আক্রমন থেকে বাঁচার ১৭টি উপায় ও আমল
.
❏ মেয়েদের বেশি জ্বীনে ধরার কারন:
আমাদের সমাজে যাদের জ্বীনে ধরে, খেয়াল করলে দেখা যাবে তাদের অধিকাংশই মহিলা। কিন্তু কেন! মহিলাদের এত বেশি জ্বীনে ধরে কেন! এর কারন হচ্ছে ; অধিকাংশ মহিলারাই বেশিরভাগ সময় অপবিএ থাকে( শুধু পিড়িয়ডের অপবিএ নয়) এবং ইসলামিক অনুশাসন, ইসলামিক বিধি-বিধান মেনে জীবনযাপন করে না বা অবহেলা করে চলে যার কারনে তারা বেশি জ্বীনের আক্রমনের শিকার হয়। একটা ছেলে একটা মেয়ের প্রতি যেমন জৈবিক চাহিদার আকর্ষন রয়েছে। এরকম দুষ্ট জ্বীনেরাও মানুষের (মেয়েদের) প্রতি সেই আকর্ষন রাখে। যার কারনে সুযোগ পেলেই জ্বীনেরা (ছেলেদের চেয়ে তুলনামূলক) মেয়েদেরকে বেশি আক্রমন করে থাকে তাদের খারাপ ইচ্ছা পূরনের জন্য। আর দ্বীতিয়ত, ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বিভিন্ন শত্রুর দ্বারা জাদুটোনারও শিকার হয় বেশি। এইসমস্ত কারনেই মেয়েরা বেশি জ্বীনদের আক্রমনের শিকার হয়।
.
❏ জাদু ও জ্বীনের আক্রমন থেকে বাঁচার উপায়:
ইসলাম হচ্ছে সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা। যেখানে সমস্ত সমস্যারই সমাধান রয়েছে। তেমনি এই জ্বীনদের আক্রমন ও জাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ও রাসূল (ﷺ) আমাদের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন।
নিম্নে জাদু ও জ্বীনের আক্রমন থেকে বাঁচার ১৭টি উপায় ও আমল উল্লেখ করা হলো:-
১: প্রতিদিন সঠিক সময়ে পাঁচওয়াক্ত সালাত আদায় এবং ইসলামের অন্যান্য হুকুম আহকাম, আদেশ নিষেধগুলো মেনে চলা। যে ব্যক্তি তার রবের আনুগত্য করে, তার দেওয়া আদেশ নিষেধ মেনে চলে সেই ব্যক্তির হেফাজতের দায়িত্ব মহান আল্লাহ তা’আলাই নিয়ে নেন।
২: প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে(ফজর এবং মাগরিবের সালাতের পর) একবার করে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে যে ব্যক্তি একবার করে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, শয়তান থেকে সারাদিন সে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে।” [সহিহ তারগিব]
৩: প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে সূরা ইখলাস,সূরা ফ্বালাক,সূরা নাস তিনবার করে পাঠ করা। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালে এবং বিকালে এই সূরাগুলো তিনবার করে পাঠ করবে এটাই তার সবকিছুর জন্য যথেষ্ট হবে।” [তিরমিজি: ৩৫৭৫]
৪: নিম্নোক্ত দোআ’টি সকাল এবং বিকালে তিনবার করে পাঠ করা;
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ».
‘বিস্মিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইস্মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম (আরবি দেখে শিখে নিলে ভালো হয়)।’
রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এবং সন্ধ্যায় তিনবার উপরোক্ত দোআটি পাঠ করবে তাহলে কোন কিছুই তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।” [আবু দাউদ: ৫০৮৮]
৫: প্রসাব-পায়খানা করার জন্য বাথরুম বা টয়লেটে প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই প্রথমে বাম পা দিয়ে তারপর দোআ পড়ে প্রবেশ করা। কেননা প্রসাব-পায়খানা করার স্থানে দুষ্ট জ্বীনেরা বসবাস করে। দোআ না পড়ে টয়লেটের ভেতর প্রবেশ করলে ওইসমস্ত খবিস জ্বীনেরা লজ্জাস্থান দেখতে পায় এবং তা দেখে তারা মজা নেয়(নাউজুবিল্লাহ)। আর দোআ পড়ে প্রবেশ করলে ওইসমস্ত জ্বীনদের চোঁখে পর্দা পরে যায় যার বলে তারা লজ্জাস্থান দেখতে পারে না এবং তারা কোন ক্ষতিও করতে পারে না।
টয়লেটে প্রবেশের দোআ–
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ.
“(বিসমিল্লাহি) আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস।” [সহিহ বুখারী: ১৪২]
৬: স্বামীস্ত্রী সহবাস করার পূর্বে অবশ্যই দোআ পড়ে তারপর সহবাস করা। দোআ পড়ে সহবাস করলে সহবাসের সময় শয়তান তাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না এবং অনাগত সন্তানকেও শয়তান কোন ক্ষতি করতে পারে না।
সহবাসের দোআ—
بِسْمِ اللّٰهِ، اللّٰهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
“বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা রযাকতানা।”
[ সহিহ মুসলিম:১০২৮]
৭: বাড়ি থেকে কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলে দোআ পড়ে বের হওয়া। নিম্নোক্ত দোআ পড়ে বাড়ি থেকে বের হলে বাড়ির বাহিরে ওত পেতে থাকা জ্বীন শয়তানগুলো কোন ক্ষতি করতে পারে না।
দোআ’টি হলো—
بِسْمِ اللّٰهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّٰهِ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللّٰهِ
“বিসমিল্লাহি, তাওয়াককালতু ‘আলাল্লা-হি, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্।”
[তিরমিজি: ৩৪২৬]
৮: বাড়ির ভেতর প্রবেশ করার সময় এবং খাবার গ্রহনের সময় আল্লাহকে স্মরণ করা (মানে বিসমিল্লাহ বলা)। [আবু দাউদ: ৫০৯৬]
৯: রাতে “বিসমিল্লাহ” বলে ঘরের দড়জা, জানালা বন্ধ করা। বিসমিল্লাহ বলে ঘরের আসবাবপএ ঢ়েকে রাখা। [সহিহ বুখারী:২০১২]
১০: ঘুমানোর পূর্বে অযু করে অবশ্যই আয়াতুল কুরসি পাঠ করে তারপর ঘুমোতে যাওয়া। এতে করে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী থাকবে যার ফলে শয়তান সারারাত উক্ত ব্যক্তির কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [সহিহ বুখারী: ২৩১]। আয়াতুল কুরসির সাথে সূরা ইখলাস, ফ্বালাক, নাস প্রত্যেকটা সূরা তিনবার করে পড়া এবং ঘুমানোর দোআ পড়ে ঘুমানো উচিত।
১১: বাড়িতে কুকুর অথবা অন্য কোন প্রানীর ছবি না রাখা। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ঘরে কুকুর অথবা অন্য কোন প্রানীর ছবি থাকে সেই ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” [সহিহ বুখারী: ২১০৫]
১২: জ্বীনের আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য বা অন্য কোন কারনে তাবিজ ব্যবহার না করা। কেননা তাবিজ এসবের কোন উপকার করতে পারে না। আর রাসূল (ﷺ) তাবিজ ব্যবহার করাকে “শিরক” বলেছেন। [তিরমিজি:২০৭২]
১৩: সম্ভব হলে প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাওয়া। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি সকালবেলা সাতটি আজওয়া খেজুর খায় সেদিন তাকে বিষ ও জাদু কোন ক্ষতি করতে পারবে না” [সহিহ বুখারী: ৫৪৪৫]
১৪: প্রতিদিন সূরা বাকারা থেকে অন্তত কিছু আয়াত তিলাওয়াত করা। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয় সেই ঘরে শয়তান প্রবেশ করে না।” [সহিহ মুসলিম:৭৮০]
১৫: প্রতিদিন সকালে একশোবার নিম্নোক্ত দোআ পাঠ করা,
لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদীর।’
রাসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি উক্ত আমলটি করবে সে দশটি দাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে এবং একশত পুণ্য তার আমলনামায় লেখা হবে এবং একশত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর সেই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। আর এর থেকে অধিক পূণ্যের কাজ আর হতে পারে না; কিন্তু সেই যে এর অধিক আমল করবে।” [বুখারীঃ ৩৩৮]
১৬: ব্যবহৃত জামাকাপড় (বিশেষ করে মেয়েদের),মাথার চুল ইত্যাদি যেখানে সেখানে না ফেলা। কারন, এগুলো দিয়ে কেউ শত্রুতাবশত জাদু করতে পারে। পুরাতন বা অব্যবহারযোগ্য জামাকাপড় বাড়ির বাহিরে ফেলে না দিয়ে এগুলো গর্ত করে মাটির ভেতর পুতে রাখা অথবা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া উচিত।
১৭: কাউকে জ্বীনে ধরলে কবিরাজ বা বিভিন্ন দরবারের নিকট নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। কারন এদের দ্বারা রোগি ভালো হওয়ার চেয়ে প্রতারনারই স্বিকার হয় বেশি। অনেকসময় এরা রোগিকে আরো বেশি রোগি বানিয়ে দিয়ে তারপর রোগির কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়। সুতারং, এইসমস্ত প্রতারকদের থেকে সাবধান! আর এরা যে সমস্ত উপায়ে চিকিৎসা করে থাকে সেগুলোও শিরক,কুুফরি মিশ্রিত চিকিৎসা হয়ে থাকে।তাই তাদের চিকিৎসাও গ্রহন করা জায়েজ নয়। যারা কোরআন এবং সহিহ হাদিসভিত্তিক দোআ দ্বারা চিকিৎসা (রুকাইয়া) করে থাকে তাদের নিকট চিকিৎসা গ্রহন করা উচিত।
.
.
উপরোক্ত আমল ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চললে জ্বীন শয়তান কোন ক্ষতি করতে পারবে না ইনশা আল্লাহ। উপরোক্ত আমলগুলো কেউ না করার কারনে বা আমলগুলো করার প্রতি অবহেলা করার ফলে কাউকে যদি জ্বীনে পাকড়াও করে ফেলে তাহলে তাকে আয়াতুল কুরসি, সূরা ফ্বালাক, সূরা নাস পড়ে ঝাড়-ফুঁক করলে এবং এগুলো পড়ে পানিতে ফুঃ দিয়ে সেই পানি পান করালে আল্লাহর রহমতে রোগি সুস্থ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
.
লেখক: আব্দুর রাকিব