যখন আমাদের বোনেরা শিক্ষিত ছিলেন! মূলঃ উস্তাদ মূসা সেরেন্টোনিও

আন্দালুসের ইতিহাসে সুন্দর একটি গল্প আছে। তৎকালীন খলিফা তাঁর ছেলেকে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন না যে, ‘যে কোনো মেয়ে’ তাঁর ছেলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোক। তাঁর ইচ্ছে ছিলো, সেই সময়ের সর্বোত্তম মেয়ের সাথে তাঁর ছেলের বিয়ে হোক। তাই খলিফা কুর্তুবা শহরে ঘোষণাপত্র জারি করলেন। তিনি বললেন, “কোনো পরিবারে যদি বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে থাকে, তাহলে আজ রাতে তারা যেনো ঘরের জানালায় মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে। এবং মেয়েকে অবশ্যই কুরআনে হাফিজা হতে হবে।”
বর্ণিত আছে, সেই রাতে পুরো শহর মোমবাতির আলোয় আলোকিত ছিলো। পুরো শহর আলোকিত ছিলো মানে অসংখ্য তরুণী কুরআনে হাফিজা ছিলো। খলিফা তা দেখে ভাবলেন, “উত্তম! কিন্তু আমার ছেলে তো আর এতো মহিলাকে বিয়ে করতে পারবে না।” তাই তিনি পরবর্তী রাতে ঘোষণা করলেন, “যার বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে আছে; যে কুরআনে হাফিজা ও মালেকি মাজহাবের গুরুত্বপুর্ণ একটি কিতাব হিফজ করেছে; সে যেনো আজ রাতে ঘরের জানালায় মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে।” দেখা গেলো, প্রথম রাতের মতো না হলেও এই রাতেও পুরো শহর ছিলো আলোকিত…
.
আমি বলতে চাচ্ছি যে, আমরা যদি জিজ্ঞেস করি, আজ উম্মাহর মাঝে শুধু একজন বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে দেখান, যে পুরো কুরআনুল কারিম এবং মালেকি কিংবা অন্য যেকোনো ফিকহের গ্রন্থ হিফজ করেছে? বাস্তবতা হলো, আজ রাতে আমাদের জানালাগুলোতে একটাও মোমবাতি খুঁজে পাওয়া যাবে না! আর এটাই উম্মাহর বেহাল দশা কথা বর্ণনা করে।
আন্দালুসের ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই যে, “আমাদের মহিলারা যদি শিক্ষিত হন, তাহলে আমাদের উম্মাহ শক্তিশালী থাকে।”
পুরুষদের কে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হয়। সবসময়ই তাদের এটা প্রয়োজন। কিন্তু উম্মাহর জন্য পরীক্ষা হলো, উম্মাহর মহিলারা শিক্ষিত হবার বেলায়। আজকাল তো অধিকাংশ মহিলারাই মসজিদে যেতে পারেন না। মসজিদে তাদের জন্যে কোনো জায়গাই নেই। তাহলে তাদের একাকী শিক্ষা দান করা হোক? কিন্তু আপনি মানুষকে বলতে শুনবেন, সে তো রান্নাবান্না করতে জানে, মাশা আল্লাহ্‌! আমাদের তো এতটুকুই প্রয়োজন!
কিন্তু না! মহিলাদের অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। এজন্যই আন্দালুস উম্মাহর সোনালী যুগের অন্যতম। তারা অবশ্যই ইসলাম সম্পর্কে ইলম অর্জন করবে।
আমি বলিনি, তারা ইউনিভার্সিটিতে যাবে এবং লিবারেল আর্ট নিয়ে পড়াশুনা করবে। আমি বলেছি, তারা ইসলাম সম্পর্কে ইলম অর্জন করবে। তাদের জন্য অবশ্যই দীনি সেন্টার থাকা প্রয়োজন, যেখানে তারা দীন সম্পর্কে ইলম অর্জন করবে। আমাদের অবশ্যই এটা করতে হবে। কেননা, তারাই উম্মাহর পরবর্তীদের প্রতিপালন করবে। বাবারা সন্তান প্রতিপালনে তেমন ভূমিকা রাখে না, যেমন মায়েরা রাখে। মা যদি তাঁর দীন সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যায়, তাহলে সে তাঁর সন্তানকে কী শিক্ষা দিবে? এটাই আমাদের উম্মাহর অসুস্থতার কথা বলে দেয়, যদিও আমরা নিজেদের খুব ভালো অবস্থানে আছি বলে দাবি করি…
.
আমাদের বোনেরা ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আর উম্মাহর পূরুষরাও যথেষ্ট পরিমাণ অজ্ঞতায় নিমজ্জিত। আমাদের এই দুরবস্থা থেকে অবশ্যই ঘুরে দাড়াতে হবে।
.
যখন আমাদের বোনেরা শিক্ষিত ছিলেন!
মূলঃ উস্তাদ মূসা সেরেন্টোনিও
ভাষান্তরঃ সাইফ মুহাম্মাদ
©

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *