শিয়াদের ব্যাপারে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর বক্তব্য

শিয়াদের ব্যাপারে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর বক্তব্য

বর্তমান শিয়াদের কুফরের বিষয়টি একেবারে সুস্পষ্ট। প্রথম যুগের শিয়ারা তাদের আকীদা-বিশ্বাস গোপন করে রাখতো। তাদের কিতাবাদি আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের অনেক বড় বড় আলেম সরাসরি প্রত্যক্ষ করেননি। যার কারণে তারা ব্যাপকভাবে শিয়াদের কাফির বলতেন না।কিন্তু বর্তমানে তাদের কিতাবাদিগুলো প্রকাশ পেয়েছে এবং তাদের আকিদা বিশ্বাসের বিষয়গুলোও মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই এ যুগের আলিমগণ বর্তমান শিয়াদেরকে স্বাভাবিকভাবে কাফের বলেন।(দেখুন, ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ৪/৫৮৬-৫৮৭)। তবে তাদের মধ্যে বিশেষভাবে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দল যদি সরাসরি সুস্পষ্টভাবে এ সকল কুফরী আকিদার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তবে তাদের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যাসাপেক্ষে কিছুটা ভিন্ন বিধান রয়েছে। কিন্তু স্বাধারণভাবে তাদের ক্ষেত্রে আসল হুকুম হলো, তাদেরকে কাফির সাব্যস্ত করা(থানভী রহঃ-এর বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ)। আমাদের আকাবিরগণ তাদের বিভিন্ন লেখালেখিতে এ বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে গিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিশেষ করে ইউসুফ লুধিয়ানবীসহ (রহঃ) পাকিস্তানের অনেক আলিম শিয়াদের কুফরী বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। এমনকি এ কারণে পাকিস্তানের শিয়ারা ইউসুফ লুধিয়ানবীসহ (রহঃ) অনেক আলিমকে শহীদ করেছে। পাকিস্তানের শিয়াদের কুকর্মের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ এবং এর ফিরিস্তি অনেক লম্বা!! কিন্তু আজকাল দেখা যাচ্ছে, অনেকেই শিয়াদের কাফের বলতে রাজি নয়। বরং শিয়াদেরকে একসাথে নিয়ে কাজ করতে খুবই আগ্রহী।তাদের এই আগ্রহের কারণটা আমাদের কোনভাবে বুঝে আসছেনা। কিন্তু তাদের সামনে ইউসুফ লুধিয়ানবীসহ আরো অনেক আলেমের বক্তব্য তেমন একটা বেশী গুরুত্ববহ নয়,যার কারণে আমরা তাদের জন্য বা তাদের সামনে এমন ব্যক্তির বক্তব্য উল্লেখ করবো যাকে তারা অনেক বড় ব্যক্তি বলে মনে করে এবং যার নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক কিছুই করা হয়, যার দুয়েকটি ভুলকেও তারা ওহীর মত আঁকড়ে ধরেছে, যার বিরোধিতা যেন কুফরী পর্যায়ের। হ্যাঁ,হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহিমাহুল্লাহর কথাই বলছি। শিয়াদের ব্যাপারে আমাদের আকাবিরগণের মাঝে অনেকেই কলম ধরেছেন যাদের লেখা থানভী রহিমাহুল্লাহর এই লেখার চেয়ে আরও অনেক বেশি দলিল সমৃদ্ধ। কিন্তু আমি এই আলোচনাটি উল্লেখ করছি, যার একটি কারণ তো আগেই বললাম যে থানভী রহিমাহুল্লাহকে তারা অত্যধিক শ্রদ্ধা করে, এমনকি তার ভুলভ্রান্তিকেও ওহীর মত মনে করে বসে। আরেকটি কারণ হলো, এই আলোচনার মাঝে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি চলে এসেছে যা প্রত্যেক মুসলিমের জানা আবশ্যক। তাই এই আলোচনাটির চুম্বকাংশ আমি তার ইমদাদুল ফাতাওয়া থেকে বাংলায় অনুবাদ করছি।

(বিঃদ্রঃ মাওলানা আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী শিয়াদেরকে কাফির বলতে চাইতেন না। তাই যখন শিয়াদেরকে কাফির বলে ফতোয়া দেয়া হলো তখন তিনি আশরাফ আলী থানভী রহিমাহুল্লাহর কাছে শিয়াদের কাফির সাব্যস্ত করার ব্যাপারে কিছু সংশয় তুলে ধরেন। তখন থানভী রহিমাহুল্লাহ সেগুলোর চমৎকার জবাব দেন।)

ইমদাদুল ফতাওয়ার চুম্বকাংশের (ভাব) অনুবাদঃ
প্রশ্নঃ ….. শিয়াদেরকে বেদআতী,ফাসিক, ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাসী ইত্যাদি যা ইচ্ছে বলা যেতে পারে। কিন্তু তাদেরকে কাফির, ইসলাম থেকে খারিজ আখ্যায়িত করতে মনে সায় দিচ্ছে না।

উত্তরঃ এটা আপনার ঈমানী শক্তির আলামত। কিন্তু যারা তাদেরকে কাফির ফতোয়া দিয়েছেন তাদেরও ভিত্তি কিন্তু সেই ঈমানী শক্তিই। একারণেই তারা যাদের মাঝে ঈমানী বিষয়গুলোকে অস্বীকারের প্রমাণ পেয়েছেন তাদেরকেই বেঈমান বলে আখ্যায়িত করেছেন!

প্রশ্নঃ যদি এই গোমরাহ দলগুলো কাফের হয়ে যায় তাহলে মুসলমান থাকবে কয়জন?!

উত্তরঃ এর জিম্মাদারী কে নিবে?! আল্লাহ না করুন যদি কোন এলাকায় অধিক পরিমাণে মানুষ মুরতাদ হতে থাকে এবং মুসলিমদের সংখ্যা কমে যায়, তবে কি শুধু এ মাসলাহাতের কারণে তাদেরকে কাফের বলা যাবে না?!!

প্রশ্নঃ আমার অন্তর তো কাদিয়ানীদের ব্যাপারেও বিভিন্ন ব্যাখ্যার (তা’বীলের) তালাশ করতে থাকে!

উত্তরঃ এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে অনুগ্রহ ও দয়া। কিন্তু এই অনুগ্রহ ও দয়ার ফলাফল সরাসরি মুসলমানদের বিরুদ্ধে নির্দয় হওয়া। যার শিকার মুসলমানরা ভালোভাবেই হবে!

প্রশ্নঃ যে আকিদার ভিত্তিতে শিয়াদেরকে কাফির বলা হয়েছে অর্থাৎ তাহরীফে কুরআন বা কুরআন বিকৃতি এ বিষয়টির ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কারণ এটা যদি বাস্তবে শিয়াদের আকীদার অংশ হতো তাহলে শাহ আব্দুল আযীয দেহলবী রহঃ ও অন্যদের কাছে তা অস্পষ্ট থাকতো না!

উত্তরঃ শিয়াদের গ্রহণযোগ্য কিতাবে এই আকিদা প্রমাণিত। এখন শাহ আব্দুল আযীয দেহলবী যদি এ ব্যাপারে চুপ থাকেন —যার বাস্তবতা আমার জানা নেই—তাহলে সে বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কিন্তু শিয়াদের কিতাবে যে বিষয়টি প্রমাণিত সেটার তো কোন ব্যাখ্যা হতে পারে না!

প্রশ্নঃ বিষয়টি আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছে যে, যখন আমরা আর্য সম্প্রদায় ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে কোরআনে কারিমকে অপরিবর্তিত হওয়ার দাবি পেশ করছি এবং আমার বলছি যে এটা আমাদের মাঝে সুপ্রমাণিত এবং স্বতঃসিদ্ধ একটি আকিদা তখন এই লোকেরা তো আমাদের বিরুদ্ধে নতুনভাবে উঠেপড়ে লাগবে এবং বলবে,
” দেখো তোমাদের কালিমা পড়ুয়া এবং তোমাদের কিবলা মান্যকারী কোটি কোটি ব্যক্তিও কুরআনকে অসম্পূর্ণ এবং পরিবর্তিত বলে মেনে নিয়েছে”!!

উত্তরঃ তাহলে তো তাদেরকে কাফের বলে সাব্যস্ত করা আরো বেশী জরুরী এবং প্রয়োজনীয় বিষয় বলে প্রমাণিত হলো। তাহলে আমরা সরাসরি মানুষকে বলে দেব যে, ওরা তো মুসলমানই নয়!

প্রশ্নঃ…. আমি মনে করি গোমরাহ ফিরকাগুলোর সাথে এরকম আচরণই করা উচিৎ।অর্থাৎ তাদের সাথে পূর্ণ শিথিলতা করাও উচিৎ নয়।আবার তাদের বিরুদ্ধচারণও এত বেশি করা উচিৎ নয় যার দ্বারা তাদের মাঝে এবং আর্য ও খ্রিস্টানদের মাঝে কোন পার্থক্যই বিদ্যমান না থাকে!!

উত্তরঃকিন্তু কোন ফিরকা বা দল যদি নিজেরা নিজেদের কাফির বানায় তাহলে কি আমরা তাদেরকে কাফির বাতাতেও (বলতেও) পারবো না?! পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি নিজেকে কাফির বলেনি। বরং কেউ নিজেকে খ্রিস্টান বলে তো কেউ ইয়াহূদী বলে। মূলত এসকল ফিরকা ও দলের কুফরি বিশ্বাসগুলো দলিল দ্বারা প্রমাণিত। এই কারণে তাদেরকে কাফের বলা হয়। তো কাউকে কাফের সাব্যস্ত করার ভিত্তি হলো এসকল কুফরি আকিদা সমূহ। সুতরাং যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে শিয়া বলে দাবি করে—আর জানাকথা যে অনেকগুলো কুফরি আকিদা শিয়াদের ধর্মমতের আবশ্যকীয় বা আনুষাঙ্গিক অংশ— তো এই ব্যক্তি যখন নিজেকে শিয়া ফিরকার দিকে সম্পৃক্ত করলো তখন সে যেন এসকল আকিদা নিজের মাঝে লালন করে নিলো।তাহলে এরপরও তাকে কাফির বলতে বাধা কোথায়?! যদি স্বয়ং শিয়াদের মাঝেও ঐ এই কুফরি আকিদা (কুরআন বিকৃতির আকিদা বা অন্যান্য কুফরী আকিদা) মতবিরোধপূর্ণ হতো তবুও তাকে কাফের বলতে কোন বাধা ছিল না! অথচ আমরা জানতে পেরেছি, যে গুটিকয়েক শিয়া ইমাম এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন তাদের এই মতভেদ অধিকাংশ (প্রায় সকল) শিয়া ইমামদের কাছে কোনো গ্রহণযোগ্য মত নয়!! সুতরাং,শিয়াদের ক্ষেত্রে মূল হুকুম হলো তাদেরকে কাফির সাব্যস্ত করা।তবে যদি কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি স্পষ্টভাবে বলে, “আমার এই কুফরি আকিদা নেই” অথবা কোন ফিরকা বা দল যদি নিজেদেরকে শিয়া নাম না দিয়ে আলাদা নাম রাখে যেমন এমন কোন ইমামের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে যে ইমামের মাঝে কুফরী আকিদা (যেমন কুরআন বিকৃতির আকিদা) ছিলো না…… তাহলে ওই ব্যক্তি বা গ্রুপকে আলাদাভাবে তাকফির করা (কাফির বলা) হবে না।….
যদি কোন হিন্দু তাওহীদ বা একত্ববাদকে স্বীকার করে নেয়,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লামের রিসালাতকেও স্বীকার করে নেয় কিন্তু নিজেকে হিন্দু বলেই দাবি করে ,এমনিভাবে কিছু তারা তা’বীল বা ব্যাখ্যাও করে, তবে তাদের সাথে কী মুআমালা হবে (তাদেরকে কি কেউ মুসলিম বলবে?! কখনোই নয়!) এখানেও(নিজেকে কেউ যদি শিয়া বলে তার ক্ষেত্রেও) ঠিক একই অবস্থা! ফতেপুর জেলায় হিন্দুদের একটি দল আছে যারা কুরআন এবং হাদিস পড়ে,নামায রোযা পালন করে, কিন্তু নিজেদেরকে হিন্দু বলে দাবি করে, পোশাক-নাম সবকিছু হিন্দুদের হিন্দুদের মত,তো এই গ্রুপ যদি নিজেদেরকে হিন্দু বলে এবং নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার না করে,তাহলে কি অন্যরা কি এই ব্যাখ্যা করতে বাধ্য,
” যদি এমন আকিদা রাখে তাহলে কাফির আর যদি এমন আকিদা রাখে তাহলে মুসলমান”?!!!
(মোটেও না! বরং, তাদেরকে কাফিরই বলা হবে)
(ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ৪/৫৮৪-৫৮৬)

আলোচনার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *