ওয়াজ-মাহফিলে কুরআন-হাদীসের রেফারেন্স বাধ্যতামূলক করার আবেদন জানিয়ে কোর্টে রিট
———————————-
আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ. বলেছেন, অনেক সময় আওয়ামরা কথায় কথায় রেফারেন্স চায় অথচ তারা এসবের কিছুই বুঝেনা। তাদের এই বদ অভ্যাস দূর করার জন্য আলেমদের উচিত রেফারেন্স না দেয়া। যেন তাদের দিলে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, কোন মুতামাদ-নির্ভরযোগ্য আলেম ফতোয়া দিলে আওয়ামের জন্য রেফারেন্স তলব করা কাম্য নয়, বরং নিন্দনীয়। গাঙুহী রহ., মুফতী কেফায়াতুল্লাহ রহ. প্রমুখের ফতোয়া এমনই ছিল। কেবল প্রশ্নের উত্তর, কোন রেফারেন্স নেই। তবে আলেম বা দালায়েল বুঝতে সক্ষম কেউ হলে অবশ্যই তার দলীল তলব করার হক রয়েছে।
আরেকটা বিষয় হল, আওয়াম আলেমদের কাছে আসা যাওয়া করা অতীব জরুরী বিষয়। আলেমদের প্রতি মুহতাজ থাকা কাম্য। এতে আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি থাকবে এবং দ্বীন মাহফুজ থাকবে। এখন যদি তাদের সামনে দলীলাদি পেশ করা হয় এটা তাদের জন্য ফিতনার কারণ হতে পারে। কারণ দলিলের মারপ্যাঁচ বুঝা তাদের পক্ষে অসম্ভব। দলীলের সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম ব্যাপার-সেপার তারা না বুঝে ভবিষ্যতে অপরিণামদর্শী পথে হাঁটতে পারে। ইমাম যাহাবী রহ. লিখেছেন, একটা হাদিস যয়ীফ কেন, রাবীর কোন সমস্যায় যয়ীফ হয়েছে ইত্যাদি ইলালুল হাদীসের বিষয়াবলী আওয়ামের সামনে পেশ করা নাজায়েয। এতে তারা দ্বীনের ব্যাপারে সন্দিহান, ফেতনাগ্রস্ত ও পথভ্রষ্ট হবে। এজন্যই আল্লাহ উলুল আমরের কথা মেনে নিতে বলেছেন, দলিল জিজ্ঞেসের কথা বলেননি। তাকলীদের সংজ্ঞায় সকল ফকিহ এ কথা বলেন, তাকলীদ হল দলিল জিজ্ঞেস ছাড়া কোন মুজতাহিদের অনুসরণ।
যারা হেদায়া পড়েছি দেখেছি একটা মাসআলাকে সাহেবে হেদায়া কতভাবে ঘুরিয়ে নিয়ে তারপর ছাবিত করেন। সকল মাযহাবেরই একই হালত। একটা মাসআলা অনেক উসূল ও কাওয়াইদ পেরিয়ে তারপর প্রমাণিত হয়। উসূলের এমন মারপ্যাঁচের কথা আওয়ামের বললে ফিতনা হওয়াই প্রবল।
‘ওয়াজ-মাহফিলে কুরআন-হাদীসের রেফারেন্স বাধ্যতামূলক করার আবেদন জানিয়ে কোর্টে রিট’ এই দাবী বাহ্যিক অনেক সুন্দর, যুক্তিসংগত এবং অবশ্যই একটি ইতিবাচক কথা। কিন্তু এর আড়ালে ওয়াজের টুঁটিকে গলা টিপে ধরার পায়তারা নয় তো? বর্তমানের বক্তারা আগের চেয়ে এখন অনেক সচেতন এবং এখনের ওয়াইজরা স্টাডি করে। সময় তাদেরকে এমন সচেতন করে তুলছে। এক সময় দেখবেন সবাই পড়াশোনা করেই কথা বলবে। পরিবেশ যখন এমন অবস্থার দিকে এগুচ্ছে এমন মুহূর্তে এমন দাবী কোন ‘কিন্তু’ রাখে।
এই দ্বীন উলামায়ে কেরামের কাছে আমানত। এখন যদি ওয়াজ মাহফিল যেখানে অধিকাংশ শ্রোতা দ্বীন সম্পর্কে গাফিল, শুদ্ধ করে কালিমাও পড়তে পারে না, ওযু গোসলেরও ফরজ জানে না, তাদের সামনে যদি দালীলিক মারপ্যাঁচ বলা হয়, তাহলে এই আমানতের খেয়ানত বলে গণ্য হবে না তো? এই আমানত তো কেবল আলেমদের হাতে দেয়া হয়েছে।
তবে হ্যাঁ, এটা করা যেতে পারে যে, যারা বক্তব্য দেয় তাদের কথাকে যাচাইয়ের জন্য প্রশাসন কিছু বিদগ্ধ আলেম নিয়োগ দিবে। তারা যাচাই করবেন বক্তব্যের সমস্যা কোথায়। সাথে সাথে বর্তমানে ব্যবসায়ী বক্তা যারা বের হয়েছে তাদেরও লাগাম টেনে ধরা দরকার।
আব্দুল কাদির মাসুম