শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, “জিনরা বিভিন্ন ধর্মাবলাম্বী, যেমনটা আলিমগণ বলেছেন। জিনদের মধ্যে মুসলিম মুশরিক খ্রিস্টান সুন্নি বেদাতি সবই রয়েছে। জিনদের মধ্যে কাফির ফাসিক বদকার রয়েছে। প্রত্যেক শ্রেণির জিন তার অনুরূপ মানব শ্রেণির প্রতি আকর্ষিত হয়। ইহুদি জিন ইহুদি মানুষের সাথে, খ্রিস্টান জিন খ্রিস্টান মানুষের সাথে, মুসলমান মুসলমানের সাথে, ফাসিক ফাসিকের সাথে, জাহেল বেদাতি জিন অনুরূপ জাহেল বেদাতি মানুষের সাথে (সম্পর্ক গড়ে)। {মাজমুউল ফাতাওয়া: ১১/৩০৬, ১৯/৩৯, ৮/৫৩৪; মাজমুআতুর রাসায়িল আলকুবরা: ১/৬৬}
ইমাম বাইহাকি রহ. তার গ্রন্থে (৭/৪৪৫-৪৪৬) বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন, “আব্দুর রহমান ইবনে আবি লাইলা বলেন, তার সম্প্রদায়ের একজন আনসারি ব্যক্তি কাওমের অন্যান্য লোকদের সাথে এশার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়। তখন এক জিন তাকে বন্দি করে ফেলে। আচমকা সে গায়েব হয়ে যায়। অনন্তর তার স্ত্রী উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর কাছে গিয়ে সবিস্তারে ঘটনা জানায়। উমর রা. সেই সম্প্রদায়ের লোকদেরকে এই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তারাও এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলে, হাঁ, সে এশার নামাজ পড়তে বেরিয়ে আচমকা হারিয়ে যায়। উমর রা. সেই নারীকে চার বছর অপেক্ষা করতে বলেন। চার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সেই নারী এসে উমর রা. কে জানায়। উমর রা. সেই সম্প্রদায়ের লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারাও স্বীকৃতি জানায়। অনন্তর উমর রা. সেই নারীকে বিয়ে করার জন্য আদেশ দেন। এরপর সে বিয়েও করে ফেলে।
এর কিছুকাল পর তার স্বামী ফিরে এসে উমর রা. এর সাথে বিবাদে লিপ্ত হলো। উমর রা. বললেন, তোমাদের একেকজন সুদীর্ঘকাল গায়েব থাকবে আর তার পরিজন তার বেঁচে থাকার ব্যাপারে কিছুই জানবে না! তখন সে বললো, হে আমিরুল মুমিনিন, আমার ওযর ছিলো। উমর রা. বললেন, কী ওযর? সে বললো, আমি এশার সালাত আদায় করার জন্য বেরিয়েছিলাম। অনন্তর এক জিন আমাকে বন্দি করে ফেললো। আমি দীর্ঘকাল তাদের মাঝেই বাস করেছি। আমাকে বন্দি করার পর তাদের ওপর মুমিন (বর্ণনাকারী সাঈদ বলেন, শব্দটা মুমিন অথবা মুসলিম বলেছেন।) জিনেরা আক্রমণ করে। অনন্তর মুমিন জিনেরা বিজয় লাভ করে এবং তাদের অনেককেই বন্দি করে ফেলে। মুমিন জিনদের হাতে যারা বন্দি হয়েছে, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। এরপর তারা আমাকে বললো, আমরা তো দেখছি, তুমি একজন মুসলিম। তোমাকে বন্দি করা আমাদের জন্য জায়েয হবে না। তখন তারা আমাকে তাদের মাঝে থাকার বা পরিজনের কাছে ফিরে আসার এখতিয়ার দিলো। আমি পরিজনের কাছে ফিরে আসার এখতিয়ার গ্রহণ করলাম। অনন্তর তারা আমার সাথে এলো। রাতে কিছুই ঘটতো না আর দিনে এক ঝঞ্জাবায়ুকে অনুসরণ করে আমি পথ চলতাম। উমর রা. বললেন, তাদের মাঝে অবস্থানকালে তোমার খাবার কী ছিলো? সে বললো, শিম এবং আল্লাহর নাম নেয়া ছাড়া জবাইকৃত পশু। উমর রা. বললেন, তাহলে পানীয় কী ছিলো? সে বললো, জাযাফ। এরপর উমর রা. তাকে মোহর পরিশোধ করে দেয়া বা স্ত্রীকে গ্রহণ করার মাঝে এখতিয়ার দিলেন।