তোমরা যারা আকিদা নিয়ে ফিতনা ছড়াও…!

তোমরা যারা আকিদা নিয়ে ফিতনা ছড়াও…!

হাম্বলি মাজহাবের আলেমগণ আকিদাগত দিক দিয়ে সালাফি। হাম্বলি মাজহাবের মূলনীতিই হলো হাদিসের অনুসরণ। কোনোরকম হাদিসটি গ্রহণযোগ্য হলেই সেই হাদিসের মতই হলো হাম্বলি মাজহাব। এজন্য প্রায়ই দেখা যায়, একই মাসআলায় ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.-এর একাধিক মত রয়েছে। কারণ, এই মাসআলায় একাধিক সহিহ হাদিস পাওয়া গেছে। সে হিসেবে আকিদার ক্ষেত্রেও হাম্বলিরা ব্যখ্যার পক্ষে নন; তারা নুসুসকে (কুরআন-হাদিসের টেক্সট) তার স্ব অবস্থায় রেখে আকিদাপোষণ করেন। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দিকে যান না।

পক্ষান্তরে হানাফি, মালিকি ও শাফিয়ি আলেমগণ আকিদাগত দিক দিয়ে আশআরি-মাতুরিদি। কারণ, এই তিন মাজহাবের মূলনীতি হলো, হাদিসসমূহের বাহ্যিকতা অনুসরণ না করে মর্মকথা অনুসরণ করা। এজন্য হাদিসগ্রহণের মূলনীতি ও ফিকহের মূলনীতির আলোকে তারা হাদিসের পর্যালোচনা করে একটি মত অবলম্বন করেন। সেই হিসেবে আকিদার ক্ষেত্রেও তারা নুসুসের ব্যখ্যা- বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করেই তবে একটা আকিদাপোষণ করেন।

এখানেও একটা ছোটখাটো পার্থক্য রয়ে গেছে। আকিদাগত দিক দিয়ে মালিকি ও শাফিয়িদেরকে একত্রে আশআরি বলে। ইমাম আবুল হাসান আশআরির দিকে সম্বন্ধ করে। আর শুধুমাত্র হানাফিদেরকে মাতুরিদি বলা হয়। ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদির দিকে সম্বন্ধ করে। আশআরি ও মাতুরিদিদের মধ্যে মৌলিক ১২ টি আকিদাগত মাসআলায় মতবিরোধ রয়েছে। অন্যথায় আর কোনো বেশকম নেই। সালাফিদের বেলায় এরা উভয়েই এক। তাদের আকিদাপালনের মূলনীতি এক ও অভিন্ন হওয়ার কারণে।

মনে রাখতে হবে, মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে যদ্রুপ হাম্বলি আলেমদের তুলনায় হানাফি-মালিকি-শাফিয়ি আলেমদের আধিক্যই বেশি; তদ্রুপ তাদের মধ্যে সালাফিদের তুলনায় আশআরি-মাতুরিদিদের সংখ্যাই বেশি। ফিকহি বিষয়ে তাদের দ্বারা যেমন দীনের বেশি খিদমত হয়েছে, আকিদাগত বিষয়েও অনুরূপ হয়েছে। আপনি হাদিস, তাফসির, ফিকহ–যেকোনো বিষয়ের বড় বড় আলেমদের জীবনবৃত্তান্ত পড়তে গেলেই দেখবেন, এঁদের বেশিরভাগই ছিলেন আশআরি-মাতুরিদি।

হানাফি, মালিকি, শাফিয়ি ও হাম্বলি আলেমদের মধ্যে যেভাবে ফিকহকে কেন্দ্র করে মাজহাবগত মতবিরোধ ছিল, তদ্রুপ আকিদাকে কেন্দ্র করে আকিদাগত মতবিরোধও ছিল। সবই ছিল কিতাবাদির পাতায়। সকলেই কিতাবের পাতায় নিজ নিজ মতকে দালিলিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিরোধীপক্ষের দলিল খণ্ডন করেছেন। কিন্তু কেউ কাউকে তাকফির করেননি। এমনকী তখনকার বিভিন্ন গোমরাহ গোষ্ঠীকে তাকফির করতেও সাতপাঁচ ভাবতেন। তবুও এইসব আকিদাগত জটিল বিষয়গুলোকে পাবলিক প্লেসে টেনে এনে ফিতনা ছড়াননি। মতানৈক্য সবই কিতাবের পাতায় সীমাবদ্ধ ছিল। যে অঞ্চলে যে ফিকহ ও আকিদার প্রচলন ছিল, সে অনুযায়ী সেখানকার আম জনতাকে দীনের দাওয়াত দিয়েছেন।

কিন্তু আফসোসজনক হলেও সত্য যে, ফিকহি বিষয়ে যেভাবে লা-মাজহাব/মাজহাববিদ্বেষের ফিতনা ছড়ানো হচ্ছে, ঠিক তদ্রুপ আকিদাগত বিষয়েও রীতিমতো ফিতনা ছড়ানো হচ্ছে! উম্মাহর ৮০% মাজহাবালম্বী মুসলমানকে যেভাবে মুশরিক বানানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে, তদ্রুপ ৮০% আশআরি-মাতুরিদি মুসলমানকেও মুশরিক বলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে! মাজহাবকে যেভাবে ফিতনা বানানো হচ্ছে, আকিদাকেও তদ্রুপ ফিতনা বানিয়ে নেওয়া হচ্ছে! তাহলে কি আশআরি-মাতুরিদি বড় বড় আলেমগণের আকিদা ঠিক ছিল না? যেমন ইমাম কুরতুবি, আসকালানি, সুয়ুতি, আইনি, ইবনে কাসির, বাইহাকি ইবনুল হুমাম প্রমুখদের!

বড় আশ্চর্য লাগে, সালাফি ও আসারি নামের কিছু উজবুক ইদানীং এই আকিদা নিয়ে অনলাইনে কাদা ছুড়াছুঁড়ি করছে! এদের কথা নাহয় বাদ দিলাম; কওমি মাদরাসা পড়ুয়া মানহাজি দাবিদার কিছু নাদানও আশআরি-মাতুরিদেরকে আকিদাবিনষ্ট, এমনকী প্রকারান্তে মুশরিক বলার দুঃসাহস দেখাচ্ছে! এরা পাইছে টা কী? দীনকে পুরাই উপহাসের বস্তু বানিয়ে চলছে! আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো অনলাইনের কিছু অকালপক্ব শাইখের লেকচার শুনে এরা মনে করে আকিদার মস্তবড় ইমাম বনে গেছে! আকিদা বিষয়ে এরা কয়টা কিতাব পড়েছে? দু-চারটা কিতাব পড়লেও তো এমন ফিতনা করতে পারত না!

লেখাটির শেষের প্যারায় এসে কিছুটা রাগতভাব ফুটে উঠেছে। এজন্য আন্তরিকভাবে আমি দুঃখিত। এরকম চ্যাতা টাইপের লেখালেখি আমি করি না। আবার এই রাগ দ্বারা নির্দিষ্ট কাউকেও উদ্দেশ্য করিনি। তাই কারও পক্ষে-বিপক্ষে নেওয়ার চেষ্টা না করলে খুশি হব।

শাইখ আইনুল হক কাসেমী হাফি.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *