মতবিরোধ সত্ত্বেও পারস্পরিক সুসম্পর্ক

মতবিরোধ সত্ত্বেও পারস্পরিক সুসম্পর্ক

মতবিরোধ সত্ত্বেও পারস্পরিক সম্পর্ক কিরূপ হবে, আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরামের জীবনেই তা দেখিয়েছেন। যেসকল সাহাবি হযরত মুয়াবিয়া রা. হকের উপর আছেন বলে মনে করতেন তারা হযরত মুয়াবিয়া রা. এর পক্ষ অবলম্বন করেছেন আর যারা হযরত আলি রা. হকের উপর আছেন বলে মনে করতেন তারা হযরত আলি রা. এর পক্ষ অবলম্বন করেছেন। কোনো এক পক্ষ অবলম্বন করা সত্ত্বেও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত সহানুভূতিপূর্ণ ছিল, পৃথিবীর ইতিহাস যা পূর্বে কখনও দেখেনি। উভয় পক্ষ নিজ নেতৃত্বের অনুকূলে লড়াই করছিল কিন্তু হযরত আলি রা. এর বাহিনীর কেউ ইনতেকাল করলে হযরত মুয়াবিয়া রা. এর লোকেরা তার জানাযায় শরিক হত। হযরত মুয়াবিয়া রা. এর বাহিনীর কেউ ইনতেকাল করলে হযরত আলি রা. এর লোকেরা তার জানাযায় শরিক হত। এর কারণ ছিল, তাদের লড়াই কোনো ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ছিল না বরং হযরত আলি রা. আল্লাহ তাআলার হুকুমের মর্ম একরকম বুঝেছিলেন এবং তার উপর আমল করছিলেন আর হযরত মুয়াবিয়া রা. অন্যরকম বুঝেছিলেন এবং তদনুযায়ী আমল করছিলেন। উভয়েরই লক্ষ্য ছিল আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন করা।

হযরত আবু হুরায়রা রা. এর কর্মপন্থা

হযরত আবু হুরায়রা রা. শিক্ষক ছিলেন। মুফতি শফী রহ. বলতেন, তিনি মৌলবিদের মতো সাহাবি ছিলেন; সর্বদা পড়া ও পড়ানোর কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর কর্মপন্থা ছিল, তিনি উভয় পক্ষের লোকদের কাছেই যেতেন; বিশেষ কোনো পক্ষাবলম্বন করেননি। নামাজের সময় হলে হযরত আলি রা. এর সেনাছাউনিতে এসে আলি রা. এর পিছনে নামাজ পড়তেন। খাবারের সময় হলে হযরত মুয়াবিয়া রা. এর সেনাছাউনিতে গিয়ে তাদের সাথে খাবারে শরিক হতেন। একবার জনৈক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করল, আপনি এরূপ কেন করেন? উত্তরে তিনি বলেন, নামাজ ওখানে ভালো হয় আর খাবার এখানে ভালো হয়।

রোম সম্রাটকে হযরত মুয়াবিয়া রা. এর জবাব

সাহাবিদের এ দু’পক্ষের লড়াই চলাকালে একদিন রোম সম্রাটের একজন দূত হযরত মুয়াবিয়া রা. এর কাছে আসে। রোম সম্রাট হযরত মুয়াবিয়াকে পত্রমারফত লিখেন, আমি শুনেছি, আপনার ভাই হযরত আলি রা. আপনার প্রতি জুলুম করছেন এবং হযরত উসমান রা. এর হত্যাকারীদের বিচার করছেন না। আপনি চাইলে আপনার সাহায্যে আমি একটি বড় বাহিনী প্রেরণ করতে পারি, এতে আপনি হযরত আলিকে সহজেই পরাস্ত করতে পারবেন। উত্তরে হযরত মুয়াবিয়া রা. তাৎক্ষণিক লিখে পাঠান, ‘এই খ্রিস্টান, তুমি ভাবছ আমাদের পারস্পরিক মতবিরোধের সুযোগ নিয়ে তুমি হযরত আলি রা. এর উপর হামলা করবে। মনে রেখো! যদি তুমি হযরত আলি রা. এর প্রতি চোখ তুলে তাকানোর দুঃসাহস করো তা হলে হযরত আলি রা. এর বাহিনীর যে সৈন্যকে তুমি সর্বাগ্রে দেখবে, যে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবে, সে হল মুয়াবিয়া।’ [তাজুল উরুস, ৭/২০৮]।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *