❝ ইয়া উম্মাতা মুহাম্মাদ ! ❞ – শাইখ খালিদ আল রাশিদের কালজয়ী আবেগময় খুতবাহ
হে আল্লাহর বান্দারা !
আমি আজ আপনাদেরকে একটি দেশের গল্প বলবো,
দেশটি ইউরোপে, লোকেরা তাকে ডেনমার্ক নামে ডাকে, আমাদের ও তাদের দেশের মাঝে আছে দূতাবাস, ব্যবসা বাণিজ্য ও লেনদেন। আরো আছে নানা রকম চুক্তি ও শপথনামা। আমরা তাদের কোন কিছুতে আঘাত করিনি, কিংবা এমন কিছুও করিনি যার কারণে তাদের সাথে আমাদের শত্রুতা সৃষ্টি হয়,
কিন্ত হায় ! কাছে কিংবা দূরে দুনিয়ার সব কুফফারই একই গোত্রের! তাদের অন্তরগুলো হল ঘৃণা ও হিংসা দিয়ে ভরা। কাদের বিরুদ্ধে? মুসলিমদের বিরুদ্ধে ! আর আমাদের মালিক আর সবার চেয়ে এই বিষয়টা সবচেয়ে ভালো জানেন,
কাজেই তিনি আমাদের এদের ঘৃণ্য অন্তর সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি তাদের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
“আহলে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশত চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোনও রকমে কাফের বানিয়ে দেয়। তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও (তারা এটা চায়)।” (বাক্বারাহঃ ১০৯)
এবং আমাদের মালিক আরো বলছেন,
“তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও।” (নিসাঃ ৮৯)
এরপর সেই দেশের লোকেরা শুনলো, যেভাবে সারা দুনিয়ার মানুষেরা শুনলো; যখন তারা মুসলিমদের ইজ্জতে টান দিলো! তারা দেখলো, আমরা যে প্রতিক্রিয়া দেখালাম এটা আসলে যাদের আত্নসম্মান নেই, যাদের ইজ্জত বলে কিছু নেই তাদের প্রতিক্রিয়া। তারা দেখলো, এদের (আমাদের মুসলমানদের) না আছে আত্মসম্মান না আছে কোনও মর্যাদা ! আরে তারা তো আমাদের আল আকসা, ফিলিস্তিনের মানুষদের গত পঞ্চাশ বছর ধরে দেখে আসছে, দেখছে আমরা কিভাবে তাদের পরিত্যাগ করেছি! কিভাবে আমাদের ভাইদের তাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি, কিভাবে আমাদের বাচ্চাদের তাদের অস্ত্রে সজ্জিত ট্যাংকের সামনে ঢিল হাতে ঠেলে দিয়েছি, এরই নাম ভাতৃত্ববোধ ! এদের আবার ইজ্জত বলে কিছু আছে নাকি ?!
হায় মুসলমান !!!
তারা তো আরো দেখেছে কিভাবে এই জাতির পুরুষেরা তাদের সতী নারীদেরকেও ছেড়ে পালিয়েছে, হ্যাঁ বসনিয়া ও চেচনিয়াতে (একজন নারীকে ২৭ জন সৈন্য মিলে ধর্ষণ করেছে উন্মুক্ত স্টেডিয়ামে) !
আর তারা দেখেছে তাদের সাহসিকতা! কিভাবে মুসলমানদের নিজেদের দেশে ঢুকে সেখানে আস্তানা গেঁড়ে তাদের সম্পদ ও সম্মান পা দিয়ে মাড়াতে হয়, ইরাকে।
তারা আমাদের আল্লাহর কালাম, আল-কুরআনকে পা দিয়ে মাড়িয়েছে! তারা আল-কুরআনকে পা দিয়ে মাড়িয়েছে এবং অপমান করেছে !!!
আর এসব ঘটনার পর তারা আমাদের থেকে যা শুনলো, তা হলো কেবল নিছক নিরীহ নিন্দাজ্ঞাপন আর কুফর, যেটা আমাদের স্বভাব হয়ে গেছে। তারা তো ইহুদীদের থেকে শুনেই এসেছে, “মুহাম্মদ নির্বংশ হয়েছে, আর তাঁর কন্যাদের রেখে গেছে!”
তারা ইহুদীদের থেকে বার বার শুনে এসেছে, “মুহাম্মাদ মরে গেছে, আর রেখে গেছে কন্যাদের!”
এরপরের গল্প হলো, সেই দেশের লোকেরা, সেই ডেনমার্ক ও অন্যান্যরা, তাদের নিজেদের ভাগ চাইলো সেই বড় থালা থেকে, যেখানে সব একসাথে বসে আহার করছিলো।
তারা দেখলো, আমাদের অন্তর মরে গেছে, দুর্বলতা, কাপুরুষতায় ছেয়ে গেছে। তাই তারা আরও একবার ছুরি দিয়ে এই ব্যথিত অন্তর টুকরো টুকরো করলো!
কিন্তু কার মাধ্যমে ?
আদমের শ্রেষ্ঠতম সন্তানের মাধ্যমে! যদি আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে আমাদের সঠিক পথের সন্ধান না দিতেন তাহলে আজকে আমরা না সালাত, আর না সিয়াম পালন করতাম। ওরা আমাদের ছুরিকাঘাত করলো তাঁর অপমানের মাধ্যমে যিনি আমাদেরকে পেয়েছিলেন পথভ্রষ্টতায়, অতঃপর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে আমাদেরকে হেদায়াত করেছিলেন।
তারা আমাদের সেই মানুষটির উপর ছুরি ঢুকিয়ে দিলো! যখন আমরা ছিলাম নিঃস্ব, খালি পায়ের বেদু, আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে আমাদের সমৃদ্ধ করলেন। তারা তাঁর প্রতি আক্রমণ করলো, যিনি আমাদেরকে পেয়েছিলেন ছড়ানো ছিটানো বিচ্ছিন্ন অবস্থায়, আর আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে আমাদের অন্তরগুলোকে জুড়ে দিলেন একে অপরের সাথে।
তারা ছুরি ঢুকিয়ে দিলো তাঁর প্রতি, যিনি আমাদের নিজেদের জীবনের থেকেও প্রিয়, আমাদের পিতামাতা, ধন সম্পদ এমনকি সারা দুনিয়ার সকল মানুষের থেকেও যিনি ছিলেন প্রিয়।
আর তারাই প্রথম নয় যারা এমন কাজ করলো, তাদেরও ছিল পূর্বসূরী।
তাদেরও ছিলো পূর্বসূরী, আর আমাদেরও ছিল পূর্বসূরী, কিন্তু তারা যাদের পেয়েছিলো আমরা তাদের উত্তরসূরী নই, তারা জবাব পেয়েছিল, তারা পেয়েছিলো মু’ওয়াজ এবং মুয়াজ আফরার পুত্রদ্বয়কে (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)।
আরে, তারা তাদের সীমা অতিক্রম করেছে, কারণ তারা আমাদের মাঝে এমন কাউকেও পায়নি যে তাদেরকে মু’ওয়াজ ও মুয়াজ ইবন আফরা পুত্রদের মতন করে জবাব দিতে পারত।
ষোল বছরের দুই কিশোর, যারা বদরের দিনে এসে হাজির হয়েছিলো আবু জাহলের খোঁজে। আর যখন যুদ্ধের সারি দাঁড়িয়ে গেলো, কাতার সোজা হয়ে গেলো, সীসা গলানো প্রাচীর তৈরি হয়ে গেলো, তখন আবদুর রহমান ইবনে আউফ বলছিলেন, “আমি বাচ্চা ছেলেদের মাঝে পড়ে গিয়েছিলাম তাই অস্বস্তি বোধ করছিলাম, কারণ আমার মনে হয়েছিল নিজের নিরাপত্তার জন্য, নিজের পিঠ বাঁচানোর জন্য পুরুষ লোকের দরকার ছিলো। কিন্তু তাদের দুজনের মুখ থেকে যখন জবান ছুটলো, তখন বুঝলাম আমি এই ময়দানের সবচেয়ে সাহসী লোকদের মাঝে আছি।”
তারা বলল, “চাচাজান , দেখিয়ে দিন;বলুন আবু জাহেল কোথায়?”
তিনি বললেন, “তার সাথে তোমাদের কি দরকার?”
তারা উত্তর করেছিলো, “আমরা শুনেছি, সে আমাদের নবী (ﷺ) কে অসম্মান করে, কষ্ট দেয়।”
তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তো করবেটা কি তাকে চিনতে পারলে?”
তারা যে উত্তর দিয়েছিলো, তাতে মিশে ছিলো সত্যিকারের বীর পুরুষের ভালোবাসা।
“ওয়াল্লাহি (আল্লাহর শপথ) ! আমাদের নজর তার চোখ থেকে নিচে নামবে না! ওয়াল্লাহি ! যদি সে বেঁচে যায় তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার কোনও প্রয়োজন নেই!”
এরপর যখন তিনি বুঝলেন এরা সত্যবাদী, তিনি আবু জাহেলের জায়গাটি দেখিয়ে দিলেন। টান টান করে রাখা ধনুকের থেকে তীর যেভাবে ছুটে গিয়ে শত্রুর বুকে রক্তধারা ছুটায়, তারা দুজন সেভাবে ছুটে গেলেন, কুফফার সৈন্যদের সারি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, তাঁরা আক্রমণ করে লোকটাকে হত্যা করলেন।
এরপর তারা দুজনে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে খুশিতে ছুটে এলেন, বলতে লাগলেন, “আল্লাহর শত্রুটাকে আমি হত্যা করেছি!”
ওই আবু জাহেলের বংশধরেরা তাদের সুন্নাত ধরে রেখেছে, কিন্তু আমরা পারিনি আমাদের পূর্বসূরীদের সুন্নাহ ধরে রাখতে। আজকে কে আছে যে আল্লাহর শত্রুদের অপমানের জবাব দিতে পারবে? কে তাদের উত্তর দিবে? কুফফারদের এত গোস্বার কারণ কি?
আমরা তো তাদের সাথে ঝগড়া করতে যাইনি, … না কাছে না দূরে থেকে!
তারা বলে, “আমরা ও অন্যেরা তাদের শত্রু বলিনা। তাদের শত্রুতার জন্যে আহবানও করিনা।”
তাহলে কি সেই কাজ যা আমরা তাদের সাথে করেছি?
হ্যাঁ, তারা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উম্মাতের সংখ্যাবৃদ্ধি দেখে ক্ষেপে গিয়েছে, দিনের পর দিন ধরে তাদের যত মিথ্যা অপবাদ, অপপ্রচারের পরেও ইসলামের ও মুসলিমদের বিজয় দেখে ওরা বিবেক শূণ্য হয়ে গেছে।
তারা পাগল হয়ে গেছে, তারা জ্ঞানশূণ্য হয়ে গেছে, কারণ তারা দেখেছে এই উম্মতের লোকেরা এখনও তাদের আগ্রাসন ও ইসলাম ধ্বংসের যাবতীয় পরিকল্পনা সত্ত্বেও, তাদের দিন-রাত এক করে দেয়া নিরলস ষড়যন্ত্রের পরেও কিছু লোক দাঁড়িয়ে গেছে তাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে, কিছু মুজাহিদীন তৈরি হয়ে গেছে তাদের সর্বগ্রাসী চক্রান্তের বুক চিরে। জিহাদী প্রতিরোধের চরম বাস্তবতা দেখে তারা পাগলের মত ক্ষেপে গেছে। তারা ভড়কে গেছে ইরাকে এসে, তারা ভূলে গিয়েছিল যে মুহাম্মাদ (ﷺ) ছিলেন এই মুজাহেদিনদের নেতা।
তাদের সেক্যুলার কর্মী, দালালদের সংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও বেড়েছে মুজাহিদিনদের সংখ্যা। তারা পাগলের মত ভাল মন্দের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে জিহাদের আগুনকে দাবানলের মতো জ্বলে উঠতে দেখে।
তাদের আত্মা চমকে গেছে ইরাকে এসে। তারা ভুলে গিয়েছিল এই লোকদের নেতা মুহাম্মদ (ﷺ), যিনি নিজে এই সব যোদ্ধাদের নেতা, আর শহীদ হওয়া, শাহাদাত লাভ করা মুহাম্মাদ (ﷺ) উম্মাতের কাছে সবথেকে দামী বস্তু, দুনিয়ার ধন দৌলত তাদের পায়ে লুটায়।
আরে, তারা ভুলে গিয়েছিলো মুহাম্মাদ (ﷺ) মুজাহিদিনদের নেতা।
আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ঠিকই বলেছেন, “যখন যুদ্ধের ময়দানে আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠত, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করত, আমরা এসে আমাদের নবীজীর পিছনে আশ্রয় নিতাম আর তিনি সামনে থেকে লড়তেন এবং আমাদের রক্ষা করতেন।”
তিনি (ﷺ) আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন, আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করা হলো সত্যবাদীদের সবথেকে দামী ইচ্ছা।
তিনি বলেছেন (আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্য ক্বুরবান হোক), “আমার বড় ইচ্ছা হয়, আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই … ”
এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ছিলেন সৈনিকদের নেতা এবং তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজয়ের পথে। মুহাম্মদ (ﷺ) এর নাম, এই উম্মতের প্রাণ এবং আশা।
তাদের মেজাজ বিগড়ে গেছে, দেশে দেশে হাজারে হাজারে যুবকদের দেখে এবং যুবকদের মাঝে ইসলামের রাসূলের দেখানো হেদায়াতের প্রতি আঁকড়ে ধরার প্রবণতা দেখে।
অথচ তারা তাদের বিষ ছড়িয়ে দিয়েছিল যুবকদের নীতি নৈতিকতা ধ্বংস করার জন্যে, মুসলিম সমাজের শত বছরের লালিত নীতি-নৈতিকতা ধ্বংস করার জন্যে তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে স্যাটেলাইট চ্যানেল, অশ্লীল নাচ-গান-সিনেমার প্রচার প্রসারের জন্যে।
তোদের জন্য দুর্ভোগ, তোদের প্রতি অভিশাপ!
ওরা কি শুনেনি?
“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” (নূরঃ ১৯)
আল্লাহর শপথ ! তাদের মেজাজ খিচড়ে গেছে কারণ তাদের নিজেদের দেশে পর্যন্ত সেই লোকেদের সংখ্যা বাড়ছে, যারা শশ্রুমণ্ডিত, যাদের অন্তর বিশুদ্ধ। আজ তাদের নিজেদের দেশে বাড়ছে শশ্রুমণ্ডিত, হিজাবী নারী-পুরুষের সংখ্যা, যারা প্রতি পদে পদে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর পদাংক অনুসরণ করে চলছে।
তারা ক্ষেপে গেছে কারণ, অনেক ড্যানিশ লোক ইসলাম গ্রহণ করছে এবং মুহাম্মদ (ﷺ) -কে নিজেদের রাসূল বলে চিনতে পেরেছে। য়াজ সারা বিশ্বে এটা স্বীকৃত যে, ইসলাম এই পৃথিবীর দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্ম।
ইসলাম এই দুনিয়ার দ্রুততম বর্ধনশীল দ্বীন! আর এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! কারণ এটাই মানুষের স্বাভাবিক ফিতরাহ (প্রকৃতি) যার উপর আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন।
তারা পাগল হয়ে গিয়েছে, যখন তারা দেখেছে তাদের আগুনঝরা প্রচারণার পরেও মুসলিম নারীরা নিজেদের স্বকীয়তা ধরে রেখেছে, বিশেষ করে এই দেশে আমাদের মহিলা ও মেয়েরা তাদের কদম শক্ত করেছে, পরভ্রষ্টতাকে প্রত্যাখান করছে।
তাদের ক্রোধ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ তাদের দেশে দেশে পর্যন্ত হিজাবী নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের চোখে এই দৃশ্য এতই ভয়াবহ আকারে ধরা পড়েছে যে তারা আইন করে হলেও হিজাবের বিরুদ্ধে নেমেছে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম এরা হিজাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আরে, এই কুফফাররা কি জানে না? তাদের দেশীয় দোসর-দালালেরা কি জানেনা, এই নারীরা কাদের উত্তরসুরী ?
এরা তো খাদিজা, আয়িশা, সুমাইয়া, উম্মে ইমারাহ (রাঃ) দের সন্তান সন্ততি। আরে, এই কুফফারেরা কি ইসলামের ইতিহাস পড়ে দেখেনি? এই সেই জাতি যার নারীরা পুরুষদের আগে জীবন বাজি রেখেছে। ইসলামের প্রথম শহীদ একজন নারী! এই দ্বীনের নারীরা তাদের পুরুষদের আগে জীবন দিয়ে দিত!
উহুদ যুদ্ধের দিনে, মুসলিমদের অবস্থা যখন প্রতিকুলে, অনেকে ময়দান ত্যাগ করলো। একদল ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলো মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সাথে। তাদের সাথে ছিলেন একজন শীর্ণকায় মহিলা!
হে পুরুষগণ, একজন নারীর কদম অবিচল ছিলো।
নবী (ﷺ) বললেন, “হে লোকেরা! আমি ডানে তাকালাম, দেখি উম্মে ইমারাহ আমাকে রক্ষা করছে, আমি বায়ে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম উম্মে ইমারাহ আমাকে রক্ষা করছে।”
নবী (ﷺ) তাঁকে বললেন, “হে উম্মে ইমারাহ, তুমি যা সহ্য করেছ; আজকের দিনে আর কে তা সহ্য করেছে? হে উম্মে ইমারাহ, আমার কাছে কিছু চাও! বলো তোমার কি ইচ্ছা!”
তিনি বললেন, “আমরা জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই ইয়া রাসুলুল্লাহ!
“আমরা জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই ইয়া রাসুলুল্লাহ!
“আমরা জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই ইয়া রাসুলুল্লাহ!”
তিনি তাঁকে বললেন, “তুমি জান্নাতে আমার সাথীদের মাঝে থাকবে।”
যদি ইতিহাস আওস ও খাযরাজ এই দুটি গোত্রের (ভালো কাজে প্রতিযোগিতার কথা) জেনে থাকে, তাহলে যেভাবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে সেভাবে আরো আওস ও খাযরাজদের আগমন বাকি আছে। আর ষড়যন্ত্রের পরেও তাদের উত্থান হবে, গায়েবের ভাণ্ডারের রক্ষাকর্তার হাতেই এই সুপ্ত উত্থান লুকানো আছে।
একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত শয়তানী ড্যানিশ পত্রিকা এতটাই ধৃষ্টতা দেখিয়েছে যে, তারা আদমের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে নিয়ে নিকৃষ্টতম কার্টুন ও ব্যঙ্গচিত্র অংকন করেছে। একটি ছবিতে তারা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর ছবি অংকন করেছে, তাতে তাঁর মাথার পাগড়িতে বোমা অংকন করেছে, আরেকটি ছবিতে দেখানো হয়েছে তিনি ছুরি হাতে মহিলাদের তাড়া করছেন,
আরেকটি ছবিতে দেখানো হয়েছে তিনি খুবই স্বল্প বসনা নারীদের তাড়া করছেন, আরেকটি ছবিতে তিনি তাঁর অনুসারীদের বলছেন, “আমাদের আর বেশি কুমারী নারী নেই।” (না’উযুবিল্লাহ)
তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের সীমানা এতটাই বেড়ে গেছে যে, তারা একটি ছবিতে অংকন করেছে তিনি সিজদারত আছেন আর তাঁর পিঠের উপর একটি কুকুর চড়ে বসে আছে। (না’উযুবিল্লাহ)
এমনকি তাঁর পেটের ছবি পর্যন্ত এঁকেছে, তাঁর তলপেটের ছবি ছিলো খোলা ও অশ্লীলতাপূর্ণ। আর সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে তারা, সীমা ছাড়িয়েছে যখন তাদের দেশে যখন মুসলিমেরা প্রতিবাদ জানালো এই ছবিগুলো প্রত্যাহারের ও ক্ষমা প্রার্থনার, তখন তারা আরো বেশি করে এই সীমা ছাড়ানো বেয়াদবি শুরু করল। তারা উন্মুক্ত কার্টুন আঁকার প্রতিযোগিতা ঘোষণা করলো। তারা হাসি, বিদ্রুপ, বেইজ্জতি সব করছে আর আমাদের উচিত তাদের সাথে কিভাবে সহানূভূতি উদারতা দেখানো উচিত এগুলো নিয়ে আলোচনা করা??
তারা মাত্রা ছাড়ানো ঠাট্টা মশকরা, বেইজ্জতি করছে একটি সমগ্র জাতির অনুভূতিকে আর আমাদের তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো উচিত??
আল্লাহ কি একথা বলেননি,
“মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সাথীরা কাফেরদের প্রতি কঠোর।” (ফাতাহঃ ২৯)
ওয়াল্লাহি! আমাদের মধ্যে কোনই কল্যাণ নেই! আমাদের কোনও মূল্য নেই, যদি এই ঘটনাগুলো এভাবেই চুপচাপ শেষ হয়ে যায়।
যে জাতি তার নেতার সম্মান রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি কিভাবে তার শত্রুদের সাথে বিজয় লাভ পারে?
আমাদের নপুংসকতার জন্য মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদুন, আর আল্লাহর কাছে দুয়া করুন যেন আমাদের সন্তানদের এরকম অক্ষম করে না বানান। আমরা যেদিন থেকে এই ব্যভিচারী জাতিগুলোর দুধ পান করা শিখেছি সেদিন থেকেই তারা আমাদের অসম্মান আর লজ্জা গুলে খাইয়ে দিচ্ছে।
আজকে আমাদের পুরুষদের জন্য মহিলাদের মত বোরখা পরে রাস্তায় চলাচল করাই উত্তম, তবু তাদের অপমানজনক মিথ্যাচার শুনতে চাইনা, তাদের ঘৃণা থেকে উৎসারিত এই কথা কি আমরা বুঝিনা?
তারা বলছে, “আমরা আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার মাধ্যমে আমাদের চিন্তা চেতনার প্রকাশ ঘটাচ্ছি!”
হে মাথামোটা লোকের দল! একবার ভালো করে বুঝুন, কোনওদিন দেখেছেন এই বিজাতিরা (ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশনের নামে) কোন হিন্দু কিংবা ইহূদীদের নিয়ে তামাশা করছে? গরুর পূজারীরা কি আমাদের চেয়ে বেশি সুপুরুষ হয়ে গেলো? কোথায় আমাদের সত্যবাদীরা? কোথায় আমাদের নিজেদের জীবনের চেয়ে বেশি রাসূলকে ভালোবাসার দাবীদাররা? মুসলিম দেশের সরকারগুলোর অবস্থান কোথায়? দেড়শ কোটি মানুষের উম্মাহর অবস্থান কোথায়?
হে আল্লাহর বান্দারা! ন্যায় পরায়ণ মুসলিম উলামাগণ একত্রিত হয়েছেন কারণ নিজের জান-মালের মুক্তিপণের বিনিময়ে হলেও আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর সম্মান রক্ষা করা আবশ্যক এবং যত দিক থেকে তাঁর বিরুদ্ধে যা বলা হবে, সব কিছু প্রতিরোধ করতে হবে।
আর এটা আমাদের উপর তাঁর সর্বনিম্ন হক, যাতে আল্লাহর ইচ্ছানুসারে আমরা তাঁর দ্বীন ও রাসূলের সাহায্য করতে পারি। কিন্তু আমাদের অনেকেই জাহেলিয়াতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ, আর কাপুরুষতায় অতুলনীয়।
তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, শত্রুতা ঘোষণা করেছে সেদিন থেকে, যেদিন তাদের মহিলা কুকুরটি, তাদের নোংরা নাপাক রাণী, যে তার ডায়েরি নিয়ে একটি বইয়ে লিখেছে, “ক্যানসারের ঘা এর মত বর্ধনশীল মুসলিম জাতিকে ডেনমার্ক থেকে প্রতিহত করা জরুরী।”
আল্লাহ যেন ঐ নারীর চেহারা বিকৃত করে দেন! কুফফার মহিলাদের আর কিছু বাকি রইলো না? আর তাদের প্রধানমন্ত্রী, সকল শয়তানীর মাথা! সে বলেছে, “আমাদের মিডিয়ার স্বাধীনতা রয়েছে এর অনূভূতি, মতামত প্রকাশ করার এবং আমরা তো এ অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে পারিনা!”
আমি জানিনা, তার মতামত কি একই রকম হত কিনা, যদি ইহুদীদের অনুভূতিকে এভাবে আক্রমণ করা হত। আর তাদের প্রধান বিচারক একজন মুসলমান কর্তৃক সেই পত্রিকার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাখান করে দিলেন!
হে আল্লাহ বান্দারা! তাই ঘটনা শুধু একটি পত্রিকার ঔদ্ধত্য বেয়াদবীর না, বরং এটা তাদের সারা দেশ, তাদের সব পত্রিকা, রাণী, প্রধানমন্ত্রী সবগুলো। তো এর পর আর কি? আর কিসের জন্য আমরা বসে আছি?
এই পেটমোটা আরব সরকারগুলোর তাদের নেতা ও রাজাদের নিয়ে আত্ম অহংকার, মর্যাদায় আছে। কিন্তু মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে নিয়ে এদের কোন আত্ম-সম্মানবোধ নেই। কি মনে করেন আপনারা? যদি এদের একটা আরব রাজার ছবিও এভাবে আঁকা হত? কিংবা এই নেতাগুলোর ছবি? আমি এর উত্তর আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম, উত্তর সবাই জানেন!
ইয়া উম্মাতি মুহাম্মাদ ! ইয়া উম্মাতি মুহাম্মাদ ! ইয়া উম্মাহ ! আদমের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা !
তোমাদের নবীর ইজ্জতে টান দেয়া হয়েছে ! আর তোমরা করছোটা কি ? তোমরা কি দুধ খাওয়া ছেড়ে দিবে? নিডো, ডেনিশ লুপার্কের মাখন? তোমরা কি শুধু এটাই করতে পারো?
তাহলে শোনো, সত্যবাদীদের আবেগেময় গল্প শোনো …
হুদায়বিয়া সন্ধির দিনে, কুরাইশেরা উরওয়াহ বিন মাস’উদকে পাঠালো রাসূল (ﷺ) এর সাথে আলাপ আলোচনা ও বোঝাপড়া করার জন্যে। সে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে যা বলল তা হল, “কুরাইশেরা বাঘের চামড়া পড়ে বসে আছে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর শপথ করে বলেছে যে, তুমি জোর খাটিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না।”
সে নবী (ﷺ) কে আরও ভয় দেখালো, “ওয়াল্লাহি ! একবারের জন্যে কি নিজের অবস্থা চিন্তা করে দেখেছো? আজকে যারা তোমার সাথে আছে এরা যে কালকে তোমাকে ছেড়ে দিবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? তখন তোমার কি হবে চিন্তা করেছো?”
আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাসুল (ﷺ) এর পাশেই ছিলেন, তিনি উত্তর করলেন, “লাতের (মুশরিকদের কল্পিত নারী দেবী) ঝুলন্ত চামড়া চুষতে থাক ! আমরা তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব?” (বুখারী)
সে উরওয়াহ অবাক হয়ে জানতে চাইল, “হে মুহাম্মাদ এই লোকটি কে?” তিনি জবাবে বললেন (আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্যে কুরবান হোক), “সে হচ্ছে আবি কুহাফার পুত্র”,
এই হলেন আস-সিদ্দিক !
এরপর সে পাপাচারী উরওয়াহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাড়ি ধরে টান দেয়ার জন্যে হাত বাড়াল। মুগীরা বিন শুবাহ (রাঃ) তখন পাশে দাঁড়ানো, তিনি আপাদমস্তক লোহার বর্ম পড়ে ছিলেন, কেবল তার দুটি চোখ দেখা যাচ্ছিল।
যখন সে পাপাচারী হাত সামনে বাড়ালো, তখন মুগীরা তরবারীর খাপ দিয়ে হাতে আঘাত করলেন, আর তাকে শুনিয়ে দিলেন, “তোর হাত সামলে রাখ, হে আল্লাহর শত্রু! রাসূলের দাড়ির থেকে তোর হাত সামলে রাখ, নইলে এই হাত আর তোর শরীরে ফেরত যাবে না।”
উরওয়াহ বলল, “আরে মরো তুমি! তোমার এর ক্ষিপ্ত হবার আর রেগে যাবার কারণ কি?” নবী (ﷺ) মুচকি হাসি দিলেন। তখন উরওয়াহ বলেছিল, “হে মুহাম্মাদ, এ আবার কে?”
তিনি উত্তরে বললেন, “সে তোমার আপন ভাইয়ের ছেলে, মুগীরা বিন শুবা।”
কোনও সম্পর্ক নাই! কোন গোত্রপ্রীতি নাই! তৎকালীন আরব সমাজ, যারা একজন লোকের জন্যেও গোত্রে গোত্রে মারামারি-যুদ্ধ করত, সেখানে এ এক অকল্পনীয় ব্যাপার!
তিনি এমন ওযু করে অভ্যস্ত ছিলেন না, যখন সাহাবীরা তাঁর ওযুর গড়িয়ে পড়া পানি ছুঁয়ে নিজেদের শরীরে মাখার জন্য প্রায় ঠেলাঠেলি, মারামারি করার উপক্রম হত না। সেই পানি তারা নিজদের মুখে, শরীরে মাখতেন। তাঁর একটি চুল কিংবা দাড়ি যদি ছিঁড়ে পড়ত, তবে তা মাটিতে পড়ার আগে সাহাবাদের হাতের উপর পড়ত।
হুদায়বিয়ার দিনে বোঝাপড়া করতে এসে উরওয়াহ এই দৃশ্যগুলো দেখে গেল, সে কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে কি বলেছিল? সে বললো, “আমি খসরু (কিসরা) কে তার নিজের প্রাসাদে দেখেছি, আরও দেখেছি সিজার, আর নাজ্জাসীকেও তাদের নিজ নিজ রাজত্বে। ওয়াল্লাহি ! আমি এমন কোন ঘাঁটি দেখিনি, যেমনটা দেখেছি মুহাম্মাদের (ﷺ) সাথীদের মাঝে!”
“আমি এমন একটি জাতিকে তৈরি হতে দেখলাম, যারা কস্মিনকালেও তাকে অমান্য করবেনা। কাজেই এই লোকদের সাথে কি আচরণ করবে আর কি সিদ্ধান্ত নিবে তা তোমরা ভালো করে ভেবে দেখো।”
এই ছিলো তাঁদের আত্মসম্মান ! এই ছিলো তাদের মর্যাদাবোধ ! আর আজকে কোথায় আমাদের আত্মসম্মান? আমরা সেই সুন্নাহ থেকে কত দূরে সরে আছি? আর কোথায় সেই হেদায়াতের পথ?
তাঁর শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ কোথায় করছি আমরা?
শোনো! শোনো ! এবার ভাল করে শুনে রাখো কেন আল্লাহ এই লোকগুলোকেই তাঁর সাথী, সাহাবা হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন।
বলছি শোনো !!
রাসূল (ﷺ) খালিদ আল-হুদালি নামক একজন লোকের কথা শুনলেন, যে মক্কায় বসে নবীকে হত্যা করার জন্যে লোক জমায়েত করছিলো আর সেখানে তাঁবু স্থাপন করেছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যবাদীদের মাঝ থেকে একজন লোক বাছাই করলেন। একজন যোদ্ধা।
“আমার জান আপনার জন্য বাজি রাখলাম ! আপনার আদেশ আমাকে বলুন!” তখন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, “মক্কায় যাও, আর আমার জন্য খালিদ আল-হুদালির মাথা কেটে নিয়ে এসো।”
আমি-আপনি হলে কি করতাম? কি অজুহাত দেখাতাম এই ভয়ানক আদেশ এড়ানোর জন্যে? হ্যাঁ, অজুহাত তিনিও দেখিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি বলেননি, “মাফ করবেন”, তিনি বলেননি, “এই কাজটা আমার জন্যে অনেক কঠিন”, কিংবা “আমার সাথে আরো কয়েকজন লোক দিন।”
এই সত্যবাদী লোকটি যে অজুহাত দেখিয়েছিলেন তা শুনে রাখুন, তিনি বলেছিলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি তো জীবনেও তাকে দেখিনি এবং তাকে তো চিনিও না।” তখন নবীজী (ﷺ) বলেছিলেন, “এই লোকের সনাক্তকরণ চিহ্ন হলো তাকে দেখামাত্রই তোমার প্রচন্ড ক্রোধের উদ্রেক হবে।”
আরবের লোকেরা ছিল জাতিগতভাবে যোদ্ধা, তারা পর্যন্ত বলত, “খালিদ আল-হুদালী এমন এক পুরুষ, যে তার শক্তি আর বীরত্বের কারণে একাই এক হাজার সাধারণ মানুষের সমান।” কিন্তু যাদের অন্তরে বিশ্বাসের শক্তি আছে তারা একমাত্র আল-জাব্বারকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না !
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, “যে জিনিসটাকে সৃষ্টি করা হয়েছে (মাখলুক) তাকে শুধু সেই ভয় করতে পারে যার অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত।”
আর ইবন উনাইস, সেই মুমিন যুবক, আগে বাড়লো, যতক্ষণ না সে মক্কা পৌঁছলো। খালিদ আল-হুদালি মিনাতে একটা ঘাঁটি গেড়ে ছিলো, যেখানে সে তার সস্তা ষড়যন্ত্রে পক্ষে লোকজন জমায়েত করার চেষ্টা করত। আবদুল্লাহ ইবন উনাইস সেই শিবিরে যোগ দেবার ভান করে আস্তানা গাড়লেন, যেমনটা যুদ্ধে হয়ে থাকে। যুদ্ধ হলো কৌশল। খালিদ তাকে একজন জ্ঞানী ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিলো।
খালিদ তাকে ধীরে ধীরে নিজের কাছের লোকদের মাঝে শামিল করে নিলো, আর কিছুদিন পরে খালিদ এবং ইবনে উনাইস শিবিরকে পিছনে ফেলে উপত্যকায় হাঁটা হাঁটি করছিলেন। উনাইস নিজের তরবারী খাপ মুক্ত করে একেবারে লোকটির ঘাড়ে আঘাত করলেন।
এরাই ছিলেন সাহাবী, আল্লাহর নবী (ﷺ) এর সাথী। মিশন সমাপ্ত করে আবদুল্লাহ ইবন উনাইস মদীনায় ফিরে এলেন, কুকুরটার মাথা নিজের হাতে পেশ করলেন।
তাঁর পৌছানোর পূর্বেই নবীজী (ﷺ) এর কাছে ওহীর মাধ্যমে এই সংবাদ এসে পৌঁছেছিল, যে তাঁর সৈনিকটি তাঁর উপর অর্পিত কাজটি সুচারুভাবে সুসম্পন্ন করেছে।
যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে দেখলেন, তিনি বললেন, “হে ঊজ্জ্বল চেহারার অধিকারী, এটা নাও, আমার হাঁটার লাঠিটি সাথে রেখো, এর উপর ভর করে থেকো শেষ বিচারের দিনে, যেন আমি তোমাকে চিনতে পারি আর খুব কম মানুষই লাঠিতে ভর করে থাকবে।”
আবদুল্লাহ ইবন উনাইস মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করেছিলেন, যেন তাঁর কাফনের সাথে লাঠিটিকে আচ্ছাদিত করে দেয়া হয়। একটি প্রমাণ, সাক্ষ্য, যে তিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) কে সাহায্য করেছিলেন।
এইসব গৌরবগাঁথা তাঁরা অংকন করেছিলেন, আর আমাদের কি খবর? এই ধরণের কুফফারদের সাথে তাদের অবস্থান ছিল এরকম, আর আমাদের অবস্থান কি?
আল্লাহ বলেন,
“যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, আল্লাহ সত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।” (ফাতাহঃ ১০)
তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসার যে দাবি করেছিলেন তার প্রমাণ তাঁরা ইতিহাসে স্থাপন করেছেন। আর এজন্যেই এই লোকদের প্রতি আল্লাহও সত্যবাদী ছিলেন। তাদের মাঝেই ছিলেন এমন সব মানুষ যাদের মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিলো।
তাদের মাঝে ছিলেন সেই মানুষ যার সাথে সরাসরি আল্লাহ কথা বলেছেন, তিনি প্রশ্ন করেছেন, “হে আমার বান্দা, ইচ্ছা প্রকাশ করো!”
“আমার ইচ্ছা আমাকে দুনিয়াতে ফেরত পাঠানো হোক , আর আমি আল্লাহর রাস্তায় আবার শহীদ হই।”
আর তাই আল্লাহ তাঁর প্রতি উত্তর করলেন, “তাদের জন্য আমি লিখে দিয়েছি যে তারা এর প্রতি আর ফিরে আসবে না, কিন্তু তোমাদের প্রতি আমি আমার সন্তুষ্টি স্থির করেছি এবং তোমাদের প্রতি আমি কখনো অসন্তুষ্ট হবোনা”।
তাদের মাঝেই ছিলেন এমন সব মানুষ; যাদের জন্য বৃষ্টির মত ফেরেশতা নেমে এসেছেন আসমান ও যমীনের মাঝে। আর তাদের মাঝেই ছিলেন এমন সব মানুষ যাকে আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন, “আল্লাহ আমাকে বলেছেন যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন এবং আমাকেও আদেশ করেছেন তোমাকে ভালোবাসতে।”
এবং জিবরাইল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাদিজা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) সম্পর্কে জানিয়ে দিলেন, “তাঁর প্রতি সালাম পৌঁছে দিন, তাঁর রবের (আল্লাহর) পক্ষ হতে এবং আমার পক্ষ হতে এবং আরও সুসংবাদ দিন জান্নাতে তাঁর জন্য নির্মিত প্রাসাদের, যা নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে কোন হৈচৈ কিংবা শোরগোল, শঠতা নেই।”
এরাই কি সেইসব মানুষ নয় যাদের জন্য আল্লাহ বলেছেন,
“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত নহরসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হলো মহাসফলতা।” (তাওবাহঃ ১০০)
কুফফারদের মধ্যে একটা লোক ঠিকই বলেছে, “ইসলাম ধর্ম হিসেবে টিকে থাকবে, যদি এতে পুরুষ লোক থাকে।”
এবং আল্লাহর শপথ ! লোকটা মিথ্যা বলেনি ! আজকে তারা আমাদের ইসলাম, ক্বুরআন নিয়ে হাসি তামাশা করছে, টয়লেটে কুরআনকে ফ্লাস করছে, টার্গেট প্র্যাকটিস হিসেবে আল কুরআনকে গুলি করছে আর এখন তারা নবীজীকে নিয়ে বিদ্রুপ, বেইজ্জতি করছে।
আর তারাই বলে, “তোমরা কেন সন্ত্রাস সৃষ্টি করো?”
তো তোমরা চাওটা কি? আত্মসমর্পণ করবো আর পরাজিত হবো?!
তাদের আইনে যে কোনও ধর্মকে কটাক্ষ করা নিষেধ, ইসলাম বাদে। আর তারা বলে ইসলাম নাকি এমন লোকদের ধর্ম যাদের সস্তা মন-মানসিকতা (নাউযুবিল্লাহ)। এগুলো বলে তারা আমাদের নবী (ﷺ) কে নির্দেশ করে। আজকে আমাদের মাঝে থেকে কোথায় সেই মুওআজ ও মুয়াজেরা? আজ কোথায় পাবো ইবন উনাইস ও তাঁর মত লোকেদের?
আরও শুনুন, আর নিজেদের পুরুষত্বহীনতার জন্য আচঁল চাপা দিয়ে কাঁদুন।
‘দুরার আল মাকিনাহ’ র লেখক বর্ণনা করেছেন, তৃতীয় খণ্ডে, ঠিক ২০২ নম্বর পাতায়, খ্রিস্টান নাসারাদের মধ্যে একদল উর্ধতন লোক একজন মংগোলীয় রাজার সাথে দেখা করতে এলও, সে রাজা নাসারাদের ধর্ম গ্রহণ করেছিলো। একজন ঊর্ধতন নাসারা আলেম নবী (ﷺ) কে নিয়ে বেয়াদবী শুরু করলো এবং আজে বাজে কথা বলা শুরু করলো। আর সেখানে একটি শিকারি কুকুর বাঁধা ছিল। কুকুরটি বিকট শব্দে ডাকতে লাগল এবং ঐ নাসারা আলেমের প্রতি উন্মত্ত হয়ে পড়লো।
লোকেরা অনেক কষ্টে কুকুরটিকে সেখান থেকে সরালো। তাদের মাঝে একজন বলল, “তুমি মুহাম্মদের নামে যা বললে সে কারণেই এই প্রাণীটি এমন করছে।” কিন্তু নাসারাটি বলল, “না, আসলে কুকুরটাই এমন, সে আমার হাতের লাঠিটি তার দিকে তাক করা দেখে মনে করেছে আমি তাকে মারবো।”
এরপর সে আবার তার বেয়াদবীপূর্ণ কথাবার্তা শুরু করল, একজন মূর্খের মত উচ্চঃস্বরে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাণিটি তার শিকল ছিঁড়ে ফেললো এবং খ্রিস্টান লোকটির ঘাড়ে কামড়ে ধরল, এবং এক কামড়ে তার কণ্ঠনালী আলাদা করে ফেলল। ইতিহাস সাক্ষী, ৪০ হাজার মংগোলীয় সেই ঘটনার পর ইসলাম গ্রহণ করেছে।
একটা কুকুরও উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো আর রেগে গিয়েছিলো, আজ কোথায় আমাদের অনুভূতি? কোথায় আমাদের গোস্বা? কোথায় আমাদের রাগ?
গাছপালা লতাপাতা পর্যন্ত তোমার বিরহে ব্যথিত হে আল্লাহর হাবীব, আজ তোমার জন্যে আমাদের দরদ কোথায় হারিয়ে গেলো?
হাসান আল বসরী (রহিমাহুল্লাহ) যখন এই হাদীসটি শুনলেন; যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘যে গাছের গুঁড়ির উপর বসে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) খুতবা দিতেন সেই গাছের গুঁড়িটি আল্লাহর রাসূলের বিরহে ক্রন্দন করত!’’ তিনি (হাসান বসরী) কাঁদতেন আর লোকদের বলতেন, “হে মুসলিম লোকেরা ! বৃক্ষ, পাতা, তরুলতা পর্যন্ত আল্লাহ্’র রাসূলের জন্য বিরহী, দরদী ছিলো।’’
‘‘বৃক্ষ-পাতা-তরুলতা পর্যন্ত আল্লাহর রাসূলের জন্য বিরহী দরদী ছিল, তোমরা কি সেই দরদ অনুভব করো না তাঁর স্মৃতি কাতরতায়?”
রাসূল (ﷺ) তাঁর সাথীদের মাঝে মাঝেই বলতেন, “আমি আমার ভাইদের নিয়ে চিন্তিত।” কাজেই তারা জানতে চাইতেন, “আমরা কি আপনার ভাই না?’’ তিনি তাদেরকে বলতেন, “তোমরা তো আমার সাথী। আমার ভাই তো তারা, যারা আমাকে না দেখেও ঈমান আনবে, বিশ্বাস করবে, অনুসরন করবে।” (মুসনাদে আহমাদ ১২১৬৯)
সেদিন আমরা তাঁকে কি বলবো? যেদিন সব মানুষ জড়ো হবে কাউসারের পানি পান করার জন্য? যখন তিনি বলবেন, “তারা আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করেছে, অমর্যাদা করেছে, আমাকে আহত করেছে, তো তোমরা আমার সম্মান রক্ষা করার জন্য কি করেছিলে?”
হ্যাঁ, আপনাদের জন্যে এটাই সুযোগ যারা চান যে আপনাদের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে সম্মানিত হবেন। এটাই সুযোগ। এই সেই দরজা, খোলা আছে, যারা চান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্যে এগিয়ে যাবেন তাঁরা প্রবেশ করুন এই দরজা দিয়ে।
কোথায় আপনাদের অনুভূতি, কোথায় আপনাদের পৌরুষ, কোথায় আপনাদের আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য ভালোবাসা, আর কোথায় আপনাদের রক্তে নাচন লাগা আত্মসম্মান ?
সারা দুনিয়া তাকিয়ে আছে, অপেক্ষায় আছে কে সেই ব্যক্তি, কেউ কি আছে এই উম্মাহর মধ্যে সিংহপুরুষ যিনি উম্মাহর সম্মান মর্যাদা পুনরুদ্ধার করবেন যেই সম্মান আজকে কুফফাররা তাদের পায়ের নিচে দলছে?
তাঁর কসম করে বলছি, যার দ্বীন ব্যতীত আর কোন সত্য দ্বীন নেই, তাঁর কসম করে বলছি যার বার্তাবাহক মুহাম্মদ (ﷺ), আমরা কোনওদিন সন্তুষ্ট হবো না, কোনওদিন না যতক্ষণ না আপনারা তাদের সাথে সব ধরণের সম্পর্ক, বাণিজ্য বন্ধ করে দিবেন, যতক্ষণ তারা একটা উচিৎ শিক্ষা লাভ করে।
আরে, ভাইয়েরা, এটা হচ্ছে সর্বনিম্ন দায়িত্ব যা আমরা ইবনু আব্দুল্লাহের সম্মানের জন্য করতে পারি, সর্বনিম্ন দায়িত্ব এটা, ঐ সব দূষিত সংবাদপত্রের কোনও ধরণের ক্ষমা প্রার্থনা আমরা গ্রহণ করব না, রোমের কুকুর কিংবা তাদের প্রধান মন্ত্রীর কোন মাফ চাওয়াতেও আমাদের মন গলবে না। আল্লাহ, এদের সব কয়টার উপর তোমার অভিশাপ পড়ুক।
তোমরা আল্লাহর রাসূল কে নিয়ে তামাশা করছো ?
তোদের জন্য দুর্ভোগ, তোদের ধর্মের জন্য দুর্ভোগ, তোদের বিকৃত চক্রান্তের জন্য দুর্ভোগ।
আর যদি তোমরা আমাকে এজন্য গালি দাও, তিরস্কার করো আমি বলছি, আমার নিজের ও আমার পরিবারের সবার জান ও মাল আমি বাজি রাখলাম আল্লাহর রাসূলের জন্য।
আমরা তাকে মান্য করেছি, আমরা তাকে ছাড়া আর কাউকে অনুসরণ করিনি। একটা আলোর রেখা যেভাবে অন্ধকারের বুক চিরে পথ দেখায়, তেমনই একজন পথ নির্দেশক, গাইড ছিলেন তিনি। হে ক্রুশের পূজারীরা, অপেক্ষায় থাক, তোদের আর আমাদের মাঝে ফয়সালা হতে আর অল্প কিছু দিন বাকি মাত্র।
তোমাদের আর আমাদের মাঝে ফয়সালার জন্য কেবল কয়টা দিন সবর করো হে ক্রুশের পূজারীরা। আর আমরা দেখবো, যেভাবে তোমরাও দেখবে কারা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে, আর কারা হেদায়াতের পথ থেকে দুনিয়া ও আখেরাতে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।” (আহযাবঃ ৫৭)
এবং আল্লাহ বলছেন,
“যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।” (কাউসারঃ ০৩)
কাজেই আজকে যারা আল্লাহর সাথে শত্রুতা করছো, আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্বংশ করবেন, তোমাদের কোন চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আল্লাহ কি বলেন নি,
“বিদ্রুপকারীদের জন্যে আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” (হিজরঃ ৯৫)
আর তাই, তাঁর বান্দাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, কিন্তু আল্লাহ চান যারা আল্লাহর রাসূলের প্রতি ভালোবাসার দাবি করে তারা তা প্রমাণ করে দেখাক।
আর আমরা যা করছি তার জন্য আমাদের দূর্ভোগ ছাড়া আর কি আছে? আমাদের নবীর সম্মান রক্ষা করা আমাদের নিকট সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি আমাদের ভবিষ্যত।
কারণ, তিনি আমাদের দুনিয়া আর আখেরাতে শাফাআত। আজকে আমরা চিনে নিলাম কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী! আজকে আমরা চিনে নিলাম কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী !
হে আমাদের নয়নের মণি, আমরা তো তোমাকে দেখিনি, কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী, তিনি জানেন আমাদের অন্তর তোমার সাথে মিলিত হবার জন্য কিভাবে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। এবং আল্লাহর শপথ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই, তুমি আমাদের নিকট আমাদের নিজেদের থেকেও বেশি প্রিয়, আমাদের বাপ-মা, পরিবার এবং বাকি সারা দুনিয়ার মানুষের থেকেও।
যারা আজকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মানে ত্যাগ স্বীকারে পিছনে পড়ে আছেন আর দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছেন, যারা আল্লাহর নবীর সম্মান রক্ষা করতে পারেনা, তাদের নিজেদের জন্য কোন সম্মান নেই, যারা তোমার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেনা তাদের মধ্যে কারো ইজ্জত নেই।
আমাদের অন্তরে আর কারো প্রতি ভালোবাসা জেগে উঠার আগেই এই অন্তরকে আমরা বন্ধ করে দিয়েছি, অন্য কেউ ছিনিয়ে নেয়ার আগেই আমাদের অন্তরকে আপনার তরে বিলিয়ে দিয়েছি। আর যখন আমাদের গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়লো, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো কারা ভান করছে আর কারা তোমার জন্যে কাঁদছে।
সবচেয়ে প্রিয় সেই নাম যে নামে আমাদের ডাক পড়বে হাশরের ময়দানে, যখন বলা হবে, “ইয়া উম্মাতি মুহাম্মাদ!”
আর যখন এটা বলা হবে, আমরাও বলবো, “লাব্বাইক ! লাব্বাইক ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ) !”
আর কথা হচ্ছে, তারা তা দেখবে, তা নয় যা তারা শুনছে, কারণ যুবক কিংবা বৃদ্ধ, নারী কিংবা শিশু সবাই তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে প্রতিশোধের জন্য তোমার তরে, তোমার সম্মানে আর সেই ভূমিতে যেখানে তোমার পায়ের ধূলি উড়েছে।
আর তারা জেনে রাখুক, তুমি রেখে গেছ পুরুষদের, তারা অচিরেই জানতে পারবে কিভাবে তাদের পাল্টা জবাব দেয়া হবে। আমাদের তাদের কোন দরকার নেই, তাদের গরুর দরকার নেই, দুধের দরকার নেই, মাখনের দরকার নেই। আমাদের কাছেই তাদের দরকার আছে। ওদের সাথে বারা‘আহ ঘোষণা করুণ, বয়কট করুণ …
হে আল্লাহ্, আপনি ওদের নির্বংশ করুন! এবং এই অবরোধ-বারা‘আহ-বয়কট শুধু এক বা একাধিক দিনের জন্যে নয় বরং যতদিন আমরা বেঁচে থাকি ততদিনের জন্যে হয়।
আজ আমাদের জিভগুলো সে কথাই বলছে যা বলেছিলেন ইবরাহীম (আলাইহি সালাম) এবং তাঁর সাথে তাঁর জাতি মিল্লাতে ইব্রাহীম,
“তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করো, তার সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা বিদ্যমান থাকবে।” (মুমতাহিনাঃ ০৪)
হে মুসলিম ব্যবসায়ীরা, আমাদের সাথে প্রতারণা করো না !
হে মুসলিম সাংবাদিকেরা, আমাদের সাথে প্রতারণা করো না !
হে মুসলিম টিভি চ্যানেলের প্রচারকেরা, আমাদের সাথে প্রতারণা করো না !
হে দেশের শাসক ও আমলা-প্রভাবশালীগণ,
হে হারামাইনের সেবকেরা ! উম্মতে মোহাম্মাদীর সাথে ধোঁকাবাজি করো না !
আজ আমাদের বায়াত হোক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি, আসুন আজ আমরা নিজেদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রুদের থেকে খারিজ করে নিই।
হে আল্লাহর বান্দারা ! আল্লাহ আমাদের একটা কাজের আদেশ করেছেন, আর এই কাজটা আগে তিনি নিজে করেছেন এরপর যে ফেরেশতারা সর্বদা তাঁর প্রশংসা করে তারাও করেছে, আর সে কাজটা কি?
আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাম প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ করো।” (আহযাবঃ ৫৬)
ইয়া আল্লাহ ! আপনার বান্দা ও হাবিব মুহাম্মাদ এর উপর দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন, তাঁর পরিবারের উপর ও তাঁর সাথীদের উপর।
ইয়া আল্লাহ ! আপনি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে সর্বোত্তমভাবে পুরষ্কৃত করুন, যা আপনি কোন জাতির পক্ষে তাদের নবীকে দিয়ে থাকেন।
ইয়া আল্লাহ ! আমাদের তাঁর দর্শন লাভ হতে বঞ্চিত করবেন না, তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ হতে ও তাঁর দাওয়াহ প্রচার হতে বঞ্চিত করবেন না।
হে আল্লাহ ! আমাদেরকে হাউসে কাউসারের কাছে পৌঁছিয়ে দিন, আর তাঁর হাত থেকে পানি পান করার সুযোগ দিন, আর আমাদের ও তাঁর মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করবেন না যতক্ষণ না আমরা চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছে যাই।
হে আল্লাহ ! আপনার দীন, আপনার কিতাব, সুন্নাতে রাসূল ও আপনার বিশ্বাসী বান্দাদের সাহায্য করুন।
হে আল্লাহ ! যে আমাদের নবীর প্রতি বেয়াদবী করেছে, মুখের দ্বারা, কথার দ্বারা, ছবির দ্বারা …
হে আল্লাহ ! তাদের জিহ্বাগুলো অচল করে দিন, প্যারালাইজ করে দিন আর তাকে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত বানিয়ে রাখুন।
সময় এসে গেছে, সময় এসে গেছে, আল্লাহর কারণে আর আমরা পরোয়া করি না কোনও নিন্দুকের নিন্দার। সময় এসে গেছে , আমরা আর ভয় করি না আল্লাহর কারণে কোন নিন্দুকের নিন্দার।
হে আল্লাহ ! আপনার পথে মুজাহিদিনদের বিজয় দান করুন, হে আল্লাহ ! যারা আপনার রাস্তায় লড়াই করছে আপনার দ্বীনের মর্যাদা আরও উঁচু করার জন্য তাদের বিজয়ী করুন।
হে আল্লাহ ! আমাদের বিজয় দান করুন ইরাকে, ফিলিস্তিনে, চেচনিয়ায়, কাশ্মীরে, আফগানিস্তানে, সুদানে, উগাণ্ডায় এবং বাকি সব জায়গায়।
হে আল্লাহ ! আমাদের কারাবন্দীদের মুক্তি দান করুন এবং আমাদের বাঁধন খুলে দিন, হে মালিকুল মুলক …
‘‘হে আল্লাহর বান্দারা ! আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।” (নাহলঃ ৯০)
“তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, আর অকৃতজ্ঞ হয়োনা।” (বাক্বারাহঃ ১৫২)
আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুন যাতে তিনি তা আরো বৃদ্ধি করে দেন, আর যাবতীয় বিষয়াদির থেকে আল্লাহর স্মরণ উত্তম।
____________________________________
স্থানঃ সৌদি আরব (২০০৫ খ্রীস্টাব্দ)
অনুবাদ: সরল পথ
Posted on: Friday, 18 May 2012