মান্নতের বিষয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা যা এক্ষেত্রে ফয়সালাকুন এবং যে সম্পর্কে শুধু আম লোকেরাই নয় অনেক লেখা-পড়া জানা মানুষও গাফেল তা এই যে, বাস্তবে কোনো কাজ হওয়া না-হওয়ায় নযর-মান্নতের কোনো প্রভাব নেই এবং এর দ্বারা তাকদীরের লেখাও পরিবর্তন হয় না। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মশহুর হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
لا تنذروا، فإنه النذر لا يغني من القدر شيئا، وإنما يستخرج به من البخيل.
মান্নত করো না। কারণ তাকদীরের লিখনে মান্নত কোনো কাজেই আসে না। এর দ্বারা তো শুধু বখীলের কাছ থেকে (সম্পদ) বের করা হয়। -মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৯৭
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘মান্নত মানার নিষিদ্ধতা এই বিশ্বাসের কারণে যে, তা তাকদীরের কোনো লিখন খণ্ডন করে। কারণ মানুষের রীতি ছিল, তারা তাদের হাজত পূরণ ও বিপদমুক্তির জন্য মান্নত করত। আর এ হচ্ছে কৃপণ লোকদের স্বভাব। এ কারণে এতে বাধা দেওয়া হয়েছে। দানশীল মানুষ তো সরাসরি সদকা করে থাকে। সুতরাং উদ্দেশ্যে হচ্ছে মান্নত মানা যেতে পারে তবে ঐভাবে নয়, ইখলাসের সাথে। (হাশিয়া মিশকাত)
হাদীসে আছে, সদাকার দ্বারা বিপদ দূর হয়, কিন্তু মান্নতে আছে এক ধরনের ‘বাণিজ্য।’ কাজ হলে সদকা দিব, না হলে দিব না। এ মানসিকতা গ্রহণযোগ্য নয়। যাইহোক, মূলকথা এই যে, আল্লাহর জন্য যে মান্নত মানা হয় তার দ্বারাও তাকদীরের ফয়সালা পরিবর্তন হয় না। এ থেকেই বুঝুন, যেসকল মান্নত বুযুর্গদের নামে মানা হয় তার দ্বারা তাকদীরের ফায়সালা কীভাবে বদলাতে পারে? কিন্তু বাস্তবে এই হয় যে, মান্নত মানার পর যদি কাজ না হয় তাহলে লোকেরা তাকদীরের সামনে আত্মসমর্পণ করে বলে, ‘কী আর করা, তাকদীরে এ-ই ছিল।’ আর যদি কাজ হয়ে যায় তাহলে একে তাকদীরের ফয়সালা মনে করে না। বুযুর্গদের তসররুফ-কর্ম মনে করে আর বলে, দেখ, অমুক পীরের নামে মান্নত করেছিলাম। উনি আমাদের (নাউযুবিল্লাহ) এ জিনিস দান করেছেন! এ-ই হচ্ছে ঐ শিকড়, যা থেকে বের হয় ভ্রান্ত বিশ্বাসের অঙ্কুর এবং যার দ্বারা শয়তান মানুষকে খোদা তাআলা থেকে দূরে সরিয়ে শয়তানের পুজারী বানায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরের হাদীসে এই মূলেরই উৎপাটন করেছেন যে, খোদার নামে মান্নত মানলেও তাকদীর টলে না। তাহলে তাঁর অক্ষম বান্দাদের নামে যে মান্নত মানা হয় তার কথা তো বলাই বাহুল্য।
(‘ইখতিলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুসতাকীম’ থেকে।
অনুবাদে : আবু মুহাম্মাদ)
সংগ্রহ:- মাসিক আল কাউসার