দলীয় দ্বন্দ্ব থেকে বের হওয়ার সময় কি হয়নি?


বর্তমান বিশ্বে ইসলাম ধ্বংস করার জন্য কী পরিমাণ প্রচেষ্টা চলছে, তার সামান্য অনুভূতিও যদি আমাদের থাকত তাহলে দলীয় ও গোষ্ঠীগত মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে আমাদের নজর থাকত ইসলাম প্রতিষ্ঠার দিকে। মতভেদপূর্ণ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে যেভাবে আমাদের মুসলিমদের একদল অপরদলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি, তার কিয়দংশ শক্তিও যদি কাফিরদের বিরুদ্ধে ব্যয় করতাম তাহলে আজ গোলামির জিঞ্জির সামান্য হলেও খুলতে সক্ষম হতাম। কিন্তু প্রাণের সঞ্চার হবে কি কোনোদিন মৃত এ জনপদে? বোধদয় ঘটবে কি কভু এ হতভাগা জাতির? নাকি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হিসেবে আমাদের ভাগ্যেও তেমনই ঘটবে, যেমনটি ঘটেছিল আমাদের পূর্ববর্তী উদাসীন ও দলীয় কোন্দলে দ্বিধাবিভক্ত জাতির ভাগ্যে।


আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ইতিহাসে প্রতিটি নকিব যখনই জাতির এ মহাবিপদের বিষয়ে সতর্ক করেছে, আশু ফিতনার সয়লাবের ব্যাপারে কথা বলেছে তখনই দলীয় কোন্দলে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গ একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দরদী সেসব নকিবদের ওপর। বিভিন্ন ট্যাগে বিতর্কিত করে তাকে হেয় করার হীন চেষ্টা করেছে জাতির সামনে। কখনো ফতোয়া দিয়েছে গোমরাহ, আবার একধাপ এগিয়ে কেউবা লাগিয়েছে কাফিরের ট্যাগ। কিন্তু এসব চেষ্টা-প্রচেষ্টা তাদেরকে ধেয়ে আসা রক্তের সয়লাব থেকে বাঁচাতে পারেনি। সকল দ্বন্দ্ব চিরতরে মিটিয়ে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ইতিহাসের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়ের গভীর পঙ্কে।
সময় এতটাই নাজুক যে, কাফিররা যে মুমিনদের প্রকাশ্য শত্রু, সে কথাটিও আজ সমাজের অনেক আলিম ভুলে বসেছে। শুধু তাই-ই নয়; একশ্রেণির আলিম তো বিষয়টি অস্বীকারের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মুমিনদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ভুলে একশ্রেণির লোক আজ কাফিরদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করছে। তাওহিদ-শিরকের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ইমান-নিফাকের দ্ব্যর্থহীন বৈপরীত্য ছুড়ে ফেলে মানুষ আজ নিমজ্জিত হচ্ছে জাতীয়তাবাদের দুর্গন্ধময় সাগরে। এ নাজুক সময়ে আমাদের করণীয় ছিল কী, আর আমরা করছিটা কী! বড় কষ্ট লাগে!! অনেক আফসোস লাগে!!! আল্লাহ বিশেষ দয়ায় ক্ষমা না করলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।
ইমামুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ.-এর একটি শেষ জীবনের তিক্ত একটি উপলব্ধি বলে কথা শেষ করছি। মুফতি শফি রহ. বলেন, ‘আমি একদিন ফজরের কিছুপূর্বে আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ.-এর কামরায় প্রবেশ করে শুনতে পেলাম, তিনি বারবার এ বাক্যটি আবৃত্তি করছেন- “হায় আফসোস! আমার পুরো জীবন আমি বরবাদ করে।দিলাম!” মুফতি শফি রহ. তাঁকে এ কথাটির ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন- “ভাই, ইসলাম আজ সমগ্র বিশ্বে আক্রমণের লক্ষবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত এসব মৌলিক আক্রমণ প্রতিহত করার পরিবর্তে ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর সমর্থন, তাঁর প্রতি আস্থা স্থাপন ও তাঁর বিরুদ্ধবাদী উলামায়ে কিরামের সমালোচনা ও খণ্ডন নিয়ে ব্যস্ত আছি। তাহলে তুমিই বলো ভাই, এটা জীবন বরবাদের কারণ ছাড়া আর কী হতে পারে?”‘ [মুকাদ্দামাতু নাজির আহমাদ কাশ্মীরি :১/৫; অহদাতুল উম্মাহ, মাওলানা আব্দুল মালেক : পৃ. নং ১৩]


©️ তারেকুজ্জামান হাফি.।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *