ছেলের এসএসসি পরীক্ষা। পড়েনা। সারাদিন মোবাইল গেমস-ফেসবুক-বন্ধু-ঘোরাফেরা, গার্লফ্রেন্ডও থাকতে পারে। বাবা-মা নিশ্চিত জানেন ছেলের ভবিষ্যত অন্ধকার। কি করবে এই প্যারেন্টস? ছেলেকে ঠিকপথে আনার চেষ্টা করবে? নাকি ছেলের মতামতকে রেসপেক্ট করে তাকে সেভাবেই চলতে দেবে?
এই বিশ্বচরাচরের একজন অভিভাবক আছেন। তিনিই স্রষ্টা, তিনিই সত্ত্বাধিকারী, আমরা তার সম্পত্তি, বানানো জিনিস। তিনি মৃত, অজীব পুতুল নন। তিনি জীবিত,চিরঞ্জীব, সব দেখেন-শোনেন-খবর রাখেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। জবাব দেন, সাহায্য করেন। বাবামায়ের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। বেশি কনসার্নড।
তিনি যে কারণেই হোক আমাদের একটা পরীক্ষা নিচ্ছেন। কী কারণ, তা তিনিই জানেন। বাপের সব সিদ্ধান্ত যেমন সন্তান বুঝেনা, তাঁর চিন্তাধারাও মানবজাতির বুঝার ক্ষমতা থাকবেনা স্বাভাবিকভাবেই। পরীক্ষাটা হল, কার কাজটা সবচেয়ে সুন্দর হয়। আহসানু আমালা। কে বাবামায়ের সাথে, স্ত্রীর সাথে, প্রতিবেশীর সাথে, গরীবের সাথে, পিচ্চি ওয়েটারের সাথে, কাজের মেয়ের সাথে, নিজ ওয়াদা-আমানত, মানে নিজের সাথে এবং নিজ মালিক স্রষ্টার সাথে সবচেয়ে সুন্দর আচরণ করে। পরীক্ষার সময়ঃ লাইফটাইম। আর টার্গেট দিয়ে দেয়া। এই সুন্দর ব্যবহারের আচরণের পরীক্ষায় হাইয়েস্ট মার্ক মুহাম্মদ নামক মানুষটার আচরণ। তাঁর আচরণের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা কর সবাই। যত কাছে পৌঁছবে তত মার্কস উঠবে।
তবে শর্ত হল, ১ নং প্রশ্ন সবাইকে উত্তর দিতে হবে পাশ করতে হলে। সেটা হল স্রষ্টার সাথে আচরণ ঠিক রেখে। উনি আমাদের সব দিয়েছেন জীবন-সুস্থতা-বাবামার আদর-এত হাসি আনন্দ। উনার এটা প্রাপ্য যে আমরা তাঁর হক আদায় করি। আর তাঁর প্রথম প্রাপ্য হল তাকে সঠিকভাবে ঠিকরূপে চেনা। তিনি যেমন সেভাবেই তাঁকে চেনা। তাঁর ক্রেডিট অ্ন্য কাউকে, কোন মানুষকে দেয়া এটা তিনি ক্ষমা করেন না। তাঁর দয়া যেমন সবচেয়ে বেশি, অহংকারের একমাত্র যোগ্যও তিনিই। সব আচরণ ভাল হলেও তাঁকে না চিনে অন্যকে উপাসনা করা, মাথা নত করা এই ১ নং প্রশ্নের উত্তর না পেলে পরীক্ষা ফেল। আর ফেল করলে কঠিন তিরস্কার, অসহ্য, নির্মম।
পরীক্ষার হলে যারা উদাসীন, ১ নং উত্তর ভুল লিখছে তাদেরকেও তিনি ছেড়ে দেননা। তাদের কাছেও নিজ লোককে পাঠান ফিরিয়ে আনার জন্য।বড় ভালোবাসেন বলেই। দুনিয়াতে তাঁর নাম রহমান। এমন দয়াময়, যে তাঁকে গোনেনা চেনেনা তাঁকেও দয়া করেন, খাতা কাড়েন না। মৃত্যুর পর তখন মার্কিং হবে নির্মম।
এখানে পরীক্ষক আর পরীক্ষার্থীর মাঝে তৃতীয় এক পক্ষ উপস্থিত। সে অবাধ্য-অভিশপ্ত- দয়াময়ের দয়া অস্বীকারকারী। সে দয়াময়কে চ্যালেঞ্জ করেছে, মানবসন্তানকে আমি পরীক্ষায় পাশ করতে দোব না। আমিও ফেল করেছি, ওদেরও ফেল করাবো। মালিক তাকে অনুমতি দিলেন আমাদের পরীক্ষার জন্যই। সে পরীক্ষার হলে আমাদের ডিস্টার্ব করে। কাউকে ১ নং লিখতে দেবেনা। যারা ১ নং লিখেই ফেলবে, ভুল করিয়ে দেবে। আর যারা ঠিক লিখেছে তারা যেন বাকি প্রশ্নগুলোতে ফেল করে। এই তার মিশন।
প্রত্যেক জাতির জন্য একজন মানুষ এসেছে স্রষ্টার পক্ষ থেকে যিনি পরীক্ষা, প্রশ্নের উত্তর দেখিয়ে দিয়েছেন। বার বার এসেছেন তাঁরা। ঐ অভিশপ্ত বারবার ১ নং এর উত্তর ভুলিয়ে দিয়েছে। এজন্যই ভুল উত্তর হিসেবে বিভিন্ন ধর্ম আমরা পাই। এখানে অন্য ধর্মকে সম্মান-অপমানের কিছু নেই। পরীক্ষার্থীকে তার ভুল উত্তর চিনিয়ে দেয়া হচ্ছে। শেষবার চিনিয়ে দেবার জন্য একজন এসেছিলেন, বড় দরদী, বড় প্রিয়। আর কেউ আসবেন না। উনার অনুসারীরা যাবে। মানুষের দরজায় যেয়ে বলবে, বন্ধু সময় বেশি নেই। কেটে ঠিক করে লেখ। নাহলে বড় বিপদ। সময় শেষে শুরু হবে অনন্ত আগুন। চলো সবাই বাঁচি। ঠিক বাপমায়ের মত, ভালোবেসে, সন্তানের ভবিষ্যতের উৎকণ্ঠা নিয়ে।
আমরা মুসলিমরা অন্য ধর্মকে সম্মান করিনা। অন্য ধর্ম ভুল উত্তর। শয়তানের দেখানো ভুল পথ। স্রষ্টার বিকৃত পরিচয়। আমরা সম্মান করি জাস্ট অন্য ধর্মের অনুসারীদের আবেগটুকুকে। কিন্তু না ফেরালে তো মহাক্ষতি। আহারে আমার ভাই। আগুন-পুঁজ- সর্প-বিছা- উত্তপ্ত পানি। অনন্তকাল।
সব ধর্ম গবেষণা করে সিদ্ধান্ত দেবার প্রয়োজন নেই। অন্য ধর্মগুলো স্রষ্টার সরল পথ, প্রকৃত রূপ থেকে বিচ্যুতি– এ সিদ্ধান্ত স্রষ্টার নিজের। দয়াময় যেহেতু দয়াময়, তাই তিনি একটা স্বরচিত গাইডলাইন পাঠিয়েছেন। শব্দচয়ন, বিষয় নির্বাচন এ পৃথিবীর নয়। ঐশী অনুপ্রেরণায়ও লেখা নয়। সরাসরি ঐশী প্রত্যাদেশ, বিধান। সেখানে উনি নিজের আসল পরিচয় তুলে ধরেছেন। মানুষ ইহকাল ও পরকালে যেভাবে লাইফ লিড করলে সেকুলারলি ও স্পিরিচুয়ালি সবচেয়ে ভালো থাকবে সেই ম্যানুয়াল পাঠিয়েছেন। কারণ তিনি অসাড়, উদাসীন নন। তিনি জীবিত, আমাদের ব্যাপারে কনসার্নড।
সেখানে তিনি বলেছেন–এই ইসলাম আমার কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য। অন্যকোন কিছু আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। পাশ করতে চাইলে এভাবে চলো। আরও বলেছেন এই বই আমার পক্ষ থেকে, এতে কোন সন্দেহ নাই, এটা পথ দেখাবে যারা পাশ করতে চায় তাদের।
এই বই তাঁর রচনা যিনি দৃশ্য-অদৃশ্যের স্রষ্টা, স্থান-কালের স্রষ্টা। তিনি সব জানেন। তিনি বলেছেন কিভাবে তাঁর পাঠানো নির্দেশ, তাঁর পাঠানো পরিচয় বিকৃত হয়েছেঃ হে নবী, আপনি তখন ছিলেননা যখন বনী ইসরাইল আমার গ্রন্থকে বিকৃত করছিল…কতবড় কথা তারা বানিয়েছে যে স্রষ্টা পুত্র জন্ম দিয়েছেন, যে সম্পর্কে তাদের জ্ঞানই নেই…পৌত্তলিকদের কাছে জিজ্ঞেস করুন এই আকাশ-পৃথিবী কে বানিয়েছে?তারা বলবেঃআল্লাহ। তারা তো শুধু বাপদাদারা যে ভুলের উপর ছিল তারই অনুসরণ করে। এরকম আরো বহু কথায় তিনি তুলে ধরেছেন এই বিকৃতির ইতিহাস।
আসলে মুহাম্মদ সাঃ ইসলামের একমাত্র নবী নন, তিনি হলেন ইসলামের শেষ নবী। তাঁর আগে অগণিত পুরুষ পাঠিয়ে প্রত্যেক জাতি-উপজাতিকে সতর্ক করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ইসলামের নবী। মোটকথা ইসলাম হচ্ছে ” স্রষ্টার সঠিক পরিচয় ও ঐ জাতির নবীর জীবনাচার”। তাই প্রত্যেক জাতির নবী শুরুতে যখন এসেছেন তখন সেই ধর্মটা ইসলামই ছিলো। পরে শয়তানের প্ররোচনায় নবীর শিক্ষা ভুলে সেই ইসলামে বিকৃতি প্রবেশ করেছে।
চিল্লার সফরে টাঙ্গাইলের এক রেজিস্ট্রি অফিসে গাশত করছিলাম। একজন হিন্দু সাব-রেজিস্টারকে পেলাম। নরমালি তবলীগের জামাতগুলো অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়না। এজন্য বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত জামাত থাকে। তো আমি দেখলাম কিছু কথা যদি না বলি তো পরকালে যদি মামলা করে দেয়। অল্প কিছু কথা বলার পর উনি আমাদেরকে বললেনঃ দেখেন ভাই, আপনি যা বললেন এগুলো আমি জানি। আসলে আপনারা মুসলিমরা যদি মুসলিমের মত চলতেন তাহলে আমাদেরকে দাওয়াত দেয়া লাগতো না। এই উপমহাদেশে হিন্দু বলে কিছু থাকত না। কিন্তু আপনারাই তো ঠিক নেই। আপনাদের দেখলে মনে হয়, হিন্দু আছি ভাল আছি। আমার এক মুসলিম রুমমেট আছে। আমি পূজা করি ওকে বলি নামাযে যেতে, ও যায়না। ঐদিন আমি বুঝে গেলাম তাবলীগের লোকেরা কেন মুসলিমদের দাওয়াত দেয়াকে অগ্রাধিকার দেয়।
সাহাবীদের দাওয়াত কেমন ছিল অমুসলিমদের প্রতি। “আসলিমু তাসলামু”-ইসলাম গ্রহণ করে ফেলো, ইহকাল-পরকালে নিরাপদ হয়ে যাবে। কিংবা “কুনু মিছলানা”– আমাদের মত হয়ে যাও। এক লাইনে দাওয়াত। কেন তাঁরা ইসলামের পরিচয় দিতে লম্বা বয়ান, বিতর্ক করতেন না? কারণ এই দাওয়াতের আগেই অমুসলিম ইসলাম দেখে ফেলেছে, জেনে গেছে ইসলাম কি জিনিস। তাই বয়ান দিয়ে বুঝানোর দরকার ছিলনা। বিতর্ক করে পরাজিত করার দরকার ছিলনা। তাদের ব্যবহার, লেনদেন, হাসি, অভিবাদন, সামাজিকতা, মেহমানদারি সব কিছুতে বিধর্মীরা ইসলাম চিনে নিত। তাদের দিন দেখে চিনে নিত ইসলামের সূর্য়, রাত দেখলে চিনে নিত ইসলামের চাঁদ। আর ভাবত এরা কেমন মানুষ– এত মায়া, এত আদব, এত প্রেম, এত পবিত্রতা। এরপর সাহাবীরা সংক্ষেপে আহ্বান করতেন– এটা ইসলাম, তোমরাও আসো এর মধ্যে। ব্যস।
আজ আমরা ইসলাম মনে করি শুধু ৫ খুটি– আমার বুকের মাঝে ঈমান, ওরা দেখেনা। মসজিদের ভিতর নামায, ওরা দেখেনা। পেটের ভিতর রোযা, কেউ দেখেনা।মক্কায় হজ, ওরা ঢুকতে পারেনা। যেটা ওরা দেখতো– ব্যবহার, লেনদেন আর সামাজিক ইসলামী রীতি– এগুলো তো ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেছি আমরা কবেই। শুধু ঈমানে আর ইবাদতে ইসলামে। আর লেনদেন,সামাজিকতায় ইহুদী-খ্রিস্টানের স্টাইল। এ এক অদৃশ্য ইসলাম আমরা পালন করি। অথচ ইসলাম দেখে নেয়ার জিনিস, লাইফস্টাইল। দেখানোর জিনিস। কি জবাব দিবেন আপনি আমি আল্লাহর কাছে। ভয় করি সেই দিনকে যেদিন কেউ সাহায্য করতে পারবেনা। এই অদৃশ্য ইসলাম কি যথেষ্ট আমাদের জন্য?
অমুসলিম ভাইদের কাছে সমস্ত অদৃশ্য ইসলামধারীদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাই। আপনারা মাপ করবেন আমাদের। আমরা আপনাদের ইসলাম দেখাতে পারিনি। আমাদের দায়িত্ব পুরা করতে পারিনি।
সবাইকে অনুরোধ করছি অধমের প্রকাশিতব্য “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” বইটা পড়ার জন্য। ওখানে অনেক কিছুরই জবাব পাবেন ইনশাআল্লাহ। আর “ভারতীয় নওমুসলিমদের ঈমানজাগানিয়া সাক্ষাৎকার” বইটাও মুসলিম-অমুসলিম সবারই পড়া দরকার।
আমরা কোন ধর্মের অবমাননা করিনা। কুরআনে নিষেধ।আমার কথাটা লক্ষ্য করুন। “আমরা অন্য ধর্মকে সম্মানও করিনা, অন্য ধর্মকে অবমাননাও করিনা, শুধু আপনাদের আবেগটুকুকে সম্মান করি।”
এখানে কোন কন্ট্রাডিকশন নেই। যেহেতু আপনাদের ধর্মমতের সাথে আমি একমত না, আমি মূর্তিপূজা, যীশুর খোদাত্ব এগুলোকে ঘৃণা করি। কেউ যদি এগুলোকে ঘৃণা না করে সম্মানের চোখে দেখে, সে মুসলিম থাকতে পারবেনা। কিন্তু আমি আপনাদের ধর্মের কোন টিটকারি, ধর্মীয় পুরুষদের চরিত্রহনন, গালি এগুলো দিবোনা। আপনার ধর্মমত আমি সম্মান করিনা কিন্তু আপনার ধর্মকে আমি অবমাননা করিনা, কারণ আপনি কষ্ট পাবেন।
কিন্তু একটা কুকুর-বিড়ালও আগুনে পুড়তে থাকলে তাকে বাঁচানো মানবতার দাবি। সেখানে মানুষ, আমারই অমুসলিম ভাই ১ নং প্রশ্নের ভুল উত্তরের কারণে অনন্তকাল নরকের ৭০ গুণ তেজের আগুনে পুড়বে, এটা আমরা কিভাবে সহ্য করি। অমুসলিম তো আমাদেরই রক্তের ভাই।এক আদমের সন্তান।
এখন বলেন, দাওয়াত কি অপমান, নাকি আকুতি-সম্পর্কের দাবি-শেষ চেষ্টার আবেগ? আমার জবাব শেষ। এটাই সংক্ষিপ্ত। নইলে বুকের যে কষ্টটা, আকুতিটা, ব্যথাটা সেটা লিখতে গেলে ফেবু সইতে পারতোনা, পারবেওনা।
SHAMSUL AREFIN SHAKTI·TUESDAY, AUGUST 1, 2017