ব্রেইনওয়েভস ২

SHAMSUL AREFIN SHAKTI·THURSDAY, OCTOBER 4, 2018

 নিজের জন্য। পরে যাতে সহজে খুঁজে পাই।

১.

কমিউনিটি ক্লিনিক:
বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম প্রশংসনীয় উদ্যোগ এই কমিউনিটি ক্লিনিক। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর মাধ্যমে নির্মিত। গ্রামের কেউ জমি দেবে আর সরকার দুই রুমের একটা বিল্ডিং বানিয়ে দেবে। সরকার নিয়োগ দেবে একজন প্রশিক্ষিত CHCP বা Community Healthcare Provider. সে ২৮ ধরনের ওষুধ গ্রামের লোকজনকে প্রেস্ক্রাইব করতে পারবে। যেমন, জ্বরে প্যারাসিটামল, আমাশায় মেট্রো এই টাইপ। আমার নিজের স্টেশন থেকে (ইউনিয়ন) আরও দশ কিলো দূরে এক কমিউনিটি ক্লিনিকে গেসলাম আজকে কুষ্ঠরোগী খুঁজতে। ইউনিয়নেরও দশ কিলো ভিতরে। এখানকার অধিবাসীদের থেকে সাবসেন্টার ১০ কিলো দূরে, উপজেলা হাসপাতাল ২২ কিলো দূরে। জেলা হাসপাতাল ৪২ কিলো দূরে আর ঢাকা ৩৫০ কিলো দূরে।

এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এনাদের অনেক বড় খিদমত আনজাম দিচ্ছে মাশা আল্লাহ। খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ সরকার বাহাদুরকে। সাধারণ মানুষকে উপকৃত হতে দেখলে ভালো লাগে। নতুন ৫ জন কুষ্ঠরোগী পাওয়া গেল, ফ্রী ওষুধ পাবে। এমনও রোগী আছে যাদের এক জীবন পার হয়ে যাবে, কখনও ঢাকা শহর দেখাও হবে না। এনাদের কাছে গিয়ে সেবা দিতে দেখলেও ভাল লাগে।

বিপরীত চিত্রও আছে। গ্যাসের ওষুধ চাইতে এসেছে। জিগেস করা হল, কী সমস্যা বলেন। আমি ডাক্তার, আমি যদি মনে করি আপনার গ্যাসের সমস্যা তাহলে দেয়া হবে ফ্রী ওষুধ। যার সমস্যা নেই তাকে দিয়ে দিলে, পরে অসুস্থ লোককে কী দেব। গরীব দেশ, সীমিত সম্পদ। মার খাওয়া বাকি থাকল সেদিন। জানা ছিল না তিনি এলাকার নেতা গোছের। সরকারের সেবাদান কার্যক্রম অনেক। দুর্নীতি যদি না থাকত, সেবাটুকু পুরোটা যদি শেষ অব্দি নামত তাহলে পুরো না হলেও দুর্দশা অনেকটাই কমে যেত মনে হয়।

এখন আমি যে ওষুধ চায়, তাকেই দিয়ে দিই। ওষুধও তোমাদের, সরকারও তোমাদের, পিঠটা কিন্তু আমার। মানসম্মান দুএকটা চড়থাপ্পড় খেলে যাবে এত কম না, তবে কী দর্কার। আর এই কমিউনিটি ক্লিনিক যার ব্রেইনচাইল্ড, নোবেল শান্তি পুরস্কার মালালা যদি পায়, সে তো আরও যোগ্য।

২.

পুঁজিবাদের একটা বড় কৌশল হল, যৌনতাকে মানবীয় প্রয়োজন হিসেবে স্বীকার না করা। তাহলে পুঁজিবাদের সুবিধা হল, ব্যাপারটাকে ট্যাবু বানিয়ে ভিতরে ভিতরে ঘুণ ধরানো যায়ঃ
১. বিয়ে পিছিয়ে দেয়া যায়
২. মেয়েদেরকে একটা বয়স পর্যন্ত জব মার্কেটে ধরে রাখা যায়
৩. বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পর্নব্যবসা করা যায়
৪. পতিতালয় ও এসকর্ট ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়
৫. যৌনবাহিত রোগকেন্দ্রিক একটা ব্যবসাও আছে
৬. পুঁজিবাদের ফলে সমাজের ভগ্নদশাকে অস্বীকার করা যায়।
৭. ফ্রীমিক্সিং মানবিক ও জায়েজ করা যায়
৮. নারী শ্রমিক বাড়ানোর ও জব মার্কেটে শ্রমের যোগান বাড়িয়ে পারিশ্রমিক কমাতে মেয়েদের যে টোপগুলো দেয়া হয় সেগুলো সফলভাবে দেয়া যায়, যেমন– নারীমুক্তি, নারীশিক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন।

৩.

আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত। ইগনোর করুন সহ্য না হলে।

১৬-২০ এই বয়সে দুনিয়ার সব মেয়েকে সুন্দর লাগে, সে দেখতে যেমনই হোক (আল্লাহর সৃষ্টি সবাই সুন্দর)। এসময় হরমোনগত কারণে মেয়েদের ত্বকীয়মসৃণতা, টারগার প্রেসারের কারণে একটা এক্স-ফ্যাকটর থাকে যা কমনীয়তা ও ইনোসেন্স বাড়িয়ে তোলে। এই বয়সী প্রত্যেকটা মেয়েকেই এঙ্গেল-সময়-পরিস্থিতিভেদে ব্যাপক রূপবতী ও আকর্ষণীয়া লাগে। যেটা ২২ এর পর কমতে থাকে (সবার না, বেশির ভাগ। কমতে কমতে ২৮-৩০ এ গিয়ে সেই জেল্লা হারিয়ে যায় পুরোটাই। (একটা সময় গবেষণা করতেম এসব নিয়ে, অহন ভালা হয়ে গেসি, বাসায় জানে না)

বর্তমানে চোখের সামনে চারটা কেস নিকটাত্মীয়-বন্ধুদের মধ্যে আছে এমন। মাস্টার্স পাশ-ভাল চাকরিওয়ালা মেয়ে। অনেকে হয়ত সমাজের মানসিকতা, নারী প্রগতির অন্তরায়, হ্যানত্যান বলবেন। কিন্তু অলরেডি এস্টাবলিশড কিছু পরিবর্তনের চেয়ে নন-এস্টাবলিশড কিছু পরিবর্তন করা সহজ।

একজন যুগ্মসচিব আমাদের জেন্ডার ভূমিকার ক্লাস নিয়েছিলেন। প্রচলিত জেন্ডার ভূমিকার ফেমিনিস্ট সংজ্ঞার বাইরে উনি কিছু কথা বলেছিলেন। আমার ভালো লেগেছিল। উনি বলেন: জেন্ডার সমতা, নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়ন, নারীশিক্ষা এসবের ইউরোপীয় ফরমেটই কেন আমাদের নিতে হবে? সুইডেন-আমেরিকার ফরমেট তো আমাদের কালচার-মূল্যবোধ-আবহাওয়া-নৃতত্ত্ব- সমাজমানসের সাথে না-ও মিলতে পারে। সব বিসর্জন দিয়ে যা নেব, তা আমাদের প্রেক্ষিতে বেনিফিট না-ও দিতে পারে। বরং আমরা আমাদের মত করে এগুলো ডিফাইন করব। আমাদের মত করে এগুলো প্রয়োগ করব।

স্যারকে সেদিন বলার সুযোগ পাইনি যে স্যার, ইসলাম ১৪০০ বছর আগে নারী স্বাধীনতা, নারী ক্ষমতায়ন, নারী উন্নয়ন, নারীশিক্ষার যে ফরমেট দিয়ে গেছে, ইউরোপ এখনও নারীকে সেই জমিদারের জীবন দিতে পারেনি। এসবের গল্প নিয়েই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২ আসছে ইনশাআল্লাহ। গতি স্লো। একটু দুআ চাই আপনাদের যাতে আল্লাহ কাজের গতি বাড়িয়ে দেন, সময়ে বারাকাহ দেন। ফেবুতে না, জায়নামাযে।

৪.

যখন ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম, তখন নিজের মধ্যে ও অন্যান্য নেতাকর্মীর মাঝে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করতাম। তখন বুঝতাম না, হয়ত যারা এখনও করে তারাও বুঝে করে না। কিন্তু বিষয়টা সিরিয়াস, কতটা সিরিয়াস এখন বুঝি। আল্লাহ মাফ করুন। আমার এই পোস্ট হয়ত আমার সেই বড়ভাই, সহপাঠী ও ছোটভাইদের নজরে পড়বে। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফীক দিন।

এমনিতেই সেকুলার ছাত্ররাজনীতির সংশ্লিষ্টদের ভিতর ৫ ওয়াক্ত নামাযী খুঁজে পাওয়া দশমিকের পর ষাটটা শূন্যের সম্ভাবনা। তার ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হল ‘আল্লাহ’ শব্দটা উচ্চারণ নিয়ে একধরনের সংকোচ। সভা সেমিনারে বক্তব্য, উৎসবে শুভেচ্ছা, কিংবা লেখনীতে ‘আল্লাহ’ শব্দটা যতটা এড়ানো যায়। অমুসলিম নেতাকর্মীরা যাতে মন খারাপ বা ছোট না করে। ‘আল্লাহ’ শব্দটা নিজেকে আবার সাম্প্রদায়িক করে ফেলে কি না, অমুসলিমরা আবার মন খারাপ করে কি না। এজন্য ‘আল্লাহ’ শব্দের চেয়ে স্রষ্টা/সৃষ্টিকর্তা/ সর্বশক্তিমান/God শব্দটা সেফ। স্রষ্টা আমাদের সহায় হোন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের কবুল করুন। সর্বশক্তিমানের কৃপায় আমরা সফলভাবে সুসম্পন্ন করেছি। May God accept our good deeds.ইত্যাদি। আমি ‘আল্লাহ’ ভেবেই বললাম, হিন্দুরা ত্রিমুখী ‘ব্রহ্মা’ ভেবে নিক, খ্রিস্টান কেউ থাকলে মরণশীল মানব ‘যীশু’কে ভেবে নিক। আমার দুনিয়াও কামিয়াব, আখিরাতও কামিয়াব। অথচ আপনি কালিমা শাহাদাতের সাক্ষ্য দেয়ার দাবি করেন। আপনি একথা স্বীকার করার দাবি করেন যে, যীশু-কৃষ্ণ-ব্রহ্মা এরা কেউ সৃষ্টিকর্তা নয়, স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)। তাহলে আপনি এটা কী বললেন? আল্লাহকে স্রষ্টা সাক্ষ্য না দিয়ে আপনি অস্পষ্ট করে দিলেন ‘আল্লাহ’ শব্দটা লুকিয়ে? নিজের ঈমানকেই, কালিমাকেই লুকিয়ে ফেললেন শব্দের প্যাঁচে?

কুফর আর ঈমানের মাঝে কোন ধোঁয়াশা নেই, ভাই। এমন ধোঁয়াশা সৃষ্টিকারী শব্দ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। যে শব্দ ব্যবহার করে আপনি শব্দটির মধ্যে গুণটির মধ্যে (স্রষ্টা গুণ) আরও কিছু শরীক করে দিলেন, শব্দটির শরীকানা সাব্যস্ত করে দিলেন, শরীক ভাবার সুযোগ করে দিলেন, আল্লাহ অবশ্যই সেসব মিথ্যা স্রষ্টার থেকে মহাপবিত্র। অবিশ্বাসীরা কী ভাববে এজন্য ‘আল্লাহ’ শব্দ ব্যবহারে আপনি লজ্জা পেলেন, সংকোচ অনুভব করলেন। ভাবা যায়? একই সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দাবিও করলাম, আবার মুখে ‘স্রষ্টা’ শব্দে শরীকানার সুযোগ দিলাম এবং ‘আল্লাহ’কে স্বীকৃতি দিতে সংকোচ বোধ করলাম। যত সহজে ‘সৃষ্টিকর্তা’ বলে জেনারেলাইজ করে কাফিরদের মন জয় করে ফেললাম, বিষয়টা কিন্তু অত সহজ না। ঈমান-কুফরের বিষয়, কোন ধোঁয়াশা মনে কিংবা মুখে রাখা যাবে না। কোন কনফিউশন রাখা বা বলা যাবে না। সুষ্পষ্ট শব্দে কালিমা ঘোষণা করার নামই ঈমান, বিপরীতের নাম কুফর। দুয়ের মাঝে কিছু নেই। ঈমানের সাথে জীবনভর আমলের সাথে এক বুঁদ কুফর ‘আখসারীনা আ’মালা’, জীবনের সব আমল নষ্ট করে দেয়, সব। আমি ভাবছি আমি মুসলিম, অথচ আল্লাহর খাতায় আমি কাফির না তো?

সব প্রশ্নে আপোষ চলে, এই ঈমানের প্রশ্নে আপোষের নামও কুফর। বরং আরও খারাপ, মুনাফিক বলা হয় তাকে। কাফিরের চেয়েও শাস্তি বেশি। সুতরাং কোন সংকোচ নয়, স্পষ্ট শব্দে সব জায়গায় বলুন, আমার রব ‘আল্লাহ’। বলুন, সৃষ্টিকর্তা ‘আল্লাহ’। স্পষ্ট করে বলুন। ব্রহ্মা-যীশুর সুযোগই নেই ভাবার, স্রষ্টা একমাত্র ‘আল্লাহ’। সর্বশক্তিমান ‘আল্লাহ’। বলুন, May Allah bless you. কাফির তো এমনিই ধ্বংস, তাদের মন যুগাতে গিয়ে নিজে বরবাদ হবেন না। এমনিতেই নামায পড়ছেন না, মাফ হতেও পারে, সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ‘আল্লাহ’ বলতে লজ্জা পেলে হপে বাইয়া? কবরে প্রশ্ন হবে: মান রব্বুকা? তোমার রব কে? তখন স্রষ্টা, সৃষ্টিকর্তা, God এসব পলিটিক্যাল টার্ম ইউজ করলে খবর আছে। স্পষ্ট বলতে হবে, রাব্বী আল্লাহ। মোচড়ামোচড়ি করলে কী হবে আর ভাবা যায় না। বেঁচে থাকতে ‘আল্লাহ’ বলা অভ্যাস না হলে ঐ ভয়াবহ কন্ডিশনে মুখে আসা টাফ। যেমন মেডিকেলের ভাইভা দিয়েই বুঝে আসে। বলে বলে প্র্যাক্টিস না হলে শাহনাজ ম্যাম, শিবলী স্যারের সামনেই জবানে আসে না। আর মুনকার-নাকীরকে দেখাটাই একটা আযাব। সেখানে জবানে আসার কথা চিন্তাই করা যায় না। সুতরাং সাবধান ভায়েরা আমার।

লাস্টলি, ৫ ওয়াক্ত নামায ছাড়বেন না। রাজনীতি করছেন করেন। নামায হল ঈমানের হেফাজত। আলিমরা বলেন, নামায ত্যাগকারীর কাফির হয়ে মরার সম্ভাবনা আছে। উপরের আলোচনায় তো দেখলেনই কীভাবে ধাপে ধাপে কাফির হবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আল্লাহর নাম নিতেই লজ্জা লাগছিল। এজন্য ৫ ওয়াক্ত নামায ছাড়বেন না। তাহলেই ঈমান নিয়ে কবরে যাবার একমাত্র সম্ভাবনা।

সংগঠনের সাবেক সদস্য হিসেবে কিছু কথা পেশ করলাম। এ কথাও কারো খারাপ লাগলে নিশ্চিতভাবে নিজের ঈমান নিয়ে সন্দিহান হতে পারেন। আমি কোন বিতর্কিত বিষয়ে কথা বলিনি। ইসলামের পয়লা টপিক নিয়ে বলেছি যা পার না হলে ইসলামে আসাই যায় না। নতুন করে কালিমা পড়ার প্রয়োজন হতে পারে। কোন আলিমের শরণাপণ্ন হোন। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।

৫.

আমার এক নাস্তিক বন্ধু ছিল, আরবি নামের। ইন্টার্নশিপে দুজন একসাথে নাইট ডিউটি করছিলাম। আগে কখনো এতক্ষণ কথা হয়নি, হলে থাকতো না। লাইব্রেরিতে পড়ত রাত অব্দি, এরপর বাসায় চলে যেত। ছাএলীগের পয়লা সারির নেতারা সাধারণত লাইব্রেরি কি, কেমন দেখতে, মেডিকেলের বই না গল্পের বই থাকে, এসব খুব একটা জানে না। তাই ওর সাথে আমার পুরো ৫ বছরে হাতে গুনে দেখা হয়েছে। ইন্টার্নির শিশুবিভাগে ঐ রাতে ওর সাথে আমার অনেক কথা হয়। নতুন হুজুর বলে ওর সব জবাব আমার কাছে ছিলো না, আর ও জবাব চেয়ে প্রশ্নগুলো করেওনি। যা হোক যেটা বলার জন্য ওই রাতের কথা পাড়লাম, সেদিন ও আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিল।

– আচ্ছা পৃথিবীর রাজনীতি এখন যেভাবে এগোচ্ছে, তোর কি মনে হয়, সামনে কী কী হতে পারে?
– সামনে কি হবে তা তো বলা যায় না। তবে আমাদের নবীর কিছু ভবিষ্যদ্বাণী আছে, যেগুলো আমরা বিশ্বাস করি। আমিও ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এমনটাই হবে বলে মানি।
– কেমন বল তো শুনি।
আমি ইমাম সাহেবের আগমণ সম্পর্কে যে ক’টা হাদিস জানতাম ওকে বললাম। ও চুপ করে শুনলো, কোন বাধা দেয়া ছাড়াই। তারপর ও বলল,
– আমারও তাই মনে হয়। এই একমেরু বিশ্বরাজনীতি চলবে না। দ্বিমেরু আসবে আবার। নিষ্পেষণ চরমে পৌঁছলে নিষ্পেষিতদের মধ্যে একজন নেতা দাঁড়িয়ে যান, ক্যারিশমাটিক নেতা, যার মুখের কথায় ইতিহাস বদলে যায়।। স্পার্টাকাস থেকে শুরু করে লেনিন, হিটলার, ক্যাস্ট্রো, ম্যান্ডেলা,গান্ধী কিংবা বঙ্গবন্ধু। ইতিহাস এই প্যাটার্নটাই ফলো করে। আমারও মনে হয় সামনে মুসলিমদের একজন নেতা তৈরি হবে। দ্বিমেরু বিশ্বরাজনীতি তৈরি হবে।

জানি না দুআটা করা যায় কি না। মুরতাদদের জন্য দুআ করা নিষেধ জানতাম। আমি দুআ করি আল্লাহ সকল নাস্তিক শাতিম ইসলামবিদ্বেষীকে লম্বা হায়াত দান করুন। শতায়ু হও তোমরা। দেখে যাও সেদিন। যেদিন করজোরে কাঁপতে কাঁপতে তোমাদের আশ্রয়দাতারা ফিরিয়ে দেবে তোমাদেরকে দ্বিতীয় মেরুর হাতে। আমি হয়তো দেখবো না, কিন্তু তোমরা নিজের চোখে সেইদিন নিজের বিচার দেখে যাও। আল্লাহ তোমাদের সুস্থ সবল নীরোগ লম্বা হায়াত দিন।

ক্যাডেট কলেজে আমার সবচে’ প্রিয় শিক্ষক ইতিহাসের জনাব হেদায়েতুন্নবী স্যার বলেছিলেন:
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এই যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।

৬.

কুরবানির ছবি তোলা ও ফেবুতে দেয়া একসময় নিষেধ করতাম এখন আর করিনা। বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রুসেডে এটার একটা ইফেক্ট আছে। যেমন ওরা আমাদের একটা ট্যাগ দিয়ে আমাদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। আমাদের এই আনন্দ, আনন্দ শেয়ার করা, আনন্দ দেখানো প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে। রিয়ারও কিছু দেখি না। কমবেশ ফেবু বন্ধুরা সবাই কুরবানি আদায় করছেন। দাম বলে পার্ট না নিলেই হল। কাল ফেবু ওয়ালে আনন্দ দেখতেই চাই।

৭.

তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। আল্লাহ, রাসূল ও দীনের লাইগ্যা নিজের প্রিয়বস্তু (?) কুরবান করার জন্য পোস্তুত তো?
সূরা তাওবা: আয়াত ২৪

১. জীবন
২. সন্তান
৩. মাতাপিতা
৪. ভাইবেরাদার
৫. ব্যবসা যাতে মন্দার ভয় আছে (জীবিকা)
৬. বাড়িঘর যাতে থাকা পছন্দ করি (গৃহী জীবন)
৭. স্ত্রী
৮. ধনসম্পদ

এ পর্যন্ত এই ৮ টার কোনটা কুরবান করেছি। আর কোন কোনটা করার জন্য তৈরি আছি? নাহলে অপেক্ষা কর আযাবের। কঠিন আযাব। আরাকান, সিরিয়া, ইরাক, পূর্ব তুর্কিস্তান…

৮.

খচখচঃ

এই উম্মাতের কুরআন শেখার বিকল্প নাই। শিখতেই হবে। শুধু তিলওয়াত শেখার কথা বলছি না। কুরআনের আহকামাত, এই কুরআন আমাকে কী বলে, আমার কাছে কী চায়, এটা শেখার কথা বলছি।

দীন সম্পর্কে উদাসীন বৃহত্তর অংশের কথা বাদ দিলাম। আমরা যারা নিজেদের দীনদার মনে করি/দাবি করি, আমরাও কুরআন শেখা বলতে নাজেরা পড়াকেই মনে করি। নিজে বা সন্তানকে এটুকু শিখোবার বন্দোবস্ত করেই আত্মতৃপ্তিতে ভুগি।

অনেকে যারা ব্যাপারটা উপলব্ধি করি, তারা একটা প্লেইন অনুবাদ নিয়ে বসে পড়ি। বা বড়জোর একটা টীকাসহ অনুবাদ কিংবা সংক্ষিপ্ত তাফসীর। কিন্তু এর রিস্ক আছে। নিজের মত করে বুঝার বা আংশিক বুঝার একটা প্রবণতা দেখা যায়।

যেমন, নিজের উদাহরণ দিই। প্রথম পড়ি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের তরজমাটা। এরপর পড়ি তাফসীরে উসমানী। মাআরেফুল কুরআন সংক্ষিপ্তটা কিছু কিছু সূরা জায়গা জায়গা থেকে। রিস্কটা বুঝানোর জন্য বলছি। চোরের হাত কেটে দাও। এই আয়াতটার অর্থ জানাটাই যথেষ্ট না। এসংক্রান্ত হাদিস ও মাসআলাগুলো না জানলে আয়াতকে ভুল বুঝা বা বেশি কঠোর মনে হবার সম্ভাবনা আছে। পরে হিদায়া অনুবাদ পড়ার পর পুরোটা বুঝে এল। দশ দিরহামের কমের জিনিসে কাটা যাবে না, দুর্ভিক্ষের সময় চুরি করলে কাটা যাবে না, অরক্ষিত জিনিস চুরি হলে কাটা যাবেনা, অনেক বস্তু আছে পরিত্যক্ত / মূল্যহীন, বা যা চুরি হয়েছে তাতে চোরের প্রাপ্য থাকলে কাটা হবে না। কিন্তু ঐ সময় দিলে খচ করে উঠেছে, তা করত না যদি কেন আলিমের কাছে তাফসীর বা তরজমা পড়তাম। উনি তরজমার সাথে প্রাসঙ্গিক মাসআলা-হাদিস বলে আয়াতের উদ্দেশ্য-অর্থ ক্লিয়ার করে দিতেন। এতো গেল একটা, এমন আরও আয়াত আছে যা আংশিক বুঝলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। এজন্য আলিমগণ একা একা তাফসীর পড়াকে নিরুৎসাহিত করেন। শুধু তরজমা পড়ার বিপদ আরও বেশি। একা একা না পড়াই উচিত, আমি একমত। নিজেকে দিয়ে বুঝেছি।

কিন্তু কুরআন না শিখেও তো উপায় নেই। আল্লাহর অনেক হুকুম আছে, তাওহীদের অনেক ঐক্যমত বেসিক বিষয় আছে যা এখন সুরেলা ওয়াজ তো দূরে, আম খুতবা বা মজলিসে বয়ানের সুযোগ নেই। অনেক ফরজে আইন- ফরজে কিফায়া হুকুম আছে যার ওয়াজ লেকচারে আলোচনার সুযোগ নেই। এমন অবস্থা যেন সেগুলো কুরআনে নেই-ই। এজন্য শিক্ষিত অংশটাকে অবশ্যই কুরআনমুখী হতে হবে। শতভাগ মানতে না পারলেও জানতে হবে, না মানার আফসোস থাকতে হবে। নয়তো জবাবদিহি আছে। শতভাগ দীন জানতে হলে কুরআন শেখার আর কোন বিকল্প নেই। কেননা দীনের কিছু অংশের জন্য ওয়াজ-নসীহতের পথ বন্ধ।

আবার একলা শেখারও বিপদ আছে। এখন কীভাবে আলিমগণের তত্ত্বাবধানে ব্যাপকভাবে কুরআনের চর্চা করা যায় সেটার ফরমেট বানানো দরকার। অনলাইন-অফলাইনে। Online Islamic Study Panel নামে একটা গ্রুপে ক্ল্যাসিকাল তাফসীর পড়ছি শাইখ Munirul Islam Ibn Jakir হযরতের নিগরানীতে। এমন আরও গ্রুপ হওয়া চাই। আর অফলাইনেও রোজ কিছু সময় মসজিদে কুরআনের হালাকা আয়োজন করতে পারেন।

আরেকটা জিনিস হয় কি না। পা পিছলানোর জায়গা গুলো নিয়ে একটা কিতাব হল। সেটা সবাই তাফসীর পড়ার আগে পড়ে নিলাম। বা তাফসীর পড়ার সাথে কাছে রাখলাম। বা সেই জায়গাগুলোতে নিকটস্থ আলিমের সাহায্য নিলাম। আগেই জানা থাকল, কোথায় কোথায় অবশ্যই আলিমের শরণাপণ্ন হতেই হবে। এমন একটা কিতাব হতে পারে কি না।

৯.

গত কিছুদিন যাবৎ ফেসবুকে শুধু ভাঁড়ামোমূলক পোস্ট দিচ্ছি। বন্ধুরা অনেকেই বিরক্ত হচ্ছেন। কিসু করার নাই ভাইয়া। অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর, ততোধিক শোকে বাঁদর।

কিছু কিছু হাসির মাঝে অসহায়তা লুকিয়ে থাকে। অক্ষমতা ঢাকার চেষ্টা ছুপানো থাকে। লজ্জার মাথাটা গিলে খেয়ে হাসতে হয়। যারা বেশি হাসে তাদের গোপন গভীর ক্ষত থাকে। না বলা যন্ত্রণায় মুখব্যাদানকে আপনারা হাসি দেখেন।

ইদানীং গভীর কিছু ভাবি না। যদি ভাবনার গহীনে ডাক দিয়ে ওঠে নতুন কোন অসহায় টপিক, অক্ষম আমাকে তিরস্কার করে ওঠে নতুন কোন অসহ্য সুন্দর। তাই আর ভাবি না। মরে যাক ভাবনারা, মরে যাই আমরা। সেই ভালো।

১০.

ক্যাডেট কলেজের ফাজিল পোলাপান আমার রসবোধ ছিনিয়ে নিয়েছে। সেখানে খুব সতর্ক হয়ে সবাইকে জোকস করতে হতো। যেকোন জোকস করলে বেরসিক বন্ধুরা অপমান করতে এক সেকেণ্ড দেরি করতো না। ধরেন আপনি জোকস করলেন, ইচ্ছে করে হা হা খ্যা খ্যা করে সবাই মিলে হেসে আপনাকে ডাউন করে দিবে। বা সবাই মিলে ‘অ্যা’ সাউণ্ড করে আপনার ফানি মুডটাই অফ করে দেবে। বজ্জাত ছ্যাড়ারা। এজন্য যেকোন জোকসে হাসি আসেও না ঠিকমত এখন আর।

এই বইটা (হুজুর হয়ে) অস্থির। বিশেষ করে যাদের পরিচয় আছে ক্যারেক্টারগুলোর সাথে। চলচ্চিত্র কল্পনা করে ভয়ংকর মজা পেয়েছি। ওনারা এই হাসি তামাশার ফাঁকে ফাঁকে দীনী নানান বিষয় শিখিয়েছেন। তাওহীদ-শিরক-বিদআত-বর্তমান প্রেক্ষাপট দারুণ। এভাবে প্রতিটি উপলক্ষকে ব্যবহার করুন দীনী চেতনা ছড়িয়ে দিতে। দীনের অবস্থান, সৌন্দর্য্য, বাস্তবভিত্তিকে প্রেজেন্ট করুন সম্ভাব্য সকল উপায়ে। বইটা আমাকে হাসিয়েছে- ভাবিয়েছে-শিখিয়েছে- অনুপ্রাণিত করেছে ভীষণভাবে। হাসিতামাশাকেও দাওয়াহর মাধ্যম বানানো যায়, ধারণাতীত ছিল।

আল্লাহ ওনাদের কবুল করুন। আরও এমন খিদমত উম্মাতের সামনে পেশ করার তাওফীক দিন। আমাদের হায়াতের দ্বারা যেন দীনের ফায়দা হয়, আমাদের মওত দ্বারাও যেন দীনের ফায়দা হয়। অহেতুক হায়াত ও মওত থেকে আল্লাহর পানাহ চাই। আমীন।

১১.

ক.
ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ একজন যুগ্মসচিব সেশন নিচ্ছিলেন। উনি ওনার একটা ট্রেনিং-এর অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিলেন, সিঙ্গাপুরের।

১৯৬৫ এর আগস্টের এক সকাল। আকাশ ভেঙে পড়ল সিঙ্গাপুরের জনগণের মাথায়। অধিবাসীরা জানল, মালয়েশিয়ান ফেডারেশন থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে। বাধ্যতামূলকভাবে স্বাধীন করে দেয়া হয়েছে। প্রধান নেতা লি কুয়ান প্রেস কনফারেন্সে কাঁদতে কাঁদতে বলল: “আজকের এই মুহূর্ত আমার কাছে অসহনীয়। সারাটা জীবন আমি একত্রীকরণের স্বপ্ন দেখেছি। আজ কীভাবে আমি সহ্য করব?”। একটা নগর রাষ্ট্র, ফসলী জমি নাই, খনিজ নাই। কীভাবে রাষ্ট্র চলবে ভেবে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই সিঙ্গাপুর আজ কোথায় চলে গেছে। আমাদের মাত্র ৬ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে। অথচ, আমাদের সবই ছিল।

স্যার বলেন: আমরা এয়ারপোর্টে নামলাম রাত দুটোয়। নেমে একটা ক্যাব নিয়ে হোটেলের দিকে রওনা দিলাম, সাথে গাইড। সিগন্যাল পড়ল। আমাদের ট্যাক্সি দাঁড়াল, কিন্তু কোন গাড়িটাড়ি ক্রস করলো না, খামোখা সিগন্যাল। যখন সবুজ হল, আমাদের ক্যাব ছাড়লো, আমি জিগেস করলাম, তুমি তো না থামলেও পারতে, যেহেতু ডান-বামে কোন গাড়ি ছিলোনা, সোজা চলে যেতে পারতে। ড্রাইভার শোনালো আজব কাহিনী। ওদের দেশে নিয়ম হল, কেউ যদি অটোকন্ট্রোলড সিগনাল না মানে, পুলিশের উপর নির্দেশ সরাসরি গুলি। কেউ জানবে না কোথা থেকে গুলি এলো, কোথায় আছে পুলিশ। আইন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত একজন ড্রাইভারকে গুলি করতে হয়েছে, তাও মরেনি।

খ.
নতুন একটা দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ‘দুর্নীতি’। সিঙ্গাপুর খুব সফলভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর পিছনের ঘটনা হল, লি কুয়ান সরকারি আমলাদের কাছে বেতন স্কেল চেয়েছেন। আমলারা নিজেদের চাহিদা মত বেতন স্কেল করে দিয়েছে।
– এটা হলে তোমাদের মাস চলবে তো? নাকি আরও লাগবে?
– এতেই চলবে।
– এর দ্বিগুণ বেতন দেব তোমাদের। কিন্তু দুর্নীতি পেলে মৃত্যুদণ্ড।

গত ৫৩ বছরে ২/৩ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

গ.
আইনের উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে প্রথমে। আইনের উদ্দেশ্য কি অপরাধীর সাজা? নাকি অপরাধ হতে না দেয়া? অপরাধীর সাজা দিয়ে তো ক্ষতি উঠে আসবে না। খুনীকে ফাঁসি দিয়ে তো নিহতকে বাঁচানো যাবে না। বরং ফাঁসি যেহেতু কাউকে দিতেই হচ্ছে, এমনভাবে দেয়া চাই, যাতে আরও দশটা পটেনশিয়াল খুনী সতর্ক হয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ হল উদ্দেশ্য, অপরাধী নিয়ন্ত্রণ নয়। ব্রিটিশ মনমানস থেকে আমরা আর বেরোতে পারলাম না।
আইন হতে হবে কঠোর। শুনতে যেন কঠোর শোনা যায়, কিছুটা অমানবিকও (!) হওয়া চাই। কেননা শাস্তিটা মানবের হচ্ছে না, হচ্ছে অপরাধী এক পশুর। তাই আইন কখনো মানবিক হবে না, আইন হবে পাশবিক। শুনলে যেন ভয় লাগে, ওরে বাবা। শুনতেই যদি জানের পানি না শুকায়, তাহলে করতেও ডাল-ভাত মনে হবে। আর শুনতেই যদি ভয়ঙ্কর লাগে, তাহলে প্রয়োগও কম করতে হবে। আর আইন যদি হয় দু’পাঁচ বছর বসে বসে খাওয়া, তাহলে তো…

ঘ.
আসল যে কথা বলার জন্য পোস্ট লেখা শুরু করেছিলাম সেটা ভুলে গেছি। পরে মনে পড়লে বলবোনে।

১২. 

বিরক্ত না হয়ে পড়তে থাকুন। নিচে সোনাদানা আছে মে বি।

মুফতি তালহা সাহেব। বয়েসে আমার চেয়ে হয়ত ছোটই হবে, এই পঁচিশ-ছাব্বিশ। আমার সাথে পরিচয় বেশিদিন না, তবে সম্পর্ক অনেকদিনের। আমার শ্বশুরমশাই আরব জামাতের সাথে চিল্লায় ছিলেন আমার মহল্লাতেই, ঐ জামাতে ১ সালের সফরে ছিলেন তিনি। সেই থেকে পরিচয়। যতই তাঁকে নিয়ে ভাবি, অবাক ছাড়া আর কিছু হইনা।

ঐ সফরের পর ৬০ দিনের জামাত নিয়ে উনি চুয়াডাঙ্গা আসেন। একদম গ্রামের আনপড় কিছু মানুষ, তাদের জিম্মাদারি নিয়ে চলতে হয়েছে এক-দুই না ৬০ দিন। এটা যারা তাবলীগে সময় দিয়েছেন, আমীরের দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা বুঝবেন। ২০ জনের ২০ রকম রুচি, এটিটিউড, ইখতিলাফ, ঝগড়া, সমস্যা সব ম্যানেজ করে রাখা, আবার দীন শেখানো, দাওয়াত শেখানো, রুটিন গ্রুপওয়ার্ক করানো সব আঞ্জাম দেয়া চাট্টিখানি কথা না। আমি যেহেতু তখন কাছাকাছি থাকতাম, আমাকে বার বার বলতেন একটু আসতে, সাথীদেরকে একটু বুঝাতে। আমি দুনিয়ার আঠা থেকে ছুটে একদিনই যেতে পেরেছিলাম। কী খুশি তার চোখে মুখে।

পরের সফরে আবার চুয়াডাঙ্গা, আরব জামাত নিয়ে এসেছেন। আমার অবাক হবার পালা এখন। আমাকে ডাকলেন, আমি দুনিয়ার আঠা ছুটিয়ে গা-টা ছিলে হাজির হলেম। গত সফরের ভয়ংকর ৬০ দিনে উনি একটা বিরাট কাজ করে ফেলেছেন, আল্লাহ উনাকে দিয়ে করিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গার ১ নম্বর বয়েজ হাইস্কুলের নাম ভি.জে.স্কুল। সারা চুয়াডাঙ্গার পিএসসি-তে টপ করা ছেলেগুলো এখানে পড়ে। উনি সেই স্কুলের ক্লাস নাইনের এক ছেলেকে পেলেন, যে জেএসসি পর ১ চিল্লা দিয়েছে। এবার মুফতি তালহা ফিকির করা শুরু করলেন। সেই ছেলের রাহবারিতে ভি.জে. স্কুলের ক্লাস নাইনের (বর্তমান টেন) রোল ১ থেকে ২০ ছেলেগুলোর কাছে গেলেন, একদম বন্ধু হয়ে গেলেন। আড্ডা-গল্প-খাওয়াদাওয়া। দীনের দাওয়াত। এই ছেলেগুলো সপ্তাহে একদিন নির্দিষ্ট মসজিদে একত্রিত হয়। এমন একটা জমায়েতে আমি গিয়েছিলাম। তারা এটাও জানে না মুফতি তালহা একজন মুফতি। উনি জানাননি যাতে দূরত্ব না হয়, যেন ওনাকে জাস্ট একজন বড়ভাই-ই মনে করে। আমি গিয়ে আবিষ্কার করলাম—

১. তারা সবাই আগের সপ্তাহে জমায়েত থেকে এই জমায়েত পর্যন্ত ৭ দিনে ৩৫ ওয়াক্ত নামাযই পড়েছে। দুএকজনের দুই-তিন ওয়াক্ত কাজা হয়েছে, তবে কাজাও পড়ে নিয়েছে।

২. সবাই টাখনুর উপর কাপড় পরে। মুফতি সাহেবই নিষেধ করেছে কাটতে, ভাঁজ করে পরে। কাটলে বাবা মায়ের তরফ থেকে প্রতিকূলতা আসতে পারে।

৩. কেউই গান শোনে না। মুফতি সাহেব রিপোর্ট চাইলেন, এই সপ্তাহে কে কোন গুনাহ ছেড়েছো। সবাই এটার কথা কমনলি বলেছে। আরও নানান গুনাহ ছাড়ার কথা বলেছে।

৪. সবাই পরের সপ্তাহে নজরের হিফাজত করবে বলে সংকল্প করল। এবং রিপোর্ট দেবে।

৫. সবাই একজন করে বন্ধুর দায়িত্ব নিল যারা এখানে আগে আসেনি। তাকে আনবে এবং মনিটর করবে তার নামায ইত্যাদি।

৬. এসএসসি পরীক্ষার পর সবাই ১ চিল্লার জন্য বের হবে ইসলামী লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য। এজন্য অধিকাংশই মাটির ব্যাংক কিনেছে এবং রোজকার খরচ, ঈদের সেলামী থেকে টাকা জমাচ্ছে। যারা এখনও করেনি তারাও সংকল্প করেছে। কেউ কেউ গীটার কেনার জন্য টাকা জমাচ্ছিল, সেটা ব্যাংকে দিয়ে দিয়েছে।

৭. সামনের ছুটিতে সবাই ৩ দিনের জন্য জামাতে বের হবে।

৮. দুই সেকশনের ফার্স্টবয়দের উপরেই পুরো মেহনত চালানোর ও পরের সপ্তাহে একত্রিত হবার দায়িত্ব। সেই সাথে নিচের ক্লাসের ১-২০ রোলের উপরে মেহনতের দায়িত্ব। তারা সবাই পড়ার পাশাপাশি এটাকে এক্সট্রা-কারিকুলার হিসেবে নিয়েছে, একটা সাংগঠনিক দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে।

৯. জমায়েত ভাঙ্গার আগে মুফতি সাহেবের শেষ এজেন্ডাঃ ‘যে গুনাহ ছেড়েছি তা আর ধরবো না, আর যা যা আমল শুরু করেছি তার ভেতর কমবেশ হতে পারে’। সবাই সমস্বরে একমত প্রকাশ করল।

আমি মুফতি তালহার এই মেহনতে অভিভূত। এই ছেলেগুলো চুয়াডাঙ্গার সবচেয়ে ক্রিম ছেলে। রোল ১-২০। এরা একদিন দেশের বড় বড় পর্যায়ে যাবে আল্লাহ চাহে তো। এদের মধ্যে দীনের বুঝ, সুন্নাহের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করা কত জরুরী ছিল। আল্লাহ মুফতি সাহেবের ফিকরকে কবুল করেছেন। একজন অস্থানীয় ব্যক্তি যদি এমন সাফল্য পান, আমরা নিজ নিজ এলাকায় মেহনত করে কেন এমন ফল পাবো না।

পরের মাসে ওরা যখন ৩ দিনের জামাতে বের হল, আমি গেলাম। মুফতি তালহাকে ওরা পাগলের মত, বন্ধুর মত ভালোবাসে। যে ছেলেগুলোর দুষ্টুমি-ফাজলামি-টাংকি মারার বয়স তারা আমাকে ঘিরে কী পরিমাণ তৃষ্ণা নিয়ে সাহাবীদের কুরবানি আর বীরত্বের ঘটনাগুলো শুনেছে আমি আপনাদের বুঝাতে পারব না। আমি পুরো একদিন ঘণ্টায় ঘণ্টায় তাদের সাহাবীদের কাহিনী শুনাতে বাধ্য হয়েছি। ঘুমাবে না, গভীর রাত অব্দি শুনবে। আর বাবামায়ের খিদমত আর তাদের দুআ আমাদের জন্য কত জরুরি এটা বুঝালাম। আর পড়াশুনা করতে বললাম, ভালো রেজাল্ট করলে সবাই আমাদের এই কাজের প্রতি আগ্রহী হবে, পরের ব্যাচগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে। তারাও দীনের দিকে ঝুঁকবে। আর রেজাল্ট খারাপ হলে সবাই আমাদের এই কাজকেই দোষ দেবে, পরের ব্যাচও আর আগ্রহী হবে না—এইসব হাবিজাবি বুঝালাম। আমি অফিসের ব্যস্ততায় ফেরত চলে এসেছি দু’দিন থেকে। তাদের চোখে যে আগ্রহে ছেদ পড়ার কষ্ট আমি দেখেছি, তাও কী দিয়ে বুঝাব। আমি অভিভূত।

এখন শোনেন আমি কেন এই কাহিনী শোনালাম। আমার বন্ধুরা তো সবাই তাবলীগের না, অনেকে মারাত্মক বিরোধীও। তাবলীগের ফরমেট বাদ দেন। আমরা সবাই কি পারি না, আমার নিজের একটা সার্কেল বানাতে। আমার আখলাক, আমার আন্তরিকতা দিয়ে সমবয়সী বা জুনিয়র বা নানাবয়েসীদের সমন্বয়ে এমন একটা ১০-২০ জনের দীনী সার্কেল আমার মহল্লায় বানাতে, সেজন্য মেহনত করতে। পারি কি না? কিছু বেতলব, উদাসীন মানুষকে দীনসচেতন করতে? তাবলীগের ফরমেট পছন্দ হয় না, বাদ দেন। নিজ মহল্লায় একটা ফরমেট বানান, যেটা আস্তে আস্তে বাড়বে।

আমার আগের হালাকার আমীর ইঞ্জিনিয়ার ফরীদ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ বলতেন, ‘মারকাজ (কেন্দ্র) আবার কী? দাঈ প্রত্যেকে একেকটা মারকাজ, মানুষ দাঈর মধুতে আকৃষ্ট কয়ে তাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে’। এক সাহাবী নবীজীর দরবারে ছুটে এসেছে, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার কিছু ভালো লাগে না আপনাকে ছাড়া। আপনার দরবারে যতক্ষণ থাকি, আমি আনন্দে থাকি। আর যখন ব্যবসায় বা পরিবারের কাছে যাই আমার প্রাণ মানেনা। আমি ছটফট করি যতক্ষণ না ছুটে এসে আপনাকে একনজর দেখে না নিই। ইয়া রাসূলুল্লাহ, এখন না হয় আমি মন চাইলেই আপনাকে এসে দেখে নিতে পারি। কিন্তু আখিরাতে আপনার জান্নাত হবে কত উঁচু মর্যাদার। আর আমি জান্নাত পাব কি না জানিনা, যদি পাইও তবে কত নিচে পাব কে জানে। আমার ভয় হয় আমি তখন মনে চাইলেই আপনাকে দেখতে পাবো না। তখন আমি কীভাবে সবর করব? নবীজী এই প্রশ্ন শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। আল্লাহ সাথে সাথে আয়াত নাযিল করে বলে দিলেনঃ
“আর যে আল্লাহ ও রাসূলের কথা মেনে নিবে, তারাও নিয়ামত প্রাপ্তদের সাথেই থাকবে অর্থাৎ নবী-সিদ্দিক-শহীদান-সলিহীনদের সাথে”। [তাবারানী আওসাত ও সগীর, রাবীদের মধ্যে সবাই সহীহ, কেবল আব্দুল্লাহ বিন ইমরান ছিকাহ, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, তাফসীরে ইবনে কাসীর]

শুধু আখলাকের দ্বারা এমন পাগল করে দেয়া যায় মানুষকে। আপনার জন্য সবাই পাগল হয়ে থাকবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা দাসদের কিনে কিনে আজাদ করছো ভালো কথা, কিছু উত্তম ব্যবহারের দ্বারা আজাদ লোককে কেন দাস বানাচ্ছো না? ভালো ব্যবহারের দ্বারা সবাই আপনার গোলামে পরিণত হবে। আপনার জন্য পাগল হয়ে যাবে। আল্লাহর জন্য। আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য শত্রুতা- ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। করতে পারিনা সবাই নিজ নিজ মহল্লায়?

যে যেই মানহাজেই থাকি না কেন সমস্যা নাই। একটা পিক দিলাম, দেখেন মিসর থেকে বিতাড়িত ইখওয়ানের সদস্যরা কাফির দেশে গিয়ে কী মেহনতটা করেছে, মাশাআল্লাহ। যদি আপনারা আমার এই বার্তাটা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে পরের পোস্ট/নোটে একটা রাফ কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে পারি। আর যদি এই পোস্টেও ‘তাবলীগ বিদআত, শিরক’— এটা ছাড়া আর কিছুই নজরে না আসে, আর কিছুই নেয়ার মত না পান, কোন উদাহরণই না পান, আর কোন মন্তব্যই করার না পান, তাহলে এ পর্যন্তই থাক। তবে আমি বুঝি এখন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আমাদের দরকার মুফতি তালহার মত ৬০ হাজার মানুষ, প্রতিগ্রামে একজন। নিশ্চয়ই এ দীন বিজয়ী হওয়ার জন্যই এসেছে কনফার্ম। শুধু এটাই দেখার বিষয় যে, এই নিশ্চিত বিজয়ে আমার-আপনার ভূমিকা কতটুকু। আল্লাহ আমাদের হাওয়ারী ও সাহাবীগণের মত আনসারুল্লাহ হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

১৩.

ফোনে প্রথম পরিচয়

– আপনার বইটা দারুণ লেগেছে। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। মাশাআল্লাহ
– আলহামদুলিল্লাহ । আল্লাহ তৌফিক দিয়েছেন।
– তো আপনি দীনের পথে কিভাবে এলেন?
– জি, তাবলীগের মাধ্যমে।
– বুঝতে পেরেছি। তো আপনি কি এখনও তবলীগের চিন্তাভাবনাই লালন করেন?
– জি আলহামদুলিল্লাহ । তবে দৃষ্টিভঙ্গি ও জানার পরিধি আরও প্রসারিত।
– আপনি কি কুরআন ও সুন্নাহকেই দলিল মনে করেন তো, তাই না?
– জি অবশ্যই। কুরআন সুন্নাহর সাথে ইজমা ও কিয়াসও শরীয়তের দলিল।
– দেখেন কুরআনে ৯১ জায়গায় ইজমা কথাটা এসেছে ইউসুফ নবীর ১০ ভাই ইজমা করে তাকে কুয়োয় ফেলে দিয়েছে। তাহলে ইজমা খারাপ বিষয়েও হতে পারে। তাই ইজমা শরীয়তের দলিল না। তবে হাদিসে এসেছে ইজতেহাদ শরীয়তের দলিল। ঠিক হলে ২ সওয়াব, ভুল হলে ১। কিন্তু ইজমা শরীয়তের দলিল না।
– আপনার বোধ হয় একটু ভুল হচ্ছে ‘ইজমা’ শব্দটা নিয়ে। ভিন্ন ভিন্ন আলিমের আলাদা আলাদা ইজতেহাদ যখন কোন ইস্যুতে মিলে যায় তখন সেই সম্মিলিত ইজতেহাদকেই ‘ইজমা’ বলে। আভিধানিক না নিয়ে পরিভাষা হিসেবে বুঝেন। কোন আলিমের একক ইজতেহাদের চেয়ে বহু আলেমের ইজমা আরও শক্তিশালী ও এটাও শরীয়তের দলিল যে বিষয়ে অর্থের অস্পষ্টতা আছে।
– না না, কুরআনে ৯১ জায়গায় ইজমা শব্দটা আছে । এটা খারাপও হয়। এটা দলিল না। আর কিয়াস। কুরআনে এসেছে শয়তান কিয়াস করে আল্লাহকে জবাব দিয়েছে আমি আগুন আর আদম মাটি। এই কিয়াসের শুরু। কিয়াস তো কুফর। কিয়াস কখনোই দলিল না।
– আপনার ইজমা ও কিয়াস বোঝায় ঘাটতি আছে। আরও বুঝার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম।

#ফিলিং_বিদআতী

বিঃদ্রঃ
সালাত, সাওম, যাকাত, মাজহাব, ইজমা, কিয়াস এগুলোর একটা আভিধানিক অর্থ আছে। একটা পরিভাষিক/ব্যবহারিক অর্থ আছে। শব্দগুলো ব্যবহার হয় পারিভাষিক অর্থে, আভিধানিক অর্থে না। ‘অর্থ’ হল ‘মানে’। কিন্তু অর্থনীতি মানে কিন্তু মিনিংবিদ্যা না। এখানে ‘অর্থ’ মানে টাকা। তেমনি ‘ইজমা’ অর্থ ফিকহের পরিভাষায় সম্মিলিত ইজতিহাদ। প্রত্যেক প্রজন্মের ইজমা পরবর্তীদের জন্য দলিল। সাহাবীদের ইজমা, তাবেঈদের ইজমা, এভাবে আলিমদের নানান টপিকে ইজমা আছে। যেগুলো কুরআনের আয়াত ও হাদিসের অর্থকে স্পষ্ট করে। ব্যভিচারের রজমের আয়াত কুরআনে ছিল, স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু রজমের হুকুম বলবৎ আছে। আয়াত উঠিয়ে দেবার পরও এই হুকুম যে বলবৎ আছে এটা সাহাবীদের ইজমা আছে। উমার রা. বিশ রাকাআত তারাবিহর সিদ্ধান্ত দিলেন, সাহাবীরা সবাই মেনে নিলেন, এটাও ইজমা। ইজমা কুরআন ও হাদিসের কোন অর্থকে স্পষ্ট করে। আমি মনের মত অর্থ বানিয়ে নিলে সেটা ইসলাম না। সাহাবীরা কি বুঝেছেন তা থেকে, এটা ইজমার দ্বারা বুঝে আসে। তাই ইজমা শরীয়তের শক্ত দলিল। নয়তো যে যার মত অর্থ করে নিত।

মদ কুরআনে হারাম । কিন্তু কুরআন হাদিসে কোথাও গাঁজা-হিরোইনের কথা আছে? নেই। তার মানে কি গাঁজা-হিরোইন হালাল? কখনোই না। কিভাবে হারাম হল? ফিকহের পরিভাষায় একে বলে ‘ গাঁজাকে মদের উপর কিয়াস করা’। মদের মধ্যে কি আছে যার কারণে আল্লাহ মদ হারাম করলেন? নেশা আর মাতলামি। এখন কিয়ামত পর্যন্ত যত গাছ, পাতা, ওষুধ, ইন্জেকশন, ট্যাবলেট, ড্যান্ডি, সিরাপ-যা কিছু আসবে যার মধ্যে এই দুই জিনিস পাওয়া যাবে সব হারাম। সেগুলোকে মদের উপর কিয়াস করা হবে। মানে কুরআন-হাদিস থেকে কোন হুকুমের রোশনি নিয়ে তা কোন নতুন বস্তুর উপর ফেলে তার হুকুম বের করাকে বলে কিয়াস। অবশ্যই কিয়াস শরীয়তের দলিল। কিয়াসের সু্যোগ আল্লাহ রেখেছেন বলেই ইসলাম সব যুগের সব কালের ধর্ম। চির আধুনিক জীবনবিধান।

আমাদের শায়খরা আমাদের কি শিখায় একদম বেসিক জিনিস তো মাথা দিয়ে চিন্তা করতে হবে। খুঁটিনাটি বাদ দিলাম। যা কিছু তারা বলে সবই গিলে নেয়া আবার কেমন হল? আবার আমরাই যাচাই বাছাইয়ের কথা বলি। এটা আবার কেমন#ডাবল_স্ট্যান্ডার্ড?

১৪.

আলহামদুলিল্লাহ । সংশয়বাদিতা বিষয়ে এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ বইটা পড়লুম। আল্লাহ তাআলা অনুবাদক Abdullah Mojumder সাহেবকে গাইরি হিসাব জাযা দান করুন। ওরা আমাদের বই শেষ পর্যন্ত পড়ার হিম্মতই পায়না। আমরা ওদের ধর্মগ্রন্থগুলো ঠিকই পড়ি। এ বই ওরা হয়ত পড়বে না, পড়লেও ভাববে না, ভাবলেও বুঝবে না। যদি না আল্লাহ হিদায়াত দেন। তবে আলহামদুলিল্লাহ, পড়ার পর আমার ঈমান বেড়ে গেছে, তৃপ্তি পেলাম। আপনেরাও পড়িয়েন। এখনও ছাপা হয়নি। পিডিএফ ঈদের পর পাবেন। কোন ঈদ শিওর না।

খ.
কোটা ইস্যুতে আমি শক্ত অবস্থান ঘোষণা করলাম। কোন পক্ষে তা বললে চাকরি থাকবে না।

গ.
খুব গবুষণা চলছে। ভাবছি এ বছর খালি নোটই প্রসব করব। আপনাদের কার কী নোট লাগবে বইলেন। সব বিষয়েই একটা সবজান্তা মতামত না দিলে মস্তিষ্ক নিশপিশ করে।

ঘ.
বিশ্বকাপ। খেলা না দেখলেও ফিক্সচার নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা করলাম। সৌদি-মিসর-মরক্কো-তিউনিসিয়া-সেনেগাল খেলছে। ইরানও খেলছে। ইসরাইল কিন্তুক কির্কেট-ফুটবল কিসুই খেলে না। সবখানে ধর্ম টেনে আনবেন না। এমনি মনে হল।

১৫.

ক.
গেদাবাচ্চাদের জন্য কিছু দীনী কাজ হওয়া দরকার। এইজগ্রুপ ভাগ করে কাজ করা যায়।
৩-৫ বছর: কিছু কমিকস যা মায়েরা পড়ে শোনাবে/ ভিডিও জাতীয় কিছু
৫-১০ বছর : কমিকস, আকীদা সিরিজ, হাদিস সংকলন, সীরাত ও হায়াতে সাহাবা থেকে গল্প সংকলন
১০-১৫: হাদিস সংকলন, গল্প সংকলন সীরাত থেকে, কুরআন বেসিক, আকীদা বিস্তারিত, তাওহীদ-কুফর দ্বন্দ্ব, সাহাবী-তাবেঈনদের কৈশোর

খ.
আমরা টেক্সট বইয়ের সাথে ছোটবেলায় “একটিভ ইংলিশ” পড়তাম, গ্রামার পড়তাম যেগুলো সরকারি না, বাইরে থেকে কিনতাম। স্কুল সিলেক্ট করে দিত। ওগুলো কি এখনও আছে?

একটা একটিভ ইংলিশ বই করা যায় দীনী মেজাজের? একটা ইংলিশ গ্রামার যেখানে ট্রান্সলেশন দিয়ে দীন শেখাবো? পাপীরা আগুনে পুড়িতে থাকিবে। জারিফ শবে কদরে নামাজ পড়িয়াছিল। আল্লাহ সূর্যকে পূর্বদিকে উঠান।

একটা বাংলা গ্রামারও চেষ্টা করা যেতে পারে।

গ.
স্কুলের ইসলাম শিক্ষা বইটা পর্যাপ্ত না। পরীক্ষার ছুটিতে বাবা মায়েরা একটা দীন সিলেবাস করতে পারেন বাচ্চাকে পড়ানোর জন্য। এমন ক্লাস ওয়াইজও হতে পারে বইগুলো বয়স ওয়াইজ না হয়ে। আমি একটা করেছিলাম। পরে দিবনে ইনশাআল্লাহ। আপনারা কেউ করলে শেয়ার করতে পারেন। ইদানীং মনটন খারাপ থাকে। তাই বাচ্চাদের নিয়ে ভাবি। মন ভাল হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *