
ইমাম আবু হানীফা ও যৌক্তিক আন্দোলন
শাসকের জুলুমের ব্যাপারে কোন কথা বলা যাবে না; বরং চুপ করে সবর করতে হবে। চিহ্নিত কিছু শায়খরা এই গান জোরেশোরে গাচ্ছেন এবং মুসলিমদের হৃদয় থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদের মানসিকতাকে কবর দিচ্ছেন। তারা এই প্রসঙ্গে ইমামদের অবস্থানকে বারবার তুলে ধরেন দলিল হিসেবে। তাদের অনুসারীরাও সেগুলো লুফে নেন এবং তোতাপাখির মত অন্ধ তাকলিদ করে তা মুখে আওড়াতে থাকেন এবং অন্যদের কাছে প্রচার করে বেড়ান।
এই ক্ষেত্রে তারা সবসময় ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ এর উদাহরণ পেশ করেন। বলেন, উনারা সবাই নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও চুপ থেকেছেন। তারা কেউ শাসকেন জুলুমের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেননি। সবর করেছেন এবং এটাই তাদের মানহাজ। এই দাবী কতটা সত্য সেটা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করব।
ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহকে দিয়েই শুরু করছি। ১২১ হিজরীতে ইমাম যায়দ ইবনে আলী রাহ. উমাইয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। সেসময় খলীফা ছিল হিশাম ইবনে আবদুল মালিক। আবু হানীফা রাহ. সেই আন্দোলনে স্বশরীরে অংশগ্রহণ না করলেও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন। ফদল ইবনে যুবাইর বলেন, আমাকে আবু হানীফা (কিছু অর্থ দিয়ে) বললেন, যায়দকে বলবে, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমার পক্ষ থেকে তার জন্য কিছু অর্থসাহায্য ও সহায়তা আছে। সেগুলো দিয়ে সে এবং তার সঙ্গীরা যাতে অস্ত্রসস্ত্র সংগ্রহ করে।’ এরপর আমাকে সেই অর্থসাহায্য দিয়ে যায়দের কাছে পাঠালেন এবং যায়দও তা গ্রহণ করলেন। [১]
আবদুল্লাহ ইবনে মালিক ইবনে সুলাইমান থেকে বর্ণিত আছে, ১০ হাজার দিরহাম অর্থসাহায্য পাঠিয়েছিলেন তিনি। এবং দূতকে বলেছিলেন, তার কাছে আমার ওজরের কথা বলবে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, তিনি অসুস্থতার কথা বলেছিলেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, তাকে যখন জিগেস করা হলো, আপনি নিজে কেন যাচ্ছেন না? তিনি জানালেন, ‘মানুষের অনেক আমানত আছে আমার কাছে। আমি ইবনে আবি লাইলার কাছে সেগুলো দিতে চেয়েছি। তিনি নিতে রাজি হননি। আমার আশঙ্কা হলো, এগুলো এভাবে থাকা অবস্থায় আমার যদি মৃত্যু হয়ে যায়!’ যখনই তার কাছে বের হবার প্রসঙ্গ আলোচিত হতো, তিনি কাঁদতেন। [২]
এই হলো ইমাম আবু হানীফার অবস্থান।
আমাদের দেশের কিছু শায়খরা কথায় কথায় ইমাম আবু হানীফার প্রসঙ্গ টেনে আনেন এবং যা প্রমাণ করতে চান তাদের মতের সাথে তো এই অবস্থান সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। একজন মানুষের জীবনের কর্মপন্থা যে বিষয়কে প্রমাণ করে, সেটাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা নৈতিকভাবে অন্যায়।
ইমাম আবু হানীফা রাহ. তার জীবদ্দশায় উমাইয়া ও আব্বাসী উভয় খেলাফতই পেয়েছেন। উমাইয়াতের হাত থেকে আব্বাসীদের আন্দোলন ও ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া তার চোখের সামনে দিয়েই হয়েছে। ১২১ সালে শুরু হওয়া যায়দ ইবনে আলীর আন্দোলন তার শাহাদাতের পর দমে যায়নি। বরং এর রেশ ধরে সেটা দীর্ঘ এক যুগ চলমান থাকে এবং ১৩২ হিজরীতে উমাইয়াদের পতনের মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা পায়।
১২০ হিজরীতে হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমানের মৃত্যুর পর ইমাম আবু হানীফা তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং ফতোয়া প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তো এই লম্বা সময়ে থেকে কি কেউ একটা ফতোয়া দেখাতে পারবে, যেখানে ইমাম আবু হানীফা আব্বাসীদেরকে খারেজি বলেছেন? তাদের এই আন্দোলনের সমালোচনা করে বয়ান দিয়েছেন? বরং ইতিহাসে এর উল্টোচিত্র দেখি আমরা। মুহাম্মাদ ইবনে জাফর আল-আব্বাসী শাসনক্ষমতা পাবার পরে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ আবু হানীফাকে রহম করুন! যায়দ ইবনে আলীকে সাহায্য করার দ্বারা আমাদের প্রতি তার ভালবাসা প্রমাণিত।’ [৩]
মোটকথা হলো, ইমাম আবু হানীফা রাহ. এর অবস্থানকে যেভাবে অনেকে তুলে ধরেন, সেটা সঠিক নয়। বরং তার জীবনের খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরে ভুলভাবে উপস্থান করা হয় তাকে।
আমাদের বড় একটা দুর্বলতা হলো, আমরা পড়তে রাজি না। শুধু কে কি বলল সেগুলো শুনে বসে থাকি। মহামতি ইমামদের জীবনী ও সেই সময়কার ইতিহাস পড়ুন। জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের ইস্পাত কঠিন অবস্থান দেখতে পাবেন। সেজন্য ইতিহাস অধ্যয়নের কোন বিকল্প নেই।
তথ্যসূত্র :
১. মাকাতিলুত তালিবিইয়ীন, আবুল ফারাজ আল-আসবাহানী : ১৪১)
২. আল-জাওয়াহিরুল মুদ্বিইয়া ফী ত্ববাকাতিল হানাফিইয়্যা, আল-কুরাশী : ১/৪৯৬
৩. মাকাতিলুত তালিবিইয়ীন, আবুল ফারাজ আল-আসবাহানী : ১৪০

ইমাম মালেক রাহ. ও যৌক্তিক আন্দোলন
ইমাম মালেক রাহ. এর বিষয়ে আলোচনায় যাবার আগে গত পর্বের সম্পূরক হিসেবে আরো কিছু বিষয় তুলে ধরব। এতে ইমাম আবু হানীফা রাহ. এর জীবদ্দশায় সৃষ্ট অন্য একটি আন্দোলনের ব্যাপারে তাঁর ও আরো কয়েকজন সালাফের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরব।
আমরা জানি আবু হানীফা রাহ. কারাবরণ করেছিলেন এবং তাকে নির্যাতিত হতে হয়েছে। এটাকেই অনেকে জুলুমের ব্যাপারে সবর করার দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করেন। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই কারাবন্দির কারণটাই ‘নিশ্চুপ শায়খ’দের বিপক্ষে যায়। ঘটনা হলো, যায়দ ইবনু আলী যখন আন্দোলনের ডাক দেন, তখন সেই আন্দোলন দমনে উমাইয়া খিলাফতের আমির ইবনু হুবাইরা জেল-জুলুম শুরু করেন। তার এই কর্মকাণ্ডকে সাধারণ মানুষের সামনে গ্রহণযোগ্য করার জন্য দরকার ছিল সর্বজনস্বীকৃত কোন আলেমের সম্মতিপত্র। সে প্রস্তাব করেছিল, প্রতিটি হুকুম যেন আবু হানীফা রাহ. এর সাইন হয়ে তারপর কার্যকর হয়। এতে জনমনে আপত্তি তৈরি হবার সুযোগ থাকবে না। কিন্তু তিনি এতে সম্মত হয়ে ইবনে হুবাইরার জুলুমের সহযোগী হতে চাননি। কারণ আগে থেকেও তিনি যায়দ ইবনে আলীর আন্দোলনের সমর্থন ছিলেন। তাহলে এই ঘটনাকে কি সরকারের জুলুমের পরেও চুপ করে সবর করতে হবে, কোন কথা বলা যাবে না- এমন মতের পক্ষে পেশ করা যায়? প্রশ্নটা রইল পাঠকের কাছে।
ইমাম আবু হানীফা রাহ. এর জীবদ্দশায় দ্বিতীয় যে বড় আন্দোলন হয়েছিল তা ছিল নবী বংশের মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহর আন্দোলন। যিনি ইতিহাসে ‘নফসে যাকিইয়া” বা পূতআত্মা উপাধীতে প্রসিদ্ধ। এটি হয়েছিল ১৪৫ হিজরীতে। তার আন্দোলনের পক্ষেও ইমাম আবু হানীফা রাহ. এর পূর্ণ সমর্থন ছিল।
নফসে যাকিইয়ার ভাইয়ের নাম ছিল ইবরাহীম। তিনি ইরাক অঞ্চলে নফসে যাকিইয়ার প্রতিনিধি ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে ইদরীস বলেন, দুই ব্যক্তি আবু হানীফার কাছে ইবারাহীমের সাথে বের হবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বের হতে বললেন। [১]
সেসময় খলীফা ছিলেন মানসুর। তিনি এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়েছে ইমামকে কুফা থেকে বাগদাদে পাঠান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ইমাম আবু হানীফার সমসাময়িক আরেকজন বড় সালাফ হলেন সুফয়ান সাওরী রাহ.। তিনিও যায়দ ইবনে আলী ও নফসে যাকিইয়া রাহিমাহুমাল্লাহ উভয়ের আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। [২]
এবার আসি ইমাম মালেক রাহ. এর প্রসঙ্গে। তাকেও জুলুমের শিকার হতে হয়েছিল তৎকালীন শাসকের হাতে। এটাকেই ‘নিশ্চুপ শায়খ’রা জালিমের জুলুমকে চুপচাপ মেনে নেবার পক্ষে দলীল দেন। অথচ মূল ঘটনা তাদের এই অবস্থানকে নাকচ করে।
উপরে বর্ণিত মুহাম্মাদ নফসে যাকিইয়া রাহ. এর আন্দোলনের বড় কেন্দ্র ছিল মদীনা মুনাওয়ারা। অনেকে যখন নফসে যাকিইয়ার আন্দোলনে শরীক হবার বিষয়ে ইমাম মালেক রাহ. কে প্রশ্ন করে বলেন, আমাদের ঘাড়ে আবু জাফর মানসুরের বাইআত আছে। এখন নফসে যাকিইয়ার আন্দোলনে শরীক হবার বিষয়ে আপনার কী মত? তিনি বলেন, তারা জোর করে বাইআত নিয়েছে। আর জোর করে কোন কসম সাব্যস্ত হয় না। এটা শোনার পর লোকজন মুহাম্মাদের আন্দোলনে শরীক হতে শুরু করে।[৩]
মূলত এই মাসআলার ভিত্তি হলো অন্য আরেকটি মাসআলার উপর। সেটা হলো
জোরপূর্বক তালাক দিলে তা কার্যকর হয় না। তো ইমাম মালেক এই বিষয়টা খোল্লামখোল্লা বর্ণনা করতেন। খলীফার নিষেধ তিনি উপেক্ষা করেন। এই ফতোয়ার কারণে তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। [৪]
অনেকে দাবী করেছেন, ইমাম মালেক রাহ. আন্দোলনের সাথে কোন সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি সাধারণভাবেই ফতোয়াটা বর্ণনা করেছেন। ঘটনাক্রমে সেই সময় নফসে যাকিইয়ার আন্দোলন চলার কারণে তিনি ইমাম মালেকের এই ফতোয়ার মাধ্যমে উপকৃত হন এবং খলীফা বিপাকে পড়ে। যদি আমরা এটা মেনেও নেই তবুও তো প্রশ্ন আসে, উনার বলা ফতোয়ার কারণে যদি জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয় তাহলে উনার উচিত ছিল দায়বদ্ধতা থেকে লোকদেরকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া যে, ফতোয়াটা আপন স্থানে ঠিক আছে। কিন্তু এর ভিত্তিতে শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়া যাবে না। যেহেতু উনার উপর দোষ আসছিল বা উনার বলা মাসআলা নফসে যাকিইয়ার আন্দোলনে রসদ যোগাচ্ছিল। অথচ এমন কোন বিবরণ পাওয়া যায় না। বরং তিনি বেত্রাঘাত সয়েছেন তবুও আপন অবস্থানে অটল ছিলেন। এমনকি তার এক হাত বা পা অবশপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। এমন একজন ইমাম থেকে কিভাবে এটা আশা করা যায় যে, তার একটি ফতোয়ার অপব্যবহার হচ্ছে নিজের চোখের সামনেই বা তার ফতোয়াটা মানুষ ভুল বুঝে ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে অথচ তিনি কোন কথাই বলছেন না? মানুষকে বিষয়টা ক্লিয়ার করে দিচ্ছেন না! উম্মাহর এমন প্রাজ্ঞ একজন ইমাম থেকে এটা কখনো সম্ভব। নয়। সেজন্যই সেই আন্দোলনে তাঁর মৌন সমর্থন ছিল বলে যারা দাবী করেছেন সেটাই সঠিক বলে মনে হয়। মৌন সমর্থন যদি নাও থাকে মেনে নেই, অন্তত বিরোধীতা ছিল না এটা তো নিশ্চিত।
এছাড়াও সেই সময় আরো অনেক মনীষী নফসে যাকিইয়াকে সমর্থন করেন। তাদের মধ্যে রয়েছে আব্বাদ ইবনুল আওয়াম, ইয়াযীদ ইবনে হারুন, খালিদ ইবনে আবদুল্লাহ, হুশাইম, ঈসা ইবনে ইউনুস প্রমুখ।
আগামী পর্বে সমাপ্য….
সূত্র :
১. মাকাতিলুত ত্বলিবিইয়ীন : ৩৬৫
২. তারীখে বাগদাদ, : ১৩/৩৮৫; মুকাতিলুত ত্বলিবিইয়ীন : ১৪৩
৩. তারীখে তাবারী : ৪/৪২৭
৪. আল-ইনতিকা, ইবনু আবদিল বার : ২৩
মিছিল-সমাবেশ বনাম বিদ্রোহ
আমার বিগত দুইটা পোস্ট থেকে অনেকে এই উপসংহারে পৌঁছে যাচ্ছেন আমার ব্যাপারে যে, আমি গাড়ি ও দোকানপাট জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদিতে সমর্থন করছি। কয়েকটি বিষয় ক্লিয়ার করি-
জালিমের জুলুমের বিপক্ষে উচ্চকণ্ঠে কথা বলা শুধু উচিতই নয়, দায়িত্বও বটে। এটা চাই হুমকির মুখে রাস্তায় নেমে যৌথভাবে শ্লোগান তুলে হোক কিংবা এসি রুমে বসে হোক। মূল বিষয় হলো, জুলুম ও অন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া জরুরি। সেটার প্রতিবাদ করা, এর প্রতি ঘৃণা ও অসহমত প্রকাশ করা ও অন্তরে পোষণ করা ঈমানী দায়িত্ব।
আমাদের অনেক ভাই নির্দিষ্ট কোন দাবী-দাওয়ার জন্য বা জুলুমের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ কিংবা অসমত প্রকাশের উদ্দেশ্যে করা প্রতিবাদ-সমাবেশ ইত্যাদিতে খুরুজ আলাল হাকিম তথা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বলে আখ্যা দেন এবং এই জাতীয় নানান দলিল এনে হাজির করেন। অথচ দুইটা ভিন্ন জিনিস। সাধারণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, যেগুলোর উদ্দেশ্য সরকার হটানো থাকে না, সেগুলোকে এর আওতায় ফেলা যায় না।
দেশে দেশে অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদের একটা ধরণ হলো বিক্ষোভ করা। এটি জায়েয কিনা সেই বিষয়ে আরব-অনারব আলেমদের মধ্যে দুই ধরনের মতামত আছে। দুই মতামতকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে শেষ পর্যন্ত খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। কারণ যারা নাজায়েয বলেন তাদের মূল পয়েন্ট দুইটি-
১. এটি সাহাবা-তাবেয়ী যুগে ছিল না।
২. এতে অন্যের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি করা হয়।
যারা জায়েয বলেন তাদের পয়েন্ট হলো-
১. বিক্ষোভ হলো প্রতিবাদের একটা মাধ্যম। এটি মূল না, মূল হলো অন্যায়ের প্রতি অসহমত ও জুলুমের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা। এর মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা এবং নিজেদেন অসহমতের কথা জানান দেওয়া। যে কোন মাধ্যমের হুকুম তার মূলের বিবেচনায় গৃহীত হয়। মূল জিনিস খারাপ হলে তার জন্য অবলম্বনকৃত পন্থাটাও খারাপ হবে। আর মূল জিনিস ভাল হলে তার জন্য অবলম্বনকৃত পন্থাটিও বৈধ বলে বিবেচিত হতে হবে। মাধ্যমটা খাইরুল কুরুনে সরাসরি বিদ্যমান থাকা জরুরি নয়।
২. তবে মাধ্যমটার বৈধতার জন্য শর্ত হলো অন্যের জান-মালের উপর ইচ্ছাকৃত আঘাত বা ক্ষতি হানা যাবে না বা এমন অসদুদ্দেশ্যে এগুলো করা যাবে না। শর্ত রক্ষা হলে মিছিল-সমাবেশ প্রতিবাদের মাধ্যম হতে অসুবিধা নেই।
বর্তমান সময়ে সামাজিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রাখলে দ্বিতীয় মতটিই অধিক যুক্তযুক্ত ও শক্তিশালী বলে মনে হয়।
মিছিল-সমাবেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি যদি কখনো তৈরি হয়ে যায় তখন কিছু ভাই আবেগ বা জিদের বশবর্তী হয়ে শরীয়তের সীমা লংঘন করেন এতে কোন সন্দেহ নেই। অযথাই সামনে পাওয়া গাড়িতে অগ্নি সংযোগ বা দোকানপাট ভাংচুর করেন। এগুলো অন্যের সম্পদ বিনষ্টের আওতায় পড়ার কারণে তা তখনোই জায়েয নয়। এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত ও বান্দার হক বিনষ্ট করার কারণে পরকালে জবাবদিহিতার ভয় করা উচিত।
সরকারের দ্বীন-ইসলাম বিরোধী কোন পলিসির প্রতিবাদে মাঠে মিছিল-সমাবেশ করে প্রতিবাদ করাকে যারা খারেজিপনা নাম দেন ও এর পক্ষে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দলিল উপস্থাপন করার অপচেষ্টা করেন তাদের উচিত বিষয়গুলো নিয়ে আরো ভাবা। আগেই বলেছি, বিদ্রোহ আর সাধারণ প্রতিবাদ দুইটা দুই জিনিস।