হারিয়ে যাওয়া একটি সুন্নাহ আমল “গাইরাত” ( আত্মমর্যদাবোধ )

হারিয়ে যাওয়া একটি সুন্নাহ আমল “গাইরাত” ( আত্মমর্যদাবোধ )
.
আসুন বিস্তারিত যেনে নেই:-
“গাইরাত” একটি আরবি শব্দ যার অর্থ protective jealousy. ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টাকে একটি ভালো এবং প্রয়োজনীয় গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা কিনা একজন পুরুষ তার স্ত্রী, কন্যা বা বোনের ক্ষেত্রে অনুভব করে যখন অন্য কোন নন-মাহরাম পুরুষকে তাদের সংস্পর্শে দেখে অথবা তাদের দিকে তাকাতে দেখে. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাঁর স্ত্রীদের (সম্মানের) প্রতি গীরাহ অত্যন্ত বেশি ছিল এবং সাহাবাগণের মধ্যেও তা পরিলক্ষিত হয়।
.
একজন মুসলিম পুরুষের মধ্যে এই গুণটি থাকা আবশ্যক কেননা রসুলুল্লাহ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেনঃ
(এক) যে মদ তৈরী করে,
.
(দুই) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে এবং
.
(তিন) দাইয়্যুস ব্যক্তি’ (a man who has no protective jealousy towards his womenfolk)
[মুসনাদে আহমদ]
.
এব্যাপারে ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“দাইয়্যুস হচ্ছে আল্লাহ’র নিকৃষ্ট সৃষ্টি এবং তার জন্য জান্নাত হারাম করা হয়েছে কেননা তার মধ্য থেকে “গাইরাত”-বোধ হারিয়ে গেছে”
এছাড়াও মুসলিম উম্মাহ’র পুরুষদের মধ্যে মুসলিমাহদের ব্যাপারেও একটি collective sense এ গাইরাত ভাব থাকা প্রয়োজন।
.
কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “The Men are the protectors and maintainers of women…” [সূরা আন-নিসাঃ ৩৪]
.
“গাইরাত”এর ব্যাপারটি অনুধাবনের জন্য নিচে কয়েকটি ঘটনা শেয়ার করছি…
.
একদা মুগীরা (রাঃ) এর সাথে কথা প্রসঙ্গে সা’দ ইবন উবাদা (রাঃ) বলেন,
‘আমি যদি আমার স্ত্রীর সাথে কোন পরপুরুষকে দেখি তাহলে আমি তাকে সোজা তরবারী দ্বারা আঘাত করে হত্যা করব। তার এ উক্তিটি রসূলুল্লাহ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছালে তিনি বললেন: ‘তোমরা কি সা’দ এর আত্মমর্যাদাবোধে বিস্মিত হচ্ছ? ????
.
.
আল্লাহর কসম! আমি তার চেয়েও বেশি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। আর আল্লাহ্ আমার চেয়েও বেশি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। আল্লাহ আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন হওয়ার কারণে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (সর্বপ্রকার) অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন।
.
ক্ষমা চাওয়াকে আল্লাহর চাইতে বেশি পছন্দ করেন এমন কেউই নেই। আর এই জন্য তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতাদেরকে পাঠিয়েছেন। আত্মস্তুতি আল্লাহর চেয়ে বেশি কারো কাছে প্রিয় নয়। তাই তিনি জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন।’
[সহিহ বুখারী]
.
.
পরের ঘটনাটি তৃতীয় শতক হিজরীর কাযী মূসা ইবন ইশাক (রহ) এর কোর্টের একটি ঘটনা। একদিন একজন মহিলা তার কাছে একটি অভিযোগ নিয়ে এলো। অভিযোগটি হচ্ছে, সে তার স্বামীর কাছ থেকে ৫০০ দিনার মাহর পায় কিন্তু তার স্বামী তাকে তা দিচ্ছে না। কাযী মূসার কোর্টে উক্ত মহিলার স্বামীর ডাক পড়ল।
.
কাযী মুসা যখন তাকে মাহরের কথা জিজ্ঞাসা করলেন তখন উক্ত ব্যক্তি ব্যাপারটি অস্বীকার করলো, তখন তিনি তাকে এব্যাপারে প্রমাণ পেশ করতে বললেন। লোকটি বেশ কিছু মানুষকে সাথে নিয়ে ফিরে এলো। এরপর কাযী মুসা উক্ত মহিলাকে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিলেন এবং সাক্ষীদের বললেন, তোমরা ঐ মহিলাকে দেখে আমাকে জানাবে যে, তোমরা যে মহিলার মাহর পরিশোধের ব্যাপারে জানো সে-ই এই মহিলা কি না। এরপর তিনি উক্ত মহিলাকে মুখের উপর থেকে নিকাবটি সরাতে বললেন।
একথা শুনেই লোকটি লাফিয়ে উঠে বলল, ‘হে কাযী, এ আপনি কি করতে যাচ্ছেন?’
কাযী মূসা বললেন, ‘কেন? মহিলাকে সনাক্ত করতে যাচ্ছি, নতুবা এ বিচার হবে কিভাবে?’
একথা শুনে লোকটি বলল, ‘আপনাকে সাক্ষী রেখে আমি ওয়াদা করছি, আমি আমার স্ত্রীকে উক্ত মাহর পরিশোধ করে দেবো। আমি চাই না অন্য কোন পুরুষ আমার স্ত্রীর চেহারা দেখুক।’
এ কথা যখন মহিলাটি শুনতে পেল তখন সে দাঁড়িয়ে বললো, ‘হে কাযী! যে পুরুষের মধ্যে তার স্ত্রীর ব্যাপারে এমন “গাইরাত” রয়েছে, তার জন্য আমি আমার মাহরের দাবী পরিত্যাগ করলাম”
একথা শুনে, কাযী মূসা ইবন ইশাক (রহ) অবিভূত হয়ে পড়লেন এবং উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ’Record this as a moral standard.’
[তারবিয়াতুল আওলাদ ফিল ইসলাম]
.
.
শেষ করবো ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ এর একটি উক্তি দিয়ে, তিনি বলেন:-
“যদি গাইরাত মানুষের হৃদয় ত্যাগ করে চলে যায়, তবে সে হৃদয় থেকে ঈমানও হারিয়ে যাবে”
.
.
আসুন হারানো সুন্নাহ কে আবার নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করি। #০০২৩

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *