আলহামদুলিল্লাহ মানে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। যারা ধার্মিক তারা এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কোন প্রশংসা করা হলে থ্যাংক ইউ এর বদলে আলহামদুলিল্লাহ বলা হয়। এর পেছনের আইডিয়াটা হচ্ছে, আমি এই প্রশংসার সবটুকু আল্লাহ কে দিয়ে দিচ্ছি। আমাকে যা তুমি বললে, তার দাবিদার আমি না, আল্লাহ, যিনি এই মেধা, এই অবস্থানে আমাকে রেখেছেন এই প্রশংসিত কাজটুকু সম্পাদন করার জন্য।
প্রশংসা করলে উত্তরে একটা দু’আ পড়তে হয়।
“হে আল্লাহ! আমার সম্পর্কে ওরা যা বলেছে তার জন্য আমাকে তুমি প্রশ্ন করনা। তুমি আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও উত্তম করে দাও আর আমার সম্পর্কে তারা যা জানে না, সে বিষয়ে তুমি আমাকে ক্ষমা কর।”
এই দু’আর প্রথম অংশ টা বেশ লক্ষণীয়। এখানে আল্লাহর কাছে আর্জি জানানো হচ্ছে যে ওদের করা প্রশংসার জন্য আমাকে যেন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হয়। তাদের প্রশংসা তারা করেছে, এইখানে আমাকে প্রশ্নের ব্যাপারটা আসছে কোথা থেকে? আসছে এখানেই যখন আমরা একটা প্রশংসা শুনে তা গ্রহণ করব, বা উত্তরে সম্মতিসূচক বা ধন্যবাদ সূচক কিছু বলব, তার অর্থ আমি কিছুটা হলেও ধরে নিয়েছি যে এই প্রশংসা আমার প্রাপ্য। অথচ কুরআনের প্রথম সুরার প্রথম আয়াত ই হচ্ছে ‘সমস্ত’ প্রশংসা ‘কেবল’ আল্লাহর প্রাপ্য। প্রশংসা গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা কুরআনের সর্বপ্রথম মেসেজ কেই অস্বীকার করছি। আল্লাহ এবং রাসুল (স) সবসময়ই সতর্ক করে দিয়েছেন যে আল্লাহ আমাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। স্মিত হেসে ধন্যবাদ জানালে তার অন্তর্নিহিত অর্থ আল্লাহ খুব ভালভাবেই ধরতে পারেন।
এর সূত্র ধরে আরেকটা ব্যাপারে আলোকপাত করা যায়। যে আমাকে প্রশংসা করছে, সে আমার জন্য আসলে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাড়ানোর আরেকটা কারণ তৈরি করে দিচ্ছে। অর্থাৎ একভাবে ধরতে গেলে সে আমার সুহৃদ না, বরং আমার বিচারকাজ কে আরো কঠোর করে তুলছে।
উমর (রা) এর একটা কাহিনী মনে পড়ে গেল। রাসুলুল্লাহ (স) মারা যাওয়ার আগে নাকি মুনাফেক দের একটা তালিকা করে উনার স্ত্রীর কাছে (কার কাছে মনে নাই) রেখে গিয়েছিলেন। উমর (রা) তাঁর কাছে গিয়ে কসম খেয়ে জানতে চেয়েছেন, এই তালিকায় উনার নাম আছে কিনা। সুবহানাল্লাহ! উমর (রা) হলেন রাসুলুল্লাহ (স) এর নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত জান্নাত বাসীদের মধ্যে একজন। উনি সেই কথা ধরে বসে থাকা ত দূরে থাক, মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে ছিলেন যে তিনি মুনাফিক দের একজন! এই হচ্ছে প্রকৃত মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। প্রশংসা, সেটা যার থেকেই আসুক না কেন, তাকে মনের কোথাও তাঁরা জায়গা দেয়ার কথা চিন্তায়ও আনেন না।
রাসুলুল্লাহ (সা) সারারাত নামায পড়তে পড়তে পা ফুলিয়ে ফেলতেন। আয়িশা (রা) উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি আল্লাহর সবচাইতে অনুগ্রহপ্রাপ্ত, আপনি কোন দোষ করেন না, তারপরেও এত ক্ষমা চান কেন? (আমি আবারও হাদীস টা ঠিক মত বলতে পারলাম না) উনি রেগে গিয়ে বলেছিলেন, আমার কি উচিৎ না এই অনুগ্রহের জন্য শুকরিয়া আদায় করা?
প্রকৃত মুসলিমরা যে যত প্রশংসার যোগ্য, এই প্রশংসার ঝুলি কে তারা তত বড় বোঝা বলে মনে করেছেন। কারণ সম্পদ, সন্তান এর মত এটাও আল্লাহর একটা অনুগ্রহ, একই সাথে তার কৃতজ্ঞতাবোধের একটা পরীক্ষা। আমাদের ইগো এত বেশি, হালকা পাতলা একটা কাজ করে এপ্রিসিয়েশন না পেলে ভাবি কিসের জন্য আর করব? প্রশংসা পেলে সেই মানুষটার উপর বেশ খুশি হয়ে যাই (এই প্রতিক্রিয়াটাই অনেক কে চাটুকারিতা করতে উৎসাহ দেয়) আরেকটা ভয়াবহ সাইড ইফেক্ট হচ্ছে, আমরা মুখে বলি আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়াই। এটা ভয়াবহ এই জন্য যে, কোন ফাকে সমস্ত প্রশংসার ৯৫% আল্লাহ কে দিয়ে বাকি ৫% এ নিজেকে শরীক করে ফেলছি টেরও পাচ্ছিনা। অথচ শিরক এর মূল কথাটা যেন কী? 🙂
যাই হোক। উপরে যে দু’আ টা লিখেছি তার দ্বিতীয় অংশটাও বেশ গুরূত্বপূর্ণ। আমার সম্পর্কে তারা যা জানে না সে বিষয়ে আমাকে তুমি ক্ষমা কর। এখানে যা জানে না বলতে আমার দোষ এর কথা বলা হয়েছে। আমরা অনেকেই নিজের বিনয় প্রকাশ করতে গিয়ে নিজের অক্ষমতা বা দোষগুলি মানুষকে বলি। সত্যি কথা, নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করতে পারার মত সাহস ও উদারতা খুব কম মানুষই দেখাতে পারে। কিন্তু ওই যে, ইসলাম মধ্যপন্থার অনুসারী… সেলফ প্রেইজ বা সেলফ হিউমিলিয়েশন – দুটো এক্সট্রিম এর কোনটাই করা যাবেনা। স্পষ্ট হাদীস আছে, অপরাধ করলে গোপনে আল্লাহর কাছে একান্তভাবে ক্ষমা চাও, কারও কাছে প্রকাশ কর না। কারণ যে দোষ আল্লাহ নিজে গোপন রেখেছেন বান্দা তা প্রকাশ করলে আল্লাহ পছন্দ করেন না।
অনেক সেলিব্রিটি ছাত্রজীবনের নানা দৌরাত্মের কথা খুব মজা করে বলেন… এতে করে কিন্তু অন্য একজন উৎসাহিত হতে পারে। আমি এখনও মার্ক টোয়েনের সেই উক্তির জাল ছিড়ে বের হতে পারিনি, বই ধার করে জোগাড় করেছি, শেলফ ত আর সেভাবে জোগাড় করা যায়না – এই ছোট্ট একটা উক্তি গত ১৭-১৮ বছরে আমাকে বহু আমানতের খিয়ানত করতে উৎসাহ দিয়েছে। আল্লাহ আমাকে সহ সব অত্যুৎসাহী পাঠকদের ক্ষমা করুন।
নিজের দোষ প্রকাশ করা কেও এক ধরনের গীবত এর অন্তর্গত ধরা হয়। কারণ আমার আত্মা, আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশে কিছুদিনের জন্য আমি ব্যবহার করছি। আমি এদের সম্পর্কে বাজে কথা বলার যোগ্যতা রাখিনা। একটা কথা ঘুরে ফিরে বার বার আসে, কোনকিছুই গ্র্যান্টেড ধরে নিওনা। আমার বাবা মা, আমার চাকরি, আমার আয়ু, আমার ইন্টারনেটের স্পিড, আমার পিএইচডির থিসিস, আমার মাথার চুল – কিচ্ছু না! যা পাই, সব আলহামদুলিল্লাহ! যা থেকে গা বাঁচায় চলি, তাও আলহামদুলিল্লাহ।
উপরের একটা লাইন ও আমার মাথা থেকে বের হয় নাই। দুইটা লিংক দিচ্ছি, নিজেকে শোধরানোর জন্য সোর্স খুঁজলে এগুলো সাহায্য করতে পারে।
http://www.youtube.com/watch?v=xtjwtmjbOKE
http://www.myspiritualfix.com/vid1riyaa.htm
Collected From:
Sister
Nusrat Rahman