গভীর কালো জলে আঁকা ছবি

ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে ছিলাম। দূরে, কাছে, উপরে, নিচে আকাশে আর অন্ধকার গভীর কালো জলের ভিতর। মানুষের চেহারায় তাকালে কি তার মনের অভিব্যক্তি বোঝা যায় ? ঐ গভীর কালো জলের মতন ? মেঘলা আকাশে কালো জলের চলন আরো গভীর আর দুর্বোধ্য হয়ে উঠে। কিছুই বুঝি না। মাঝে মাঝে সময়ের প্রতীক হয়ে থাকা দীর্ঘশ্বাসে খুঁজে পাই হারানো স্মরণিকা।

তুচ্ছ এ পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব মাঝে মাঝে নিজেকে অকারণে কষ্ট দেয়। মুষলধারে বৃষ্টির মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে ইচ্ছা করে। চারদিক কাঁপানো বৃষ্টি, আকাশ কালো হয়ে আসা বৃষ্টি, চারদিকে কেউ নেই। আমি একাই। বিশাল এক মাঠের মাঝে যেন আমি, যেন আমি একটি নির্জন ব্রিজের উপর। কালো আকাশ আর অবিরাম ঝরে যাওয়া বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মাঝে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই একটি রেইন কোট জড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। এখন আমি একা নিসঙ্গ গ্রহচারী দাঁড়িয়ে থাকা একা ব্রিজটির উপর। আমি দেখতে পাচ্ছি নিচে নদীটি কিভাবে পানির ফোটায় ফোটায় ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হচ্ছে। কেঁপে কেঁপে উঠছে জলের উপরিভাগ। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখে নেশা লাগে। একটা লুপের মতন মনে হয় যেখানে একই জিনিস কিছুক্ষণ পর পর বারবার ফিরে আসছে আর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কিন্তু একটুও ক্লান্তিকর নয়। দেখছি আর আমি নিজেও বুঝতে পারছি বৃষ্টির স্পর্শ। হুড তুলে দিয়েছি আমার রেইন কোটের। আমার মুখমণ্ডলই কেবল খোলা। পায়ে রাবারের বুট। হাত পকেটে। হুডের কিয়দংশ কপালের সামনে বেরিয়ে এসে কিছুটা বৃষ্টির ছাঁচ কমিয়ে দিচ্ছে। এতে একসাথে দুটো সুবিধা হচ্ছে। প্রথমত, শাওয়ারের নিচে গোসল করার মত মনে হচ্ছে না, যদিও বৃষ্টি হচ্ছে প্রবল মুষলধারে, সাথে সাথে আমার দৃষ্টিসীমা খোলা থাকছে আদিগন্ত। বারবার চোখ বন্ধ করতে হচ্ছে না। যেমনটা করতে হয় শাওয়ারের নিচে । একটু পর চোখ লাল হয়ে যায় আর দুহাতে মাথা আর মুখমণ্ডল মাসেহ করার মতন মুছে নিতে হয়। আমার এসব কিছুই করতে হচ্ছে না। আমি নিরন্তর দেখতে পাচ্ছি অবিরাম বারিধারা। আমি সেই ছায়ামূর্তি , ব্ল্যাক এণ্ড হোয়াইট সেই বিখ্যাত বৃষ্টির ছবি আমি। কেউ যেন আমার ছবিটি তুলে নিয়ে গেল। আমি তাকে দেখতে পেলাম না। কিন্তু ভদ্রতা করে সেই অদৃশ্য ফটোগ্রাফার চলে যাবার আগে আমাকে দেখিয়ে গেলেন কেমন হয়েছে ছবিটি। আমি দেখলাম আমাকে সেই ফটোগ্রাফারের তোলা ছবিতে। ছবিটি খুব সুন্দর উঠেছে। আকাশ ভরা কালো মেঘ। কিন্তু আলকাতরার মতন কালো নয়, মেঘের লেয়ারগুলো আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে ছবিটিতে কিছু মেঘ অনেক ভারী, আর অনেক উপরে আর কিছু হালকা ছাই রঙের কিছু ধূসর সাদা। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে যেন মনে হয় ছবিটির উপরের এক তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকা মেঘমালা উদাসী বৃষ্টির মাতাল হাওয়ায় ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে, হালকা একটা ভিনিয়েতিং যেন এডিট করা আছে। তার নিচে লোহার ব্রিজটি, সেই ব্রিজটির মতন, বক্স করা লোহার খোপের ব্রিজ, কিছুটা রেইল ব্রিজের মতন, হ্যাঁ রেইল ব্রিজই তো , কিন্তু রেলিং দেয়া কেন, সড়কের সেতুর মতন? আমি ওখানে দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে দেখব বলে, না এটা পুরোপুরি রেলসেতু, লোহার রেলসেতুর একটি ইউনিটে আমি দাঁড়িয়ে। ফটো তোলার সময় আমি তাকে দেখিনি। আমি ছবিটিতে রেলসেতুর এক রেলিং এর পাশে ঝুঁকে আছি আর তার সামনে  কিছুটা ফাঁকা জায়গা। ওখানে দৃশ্যের গভীরতা স্পষ্ট, অনেক দূরে দিগন্তের কাছে হালকা করে গ্রামগুলো দেখাযাচ্ছে, কিন্তু দিগন্ত রেখায় মাথা উঁচু করে থাকা কোনো তাল সুপাড়ি গাছ দেখা যাচ্ছে না। অনেক দূরে তাই।  আর ছবিটার বাকি অংশে আমি যেদিকে তাকিয়ে আছি তাও দেখা যাচ্ছে, একে বেঁকে বয়ে চলা নদীটি আর কি রকম কালো আর অদ্ভুত তার জলের চলন। ব্রিজ আর নদী, আর বৃষ্টির মাঝে আমার রেলিং এর উপর ঝুঁকে থেকে সেই নদীর জলের দিকে তাকিয়ে থাকার দৃশ্যটি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, আর আমি যে মাঝে মাঝে একটু নড়ে উঠে মাথা একটু করে উপরে তুলে দূরের নদীর বাঁকের দিকে তাকাচ্ছি তাও বোঝা যাচ্ছে। কি অদ্ভুত হয়েছে এই স্থিরচিত্রটি। ছবিটির একটু ভিতরে আমি, হাতে নিয়ে দেখলে ছবিটার ভিতরে ঢুকে পড়তে ইচ্ছা করে। ইচ্ছা করে কিছুটা পথ হেঁটে গিয়ে আমিও ঐখানে দাঁড়াই আমার ছায়ামূর্তিটির পাশেই আর  বৃষ্টি দেখি। আশ্চর্য আমি তো ঐখানেই দাঁড়িয়ে আছি। নড়িনি তো একটুও ! আমি তো দেখছিলাম বৃষ্টি আর নদী । তাহলে ছবিটি এল কিভাবে আমার হাতে ! 

 সময়ভুলে রেলসেতুর ট্র্যাকের উপর তাকাই । আড়াআড়ি করে থাকা লোহার পাতগুলোতে বাতাসে বৃষ্টির ছাঁট স্প্রের মতন সরে সরে যাচ্ছে। মাথার হুডের দ্বিতীয় সুবিধাটি এবার স্পষ্ট হল। চোখে আর মুখে খুব কম বৃষ্টির ফোটাই সরাসরি এসে লাগছে। ফলে প্রতিবারেই শিহরণ জাগছে শরীরে যেরকম লাগে প্রবল বাতাসে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে । আমি ভিজে যাই না একবারেই কিন্তু একটু একটু করে প্রতিবার প্রথম বারের মতন করে ভিজে যাই। হালকা আলো আঁধারিতে দাঁড়ালে দেখা যায় জানালার কিনার ঘেষে কিভাবে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে বৃষ্টির ফোটাগুলি, জলকণা ওদের নাম, যেমনটা দেখি সকালের প্রথম রোদে হালকা করে ভেসে বেড়ানো ধূলিকণায়। আমি শিহরণ জাগানো সেই বৃষ্টিতে একটু একটু করে ভিজে চলেছি যেন ওখানে রেলসেতুটির উপর নির্জনে দাঁড়িয়ে থেকে। জলকণার সাথে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধূলিকণাদের মিতালী, ওরা মিলেছে এক হয়ে এই অনন্তকালের এই সাদা কালো বৃষ্টির ছবিটিতে। আর প্রতিবার আমি একটু পরপর বড় করে নিশ্বাস নিয়ে অনুভব করেছি, স্মরণ করেছি সেই সোঁদা মাটির ঘ্রাণ।  

When you are sad, you feel deep within;

It’s a rainy day.

You are sad.

Allah wants you to remember him,

Allah wants you to come back in His remembrance

that’s why He afflicted you with some sorrows !

How can you be oblivious of Him !

Remember Allah and find peace !

_______________________________________________________________

আমরা যখন কাউকে ভালোবাসি তখন আমরা তাকে স্মরণ করি, তার বিচ্ছেদে বিরহ কাতর হই। আমাদের মন উদাস হয়ে উঠে, বারবার মনে পড়ে ভুলে যাওয়া সেই ক্ষণের কথা, কখনো কোনো বৃষ্টির দিনে। আমরা আল্লাহকে ভালোবাসি।

যখন কেউ আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহও তাকে স্মরণ করেন। যদিও তাঁর আমাদের স্মরণ করার কোনোই প্রয়োজন নেই। আমাদেরকে তাঁর স্মরণ আরও অনেক গাম্ভীর্যময়, অসীম আর অনন্তকালের, সুমহান সৌন্দর্যে জ্যোতির্ময়। আমার খুব ইচ্ছা করে দেখতে কেমন সেই ছবিটি যখন সব সৌন্দর্যের অধিকারী  আমাদের আমাকে হিসেবে স্মরণ করেন।

 বৃষ্টির দিনে যখন আমি দাঁড়িয়ে একা রেলসেতুটিতে ।

___________________________________

When you are sad, you feel deep within;

It’s a rainy day.

You are sad.

Allah wants you to remember him,

Allah wants you to come back in His remembrance

that’s why He afflicted you with some sorrows !

How can you be oblivious of Him !

Remember Allah  and find peace !

_______________________________

All you have to do

to have Allah remember you

is just remember Allah

that’s All you have to do

 _______________________________

“..verily, in remembrance of Allah do hearts find rest “. [13:28]



Collected from:

Brother

Sifat E Mohammad

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *