ধর্মের নামে ব্যবসা- দুই ধরণের লোক এটা করে থাকে । একদল দাবি করে তারা খাঁটি মুসলিম [এই দলে আছে কিছু ভন্ড নবী আরে অসাধু পীর ফকির], আরেকদল দাবি করে তারা ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম। দ্বিতীয় দলে আছে মুসলিম বিশ্বের অনেক রাজনীতিবিদ। দুইপক্ষের উদ্দেশ্য মোটামুটি এক, “ধর্মকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থোদ্ধার” ।
“ধর্মনিরপেক্ষ ইসলাম” – এই ধারণাটি অনেক দিন ধরেই মুসলিম বিশ্বের অনেক শাসক প্রচার করে আসছে। কিছুদিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এক মন্দিরে সূরা কাফিরূনের “তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার” আয়াতটি quote করে দাবি করে বসলেন যে, এই আয়াতের মানে হল ইসলাম নাকি ধর্মনিরপেক্ষ ! এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট পাওয়ার কি নির্লজ্জ অপচেষ্টা !
আবার মুসলিমদের ভোট পাওয়ার জন্য তাদেরকেই বলতে হয় , “আমরা কুরআন–সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করব না”। সামরিক শাসকরাও একই কাজটা করেছেন, একজন ধর্মনিরপেক্ষতা শন্দটি বাদ দিয়েছেন যদিও তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা দিয়েই শাসন করেছেন, আরেক ভদ্রলোক করেছেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, যদিও ইসলামের কিছুই তিনি করেননি। আরেকদল ইসলামের সাথে compromise করে ক্ষমতায় চলে এসেছিল, তবে ইসলাম আসে নি।
ধর্মনিরপেক্ষতার মানে হল রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে সম্পুর্নরুপে ধর্মের পৃথকীকরণ। Wikipedia তে বলা হয়েছে “Secularism is the concept that government or other entities should exist separately from religion and/or religious beliefs.”। Encarta তে বলা আছে, “exclusion of religion from public affairs: ”, অর্থটা খব সহজ, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, বিচারিক জীবনে ধর্মের কোন say থাকবে না।
কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ এইসব রাজনীতিবিদরা ধর্মনিরপক্ষতাকে ব্যাখ্যা করেন “সকলে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে”। কিন্তু এই ধর্ম পালন প্রকৃতপক্ষে ব্যাক্তিগত পর্যায়ের নামায-রো্যা পর্যন্তই, মুসলিমদের loyal থাকতে হবে আল্লাহর পরিবর্তে সংবিধানের প্রতি, সর্বোচ্চ আইন হিসেবে মেনে নিতে হবে সুপ্রীম কোর্টকে, আল্লাহকে নয়, ঠিক যেমনটি ঘটেছিল ফেরাউনের ক্ষেত্রে, সে দাবি করেছিল সে ইলাহ, তার কথাই আইন।
এইসব রাজনীতিবিদরাই পারেন তাদের মত করে কুরআন হাদীস ব্যাখ্যা করতে, সূরা কাফিরূন এর আয়াতটির অর্থ এটা না, সংবিধানের আইনের প্রতি মুসলিমরা লয়্যালটি দেখাবে,এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল এমন এক সময় যখন মক্কার কুরাইশরা রাসূল(সাঃ)কে প্রস্তাব দেয় যে, তারা দ্বীন ইসলামকে মেনে নেবে যদি রাসূল(সাঃ) তাদের মূর্তিপূজায় সম্মত হন,এই আয়াতটির মাধ্যমে এই প্রস্তাবটি কে প্রত্যাখান করা হয়। পুরো সূরাটি পড়লে প্রসঙ্গটি পরিস্কার হবে।
“(হে নবী) তুমি বলে দাও হে কাফিররা ! আমি তাদের ইবাদাত করি না, যাদের তোমরা ইবাদাত কর, না তোমরা তার ইবাদাত কর যার ইবাদাত আমি করি। এবং আমি (কখনোই তাদের)ইবাদাত করব না যাদের ইবাদাত তোমরা কর। না কখনো তোমরা তার ইবাদাত করবে যা ইবাদাত আমি করি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন, আমার জন্য আমার দ্বীন”
ইসলাম একটি আদর্শিক জীবনব্যবস্থা যার ভিত্তিতে রয়েছে এক আল্লাহর প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য। সার্বভৌমত্ব, কর্তৃত্ব, আইন প্রণয়নের মালিক একমাত্র তিনিই। তাই ইসলামে শাসনব্যবস্থাকে ধর্ম থেকে পৃথক করার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ তা’আলার শ্রেষ্ঠত্বের অর্থ হছে পৃথিবীতে শুধু তার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় থাকব, ওবামা, শেখ হাসিনা কিংবা কিং আব্দুল্লাহর কথা শুনতে কেউ বাধ্য নয়।
“আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই” [সূরা ইউসুফ–৪০]
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করল কখনই তা গ্রহণ করা হবে না, আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত” [সূরা আল–ইমরান–৮৫]
“আর আমি আদেশ করেছি যে আপনি তাদের পারস্পরিক বিষয়ে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি” [সূরা মায়িদা–৪৮]
“নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব নাযিল করেছি যেন আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন যা আল্লাহ আপনাকে দেখিয়েছেন। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন্ না” [সূরা নিসা–১০৫]
“আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব নাযিল করেছি যাতে আছে প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পস্ট ব্যাখ্যা” [সূরা নাহল–৮৯]
ধর্মনিরপেক্ষ এই মানুষগুলো সব ধর্মের মানুষদেরকেই শোষন করেছে। দারিদ্র্য আর দুর্ভিক্ষের মধ্যে আজ কোটি কোটি মানুষের চেহারা ঢাকা পড়ে BMW আর বড় বড় অট্টালিকার ছায়ায়, আমরা সেগুলো দেখে ভাবি “দেশ এগিয়ে যাচ্ছে”। Domino’s pizza তে হাসিমুখে বসে থাকা couple দেখে মনে হয় “আহ,মানুষ না জানি কত সুখে আছে”। অথচ বেমালুম ভুলে গেছি ইসলামে পুজির আগে মৌলিক চাহিদা পুরণের প্রতি জোর দেয়। আমাদের প্রিয়নবী (সাঃ) বলেছেন,
“আদম সন্তানের এর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছুই নেই–একটি ঘর,যেখানে সে বসবাস করে, এক টুকরো কাপড়,যা দিয়ে লজ্জা নিবারণ করে এবং এক টুকরা রূটি ও কিছু পানি, যা দিয়ে সে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটায়”.
“জোর যার মুল্লুক তার”-এই মুলনীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা এই দীর্ঘসূত্রী, দুর্বল ও রাজনীতিবিদের উদ্দেশ্য serve করা এই বিচার ব্যবস্থাকে আকড়ে ধরে আছি বছরের পর বছর। মানবরচিত এই আইনগুলোর ফাঁকফোকড় দিয়ে যখন অপরাধীরা বের হয়, তখন নিরপরাধ মানুষদের বিনা বিচারে কাটিয়ে দিতে হয় বছরের পর বছর। এ এমন এক বিচার ব্যবস্থা যা ১৪ বছরের কোন মেয়েকে পতিতা হবার জন্য লাইসেন্স দেয়, কিন্তু ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করাটাকে অপরাধ বলে গণ্য করে। যখন আল্লাহ বলেছে্
“হে ঈমানদারগণ ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক, আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, যদিও তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা–মাতার অথবা তোমাদের নিকতবর্তী আত্মীয় সজনের ক্ষতি হয় তবুও; কেউ যদি ধনী বা দরিদ্রও হয়, তবে আল্লাহ তোমাদের থেকে তাদের প্রতি বেশি শুভাকাঙ্খী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে নিজেদের কামনা বাসনার অনুসরণ কোর না, আর তোমরা যদি ঘুরিয়ে–পেচিয়ে কিংবা পাশ কাটিয়ে চলে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের কাজ–কর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত” [সূরা নিসা–১৩৫]
কালো টাকাকে সাদা করা থেকে টেন্ডারবাজি, ট্যাক্স ফাকিঁ থেকে অযথা বিদেশি ঋণের বোঝা মানুষের উপর চাপিয়ে part নেয়া … খাম্বার ব্যবসা থেকে শুরু করে ইডেন কলেজে পতিতাবৃত্তি, হালাল-হারামের আর ভাল-খারাপের ধার ধারেনি এই ধর্মনিরপেক্ষ লোক গুলো। যার ফলাফল আজ গুটিকয়েক মানুষের আজ দেশের সমস্ত সম্পদ, বাকিরা না খেয়ে মরে।
“… তোমাদের মধ্যকার ধন–সম্পদ যেন তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভুত না হয়” [সূরা হাশর–৭]
বন্ধু-আড্ডা-গান-নারী-নেশাতে তরূণ সমাজকে ব্যস্ত রাখতে ধর্মনিরপেক্ষ কালের কন্ঠ আর চ্যানেল আইদের অপচেষ্টার কোন শেষ নেই, আর নারীদেরকে তারা পরিণত করতে চায় ভোগপণ্য আর বিপণণ পণ্যতে। শরীরে axe মেখে কিভাবে opposite sex কে seduce করতে হবে তাই শেখানো হচ্ছে এই ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে।
“নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী–তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার।“ [সূরা আহযাব–৩৫]
দৃশ্যপট থেকে আল্লাহ সুবহানাল্লাওয়া’তাআলা কে সরিয়ে দিলে, মানুষের ভয় পাওয়ার আর কিছুই থাকে না, যার ফলাফল অবিচার, নৈরাজ্য, অশ্রদ্ধা আর বিশৃংখলা। সে অন্ধকারের দিকে যাবেই, রাষ্ট্রীয় জীবনই হোক বা ব্যাক্তিগত জীবন।
“এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি—যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন” [কুরআন ১৪:১]
কেউ একজন খুব চমতকার করে বলেছে কিভাবে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার কাজটা করতে হবে, সে কে জানিনা, কথাটা quote করলাম
“…কোরআনের দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া আপনাদের কোন পছন্দ নেই বা আশ্রয়ও নেই, যাতে আল্লাহ সুবহানুয়াতালার যমিনে তার শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়, কারন আল্লাহ শাসন কর্তৃত্বের মাধ্যমে (বান্দাদের) রক্ষা করেন,যা আল্লাহ কোরআন দিয়েও রক্ষা করেন না। কারণ আল্লাহ কোরআনকে এজন্য নাযিল করেননি যে এটা মৃত মানুষের জন্য পড়া হবে, অথবা এর আয়াতগুলো তাবিজ হিসেবে বিক্রির জন্য,বা এজন্য নয় যে দেয়াল বা বসার ঘর এটা দিয়ে সাজানো হবে অথবা এজন্য নয় যে বিশেষ বিশেষ দিনে তা তাড়াহুড়া করে পড়া হবে। বরং আল্লাহ কোরআন নাযিল করেছেন যাতে এটা মানবজাতিকে পথনির্দেশ দিতে পারে। যাতে আল্লাহর রহমতে একে গ্রহণের মাধ্যমে তারা অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিজেদের নিয়ে আসতে পারে ও নিজেদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারে এবং যাতে দাসত্ব করতে পারে সব দাসদের সেই রবের,যিনি তাদের পানির বিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যাতে মানবজাতির জীবনের অপর্যাপ্ততা থেকে বের হয়ে পরিপুর্ণ বিকাশের দিকে আসতে পারে – এই দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতেও।
আমি আপনাদের আহবান জানাই ! শত বছরের ধুলো–ময়লা শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ান এবং আপনাদের পরিশ্রমী ভাইদের প্রচেষ্টার সাথে মিলিতো হোন, যারা আমানতদার, পরিশ্রমের সাথে কাজ করে, যাতে ইসলামের সম্মান ও শক্তি ফিরে আসে এবং যাতে নবী (সা:)-এর পদ্ধতির দ্বিতীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়। এভাবেই আল্লাহর প্রতি আপনাদের দায়িত্ব পরিপুর্ণ করুন। যাতে আপনাদের কেউ কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে না পারে। সুতরাং, আল্লাহর কাছে সাহায্য চান এটি করার জন্য, যাতে আল্লাহ আপনাদের সম্মানিত করতে পারেন উভয় জীবনে এবং যাতে আপনারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন“
Collected From:
Brother
Zim Tanvir