And ‘Ad and Thamud (people)! And indeed (their destruction) is clearly apparent to you from their (ruined) dwellings. Shaitan (Satan) made their deeds fair-seeming to them, and turned them away from the (Right) Path, though they were intelligent. [Al Quran 29:38]
আমাদেরও ঠিক সেই জিনিস গুলোর দোহাই দেওয়া শেখানো হচ্ছে যেগুলোর অভাব ছিল না আ’দ আর সামুদ জাতিদেরও। আর এভাবেই আমাদের সব অন্যায় পাপকাজ গুলো বৈধতা লাভ করছে আমাদের কাছে। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে লেখা থাকে..
শোন হে মানুষ ভাই,
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।
এখানে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানকারী হিসেবে যে জিনিসটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় তা হল মনুষ্যত্ব। আবার কখনও বা চেষ্টা করা হয় আমাদের সামনে বাঁধাহীন মুক্ত জীবনের আস্বাদটিকে তুলে ধরার।
বনের পাখি বলে আকাশ ঘন নীল,
কোথাও বাঁধা নাহি তার।
খাঁচার পাখি বলে খাঁচাটি পরিপাটি,
কেমনে ঢাকা চারিধার।
আর আমরাও ঐ কথাগুলোর ধারের আড়ালে কি লুকিয়ে আছে সেটা খেয়াল না করেই কাবু হয়ে যাই। আমরা বিশ্বাস করি,
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
আবার আমরা কিছু নির্দিষ্ট বাঁধা ধরা নিয়মের আওতায় থাকতেও নারাজ। আমরা স্বাধীনতা খুঁজি। আমরা দাবী করি যে,
মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর একজন বান্দা ও তাঁর প্রেরিত রাসুল।
কিন্তু নিজেদেরকে আল্লাহর বান্দা হিসেবে মনে করি না, হয়ত মেনে নিতে পারি না। কারন দাসত্বের বন্ধনে বন্দী হতে তো আমাদের কে শেখানো হয় নি। আমাদের ধারনা আমরা আকাশের বিশালতার সাথে তো পরিচিত। কিন্তু মহান রবের বিশালতা কি ঐ আকাশকে হার মানাতে পারবে কি না ভেবে দেখা হয় নি। এই হল আসলে মানুষের সেই সীমাহীনতার নমুনা যাকে কিনা সবার উপরে সত্য বলে দাবী করা হয়।
ধ্রুব মানদন্ড হিসেবে মনুষ্যত্ব
মনুষ্যত্ব, বিবেক এই জিনিস গুলো হয়ত আমার নাই, কিংবা এগুলো বোঝার মত ক্ষমতাই হয়ত আমার নাই। কারন আমার সংজ্ঞায়, মনুষ্যত্ব আমায় বলে দেবে কোন কাজটি ন্যায়, আর কোনটি অন্যায়। আমি তো জানি,
- কাউকে হত্যা করা অন্যায়।
- দুর্বলের উপর জুলুম করা অন্যায়।
- কারো মতের উপর নিজের মত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়।
- চোখের সামনে অন্যায় দেখলে তার প্রতিরোধ না করা অন্যায়।
কিন্তু তবে কেন আমি পশু হত্যা করে খাওয়াকে অন্যায় বলি না। তবে কেন আমি নিরীহ উদ্ভিদটির জীবনের সমাপ্তি ঘটাই কেবল আমার নিজের জীবনের গতিময়তার জন্য। আমার মনুষ্যত্ব তো তখন আমায় বলে না যে, যেহেতু তোমার নিজের খাদ্য নিজে বানানোর ক্ষমতা নাই, সেহেতু অন্যের জীবন নষ্ট না করে তোমার জীবনের উৎসর্গ কর। হায় রে মনুষ্যত্ব! এই তোমার বিশালতা??? কেন কেবল আমার নিরীহ ভাইকে মেরে যখন আমার survival এর জন্য তার সম্পদ গুলো আমি আত্নসাৎ করি, তখন ই গিয়ে বলে ওঠো..”ঠিক না, অন্যায়”। গাভীর দুধ যে খাচ্ছ, কখনো কি তাকে জিজ্ঞেস করেছ যে তুমি খাও তা সে চায় কিনা? না তার সন্তানের জন্য চায়? তা তো করবো না। কারন তার সন্তান তো আর না খেয়ে মারা যাচ্ছে না! তার সন্তানের জন্যেও তো আমি বেশ ভালো একটা অংশই রাখি। আমি তাকে খাওয়াই, আমার তো কিছু অধিকার আছে তাই না? ফাইল আটকে রেখে ঘুষ খাওয়ার সময় হয়ত এ জন্যই মনুষ্যত্ব বেচারা চুপটি মেরে থাকে কেননা আমি তো মক্কেলের সব টাকা পয়সা নিয়ে নিচ্ছি না। তার স্ত্রী, ছেলে মেয়ে না খেয়ে মরবে জানলে আমি একটি টাকাও নেব না। তাছাড়া.. আমি তার কাজটা করে দিচ্ছি…কিছু দাবী তো আছে। আমি যদি সামান্য টাকা কয়টা না নেই তবে আমার পরিবার চলবে কিভাবে? তাই আমি সবল বিধায় যেভাবে নিরীহ গরু আমার খাদ্য হয়, ঠিক সেভাবেই আমার কাছে উনার ফাইল আটকা বিধায় আমি উনার কাছ থেকে টাকাও আদায় করবো!
আমি একজনের উপর ভীষন ক্ষুব্ধ। ওকে খুন করে ফেলা উচিত। এ জন্য শাস্তি তো দুরের কথা ওর মত একটা জানোয়ার মারার জন্য আমায় পুরষ্কৃত করা উচিত। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমি যদি ওকে খুন করেই ফেলি তবে আমার ফাঁসি হবে। অথচ আমার কাছে মনে হচ্ছে যে আমায় পুরষ্কৃত করা উচিত। আমার উপর তবে কি ঐ শাস্তি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না?
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে,
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।
ছোট বেলায় আবার এ ও পড়েছিলাম। প্রতিনিয়ত বাঘ খেয়ে চলেছে হরিণ, সাপ খাচ্ছে ব্যাঙকে। তবে কি এগুলো অন্যায় না এজন্য যে এটাই নিয়ম। আমার মনুষ্যত্ব তবে এও বলবে ঘুষ দেয়া নেয়াই নিয়ম। অথবা সাপ ব্যাঙ মারুক আর বিড়ালটা ইঁদুর মারুক তাতে আমার কি? তাহলে আমার দেশের সব মানুষ না খেয়ে মরুক। আমি তো ভালোই আছি। আমার কি? –সেটা আবার সমস্যা!!! হতে পারে ইঁদুর-বিড়াল কিংবা বাঘ-হরিন তো আর মানুষ না। তবে এটা কেন সম্ভব নয় যে আমি সাদা চামড়ার বলে কালো চামড়ার মানুষকে অত্যাচার করবো। তারা তো আর সাদা চামড়ার মানুষ না। কে জানে অ্যামেরিকানরাও কি আজ একই যুক্তি দেখিয়ে ইরাক আফগানিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালায় কিনা যে, ওরা তো আর অ্যামেরিকান না।
মনুষ্যত্ব, বিবেক যাই বলি না কেন আমার প্রয়োজন যেমন ঠিক তেমনি তাদের সংজ্ঞা। আমার প্রয়োজনে পতিতাবৃত্তিও মানবিক আর আমার প্রয়োজনে বিয়েও অমানবিক হতে বাধ্য।
একজন চোর ঐ চিন্তা ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নেয় যে তার চুরি করা ছাড়া গতি নাই। ভালো-মন্দ, ন্যায় অন্যায় বিচার করা মানুষের পক্ষে কখনই পুর্ণাঙ্গভাবে সম্ভব না। তাই মনুষ্যত্ব কখনই কোন আদর্শ মানদন্ড হতে পারে না যা অনুযায়ী মানুষ চলবে। ঠিক একই কারনে বলা চলে যে মানুষের তৈরি কোন বিধানই ত্রুটি মুক্ত হতে পারে না। তা ত্রুটিপূর্ণ হতে বাধ্য। তাই ইলাহহিসেবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে/কিছুকে নেয়া অন্তত কোন মুসলিমের কাজ না।
Have you seen he who has taken as his god his [own] desire, and Allah has sent him astray due to knowledge and has set a seal upon his hearing and his heart and put over his vision a veil? So who will guide him after Allah ? Then will you not be reminded?(Surat Al-Jāthiyah: 23)
সমস্যা হল আমাদের কে শেখানো হচ্ছে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরন করতে। আমাদের কে শেখানো হচ্ছে নিজের মুল্যবোধকে কাজে লাগাতে। আল্লাহ কি বলেছেন তা দেখতে নয়। একজন মুসলিম মানেই হল আল্লাহ তার ইলাহ। আল্লাহকে একজন মুসলিম কেবল মাত্র স্রষ্টা হিসেবেই দেখে না। ইলাহ হিসেবে দেখে। আর মুসলিম মাত্রই আল্লাহকে সর্বজ্ঞ মানে। একজন মুসলিম যদি বলে যে আল্লাহর সিদ্ধান্তের চাইতে আমার বা ওমক লোকের দেওয়া সিদ্ধান্তটাই হল উত্তম তবে তা স্পষ্ট কুফর। কারন আল্লাহর চাইতেও জ্ঞানী তবে কোন মানুষকে ঘোষনা করা হয়। তো এটাই স্বাভাবিক যে আমি মুসলিম হিসেবে মনে প্রানে বিশ্বাস করবো যে আল্লাহর বিধান আমার ও সমগ্র মানব জাতির জন্য কল্যানকর। আর তাই আল্লাহর বিধান মানা হোক তাই হবে আমার কাম্য। কিন্তু আমাদেরকে যে ইনজেকশন গুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলোর ফলাফল এই যে, চুরির শাস্তি হাত কাটা অমানবিক। যদি কোন রাষ্ট্রে ইসলামী আইন থাকে তবে অমুসলিমদের উপর তা চাপানো হয়। — অনেক মুসলিমের মুখেই এ ধরনের কথা শোনা যায়। তার মানে কি সে মুসলিম ভাই এ বিষয়ে নিশ্চিত নন যে আল্লাহর আইন অমুসলিম দের জন্য কল্যানকর কিনা। বা আল্লাহ এ বিষয়টা চিন্তা করে দেখেন নাই।–নাউযুবিল্লাহ।
আমরা যে সমাজে বাস করছি সেখানে ইসলামের বিধান প্রয়োগ হচ্ছে না। আমরা যে বিধান প্রনয়ন করেছি তা আমাদেরই হাতে গড়া। অথচ যারা এই বিধানকে নিজেদের জন্য পছন্দ করেছেন তারা সবাই মুসলিম বলে নিজেদের স্বীকার করেন। অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত বিধান সম্পর্কেও তাদের অজ্ঞ থাকার কথা নয়। আমরা মুসলিম হয়েও এই সহজ বিষয়গুলো, এই সব ইঞ্জেকশন গুলো ধরতে পারছি না এর কারনও এই ইঞ্জেকশন গুলোই।
আমাদেরকে বোঝানো হয়েছে যে কেন বাল্য বিয়ে খারাপ। কিন্তু এর ব্যাখ্যা সব সময়ই এড়িয়ে যাওয়া হয় একজন পুরুষের সাথে ১৭ বছর ১১ মাসের নারীর বৈধ শারীরিক সম্পর্ক অবৈধ করা হলেও একাধিক পুরুষের সাথে কেন ১৪ বছর থেকেই শারীরিক সম্পর্ক রাখা যায়। কি জানি! হয়ত অর্থনৈতিক কারনে। Capitalist সমাজ হয়ত একে রোজগারের উৎস হিসেবে দেখে। একজন পুরুষের একাধিক বিয়ের সময় শত আইনী বাঁধা আর সমাজের বিদ্রুপবাক্য সত্ত্বেও একাধিক পুরুষের সাথে মহিলার শারীরিক সম্পর্ক তা যদি হয় টাকার বিনিময়ে সেক্ষেত্রে কেন আইনী সমস্যা নাই। পুরুষেরা সিনেমা, নাটক আর টিভি চ্যানেল এ যতই হাজারো নারীর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকাক না কেন সমাজের সেখানে কিছুই আসে যায় না। নিজের ছেলে সারা রাত মোবাইলে কি জরুরী কথা সারছে তাতে কিছু এসে যায় না। কিন্তু আল্লাহ যা হালাল করেছেন তাতেই যত দোষ। মুসলিমদেরকে এই মরীচিকা থেকে কে উদ্ধার করবে যদি তারা নিজেরাই সত্য থেকে বিমুখ থাকে?
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই) কালিমাটির অর্থ তখনকার কাফির মুশরিক আরবরাও আমাদের চাইতে ভালো বুঝত।
