নবীজি ﷺ কি ইহুদীদের সন্তুষ্ট করতে বাইতুল মাকদিসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছিলেন!?
রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত :
يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُولُهُ، يَنْفُونَ عَنْهُ تَحْرِيفَ الْغَالِينَ، وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِينَ، وَتَأْوِيلَ الْجَاهِلِينَ “
অর্থ:”দ্বীনের এই ইলম প্রত্যেক পরবর্তীদের নিষ্ঠাবানরা বহন করবে, তারা সীমালঙ্ঘনকারীদের তাহরীফ( বিকৃতি) থেকে , বাতিলপন্থীদের জালিয়াতি থেকে এবং মুর্খদের ভূল তাবীল তথা অপব্যাখ্যা থেকে দ্বীনের এই ইলমকে রক্ষা করবে।”
[আল বিদউ’ ওয়ান নাহইউ আ’নহা, ইবনু ওয়াদ্দাহ ১/২৫-২৬; মুসনাদে বাযযার ১৬/২৪৭;শরহু মুশকিলিল আছার,ত্বহাবি ১০/১৭ হা:৩৮৮৪;আশ শরীয়াহ,আজুরী-১,২;মুসনাদুশ শামীয়্যীন,ত্ববারাণী ১/৩৪৪ হা:৫৯৯;আল ইবানাতুল কুবরা, ইবনু বাত্ত্বাহ ১/৯৮ হা:৩৩;আল ফাওয়ায়েদ,তামাম ইবনু মুহাম্মাদ ১/৩৫০ হা:৮৯৯;সুনানুল কুবরা,বাইহাক্বী ১০/৩৫৩-৩৫৪ হা:২০৯১১-১২;মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/১৪০ হা:৬০১]
একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে যেখানে বলা হয়েছে, রাসূল ﷺ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বজায় রাখতে ও ইহুদীদের সন্তুষ্ট করতে ১৭ মাস নিজ কিবলা রেখে ইহুদীদের কিবলা গ্রহণ কপ্রে সালাত আদায় করেছেন! (নাউযুবিল্লাহ)
কোন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কিংবা ইহুদীদের সাথে সাম্যের জন্য নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত আদায় করেন নি।
এ ধরনের কথা যারা সাম্যবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতার দলীল হিসেবে উল্লেখ করে তারা দ্বীন ও শরীয়তের স্পষ্ট মুহাররিফ (বিকৃতিকারী)। ইসলামী রাষ্ট্রে (স্রেফ মুসলিম অধ্যুষিত ভুমি নয় বরং যে রাষ্ট্রে অমুসলিমরা জিযিয়া প্রদান করে সেসব) অমুসলিমদের সাথে আচরণ বিধি কেমন হবে, তাদের কি কি অধিকার রয়েছে তা ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। মসজিদের মিম্বরে বয়ান করতে চাইলে ইসলামী রাষ্ট্রের রুপরেখা হিসেবে এসব আলোচনায় আনা যায়। তাই বলে শরীয়ত বিকৃতি করে সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার দলীল দেওয়া সাংঘাতিক অন্যায় কাজ।
নবীজি মদীনায় হিজরত করে প্রায় ১৬-১৭ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের রুখ কে কিবলা নির্ধারণ করে মুমিনদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন। কিন্তু কাউকে খুশি করা কিংবা সাম্য অথবা অসাম্প্রদায়িকতার জন্য এমন করেছে বলে কোন উল্লেখ পাওয়া যায়না। বরং বাস্তবতা এর উলটো। এছাড়াওএটা আল্লাহর নির্দেশ ছিল, এবং মুমিন সম্প্রদায় সহ অন্যান্য কাফির, মুশরিক, মুন্নাফিক ও ইহুদীদের জন্য একটি পরীক্ষা ছিল।
আল্লাহা তাবারাক ওয়া তা’আলা বলেন,
وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلاَّ لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ.
এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। আপনি যে কেবলার উপর ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। (সুরা বাকারা:১৪৩)
এছাড়াও নবীজি ﷺ বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত আদায় করতেন, কেননা ইতোপূর্বে বনী ইসরাইলের অনেক নবীগনের কিবলা এটা ছিল। সেই সুবাদে অবিশ্বাসী ইহুদীরা এদিক ফিরেই ইবাদাত করত। কিন্তু নবীজি ﷺ আল্লাহর হুকুম মানতে এদিক ফিরে সালাত আদায় করলেও তাঁর মন ও অন্তর পুরোটাই কা’বার পানে থাকত। এ কারণে প্রায়ই তিনি কিবলা হিসেবে কা’বার বিরহে সালাত অবস্থায় বে-চেইন থাকতেন, এই অস্থিরতা ও বে-চেইনি আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমেও বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাবীবের ﷺ অস্থির হৃদয়কে প্রশান্ত করার জন্যে কা’বাকে কিবলা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার পূর্বে ইহুদীরা বেশ খুশি ছিল কেননা তার ভাবত মুসলিমদের নিজস্ব কোন কিবলা নেই, তারা আমাদেরই অনুসরণ করে!!
কিন্তু হঠাৎ যুহরের ফরজ নামাজরত অবস্থায় ৩য় রাকাত থেকে নবীজি ﷺ ও তাঁর সাহাবারা আল্লাহর নির্দেশে কা’বার পানে সালাত আদায় করে সালাম ফিরানোর ঘটনায় নারাজ হয়ে গেল, এবং এটাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। তবে আল্লাহর নবী ও সাহাবারা এতে অত্যাধিক খুশি হয়েছিলেন।
তাহলে এখন কি ১৬-১৭ মাসের পর কিবলা পরিবর্তন যা ইহুদিদের ক্ষুব্ধ করেছে তার মাধ্যমে ১৬-১৭ মাসে সাম্যবাদী ও অসাম্প্রদায়িক নবীকে ও তাঁর সাহাবাদেরকে এই দলিলের ভিত্তিতে অসাম্যবাদী ও সাম্প্রদায়িক হিসেবে ঐসকল জাহেলরা আখ্যায়িত করবে? এরা আসলে নবীজিকে অপদস্ত করতে চায় নতুবা এসব বিভ্রান্তময় উদ্ভট বক্তব্য দিত না। এরা নবীর গোপন দুশমন। (লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)
যেই মসজিদে এই ঘটনাটি ঘটে সেটি ছিল মসজিদে বনু সালামা। অতঃপর কিবলা পরিবর্তনের ঘটনায় এটিকে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলাধারী মসজিদ বলা হয়। কেননা রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নামাজের মধ্যেই কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ আসে আর ১ম দুই রাকাতে কিবলা ছিল বাইতুল মাকদিস আর ২য় দুই রাকাতে কিবলা ছিল কা’বাতুল মুশাররাফা।
হিজরী দ্বিতীয় সনে বদর যুদ্ধের পূর্বে কিবলা পরিবর্তন হয়েছিল। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন : দ্বিতীয় হিজরীর রজব সালে এ ঘটনাটি ঘটে ৷ কাতাদা এবং যায়দ ইবনু আসলামও একথা বলেন এবং এটা মুহাম্মদ ইবনু ইসহাকেরও একটি বর্ণনা ৷
ইমাম আহমদ (রহ.) ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে যা বর্ণনা করেন, তা থেকেও এটাই প্রতীয়মান হয় ৷
বারা’ ইবনু আমির-এর হাদীস থেকেও এটা স্পষ্ট হয় ৷
আবার কেউ কেউ বলেন, ঐ বছর শাবান মাসে এ ঘটনাটি ঘটে ৷ ইবনু ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু জাহাশ এর অভিযানের পর ৷ কেউ কেউ বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মদীনায় আগমনের
১৮ মাসের মাথায় শাবান মাসে কিবলা পরিবর্তন হয়েছিল ৷ ইবন জারীর সুদ্দীর সুত্রে এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন এবং এর সনদ ইবনু আব্বাস, ইবন মাসউদ এবং কতিপয় সাহাবী সুত্রের ৷ জমহুরের মতে হিজরতের ১৮ মাসের মাথায় শাবান মাসের মধ্য ভাগে কিবলা পরিবর্তন হয় ৷ মুহাম্মদ ইবনু সা’আদ এবং ওয়াকিদীর সুত্রে বর্ণিত আছে যে, মধ্য শাবানে মঙ্গলবার কিবলা পরিবর্তন হয় ৷
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৪৪৫-৪৪৬]
মদীনায় হিজরতের পর তিনি ﷺ বাইতুল মাকদিসের দিকে মুখ করেই সলাত আদায় করতেন। তিনি জিবরীল (আঃ) কে বলেছিলেন- আমার আশা, আল্লাহ্ তা‘আলা যেন আমার চেহারা ইহুদীদের কিবলা হতে ফিরিয়ে দেন। জিবরীল বললেন- আমি তো আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র। আপনি আপনার রবের কাছে প্রার্থনা করুন এবং তাঁর কাছেই বিষয়টি বলুন। তিনি কিবলা পরিবর্তনের আশায় আকাশের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করলেন-
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِى السَّمَاءِ، فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا، فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ المَسْجِدِ الحَرَامِ
‘‘নিশ্চয়ই আমি তোমাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি তোমাকে সেই কিবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব, যাকে তুমি পছন্দ কর। এখন তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ কর এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকেই মুখ কর’’।
(সূরা বাকারা:১৪৪)
এটি ছিল হিজরতের ১৬ মাস পরের এবং বদরের যুদ্ধের মাত্র দুই মাস পূর্বের ঘটনা।
এতে করে যে, ইহুদীরা ক্ষুব্ধ হবে তা আল্লাহ তা’আলা আগে থেকেই বলে দিয়েছেন। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেন,
سَيَقُولُ السُّفَهَاءُ مِنَ النَّاسِ مَا وَلَّاهُمْ عَنْ قِبْلَتِهِمُ الَّتِي كَانُوا عَلَيْهَا قُلْ لِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
“নির্বোধ লোকেরা বলবে, তারা এ যাবৎ যে কেবলা অনুসরণ করে আসছিল তা থেকে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল? বলুন, পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই, তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।”
(সুরা বাকারা :১৪২)
তাহলে যারা বলেন যে, নবীজি সাম্য গড়তে ও সাম্প্রদায়িকতা ঠেকাতে করতে বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করতেন (লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ) তারা এখন কি বলবে? কেননা কিবলা পরিবর্তন কে কেন্দ্র করে তো আরও ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা আরও বেশি কষ্ট পেল!!?? তাদের মত এমন গৃহপালিত মৌলভীদের অপব্যাখ্যা থেকে আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন।
কিবলা পরিবর্তনের এই ঘটনায় বড় বড় অনেকগুলো হিকমত রয়েছে এবং এটি ছিল মুসলিম, মুশরিক, ইহুদী এবং মুনাফিক সকল সম্প্রদায়ের জন্যই পরীক্ষা। মুসলিমদের তো কোন সমস্যাই ছিলনা। আল্লাহর পক্ষ হতে হিদায়াত পাওয়ার কারণে তারা বললেন- আমরা ঈমান এনেছি, সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ হতে। তাই আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। তাদের কাছে বিষয়টি তেমন বড় ছিলনা।
মুশরিকরা বলতে লাগল, সে যেমন আমাদের কিবলার (কা’বার) দিকে ফেরত এসেছে তেমন অচিরেই আমাদের দ্বীনে ফেরত আসবে। আমাদের কিবলাকে সত্য মনে করেই সেদিকে ফিরে এসেছে। ইহুদীরা বলতে লাগল- সে তাঁর পূর্বের সকল নবীদের কিবলার বিরোধীতা করছে।
মুনাফিকরা বলতে লাগল- জানিনা, এই লোক কোথায় যাচ্ছে? প্রথম কিবলা সঠিক হয়ে থাকলে সে একটি সত্য বিষয় পরিত্যাগ করেছে। আর দ্বিতীয়টি সঠিক হয়ে থাকলে প্রথমে সে বাতিলের উপর ছিল। এ ছাড়া মূর্খরা আরও অনেক কথাই বলেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-
وَإنْ كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلا عَلَى الَّذِينَ هَدَى اللهُ
‘‘নিশ্চয়ই এটা (কিবলা পরিবর্তন) কঠিন বিষয়, কিন্তু তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ্ পথ প্রদর্শন করেছেন’’।
(সূরা বাকারা:১৪৩)
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ হতে এটি মুমিন বান্দাদের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষাও ছিল। যাতে তিনি দেখে নেন কে রসূলের অনুসরণ করে এবং কে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিবলার বিষয়টি যেহেতু একটি বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাই আল্লাহ্ তা’আলা কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে ভূমিকা স্বরূপ নাসেখ-মানসুখ তথা শরীয়তের কোন বিষয়কে রহিত করার বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ্ তা‘আলা পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি বলেছেন যে, কোন বিষয়কে মানসুখ (রহিত) করলে তার স্থলে আরও উত্তম হুকুম প্রদান করেন কিংবা অনুরূপ বিষয় স্থাপন করেন। এরপরই তিনি ঐ সমস্ত লোকদেরকে ধমক দিয়েছেন, যারা রসূল (ﷺ) এর হুকুমের বিরুদ্ধে হঠকারিতা প্রদর্শন করে এবং তাঁর হুকুমের সামনে মাথা নত করেনা।
অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা ইহুদীদের পারস্পারিক মতভেদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, তাদের একদল অন্যদলকে দোষারোপ করে বলে থাকে যে, তোমরা সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত নও। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ইহুদী-খৃষ্টানদের অনুরূপ করতে এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করা হতে সতর্ক করেছেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের কুফর ও শির্কের বিষয় উল্লেখ করেছেন। তারা বলে যে, আল্লাহর পুত্র সন্তান রয়েছে। তিনি এ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র এবং তাদের ধারণার অনেক উর্ধ্বে।
কিবলা পরিবর্তনের আলোচনার ধারাবাহিকতায় তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহর জন্যই পূর্ব ও পশ্চিম তথা সকল দিক। সুতরাং তাঁর বান্দাগণ যেদিকেই মুখ ফিরাবে আল্লাহ্ সেদিকেই রয়েছেন। তার জ্ঞান অত্যন্ত ব্যাপক ও প্রশস্ত। তিনি তাঁর বড়ত্ব ও বিশালতার মাধ্যমে সকল কিছুকে বেষ্টন করে রেখেছেন বলেই বান্দা যেদিকে মুখ ফিরাবে আল্লাহ্ তা‘আলা সেদিকেই রয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা তাঁর অনুসরণ না করার কারণে এবং তাঁকে সত্যায়ন না করার কারণে জাহান্নামে যাবে তাদের সম্পর্কে তিনি তাঁর রসূলকে কিছুই জিজ্ঞেস করবেন না।
অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রসূলকে ﷺ এই সংবাদ দিয়েছেন যে, আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খৃষ্টানরা কখনই তাঁর উপর সন্তুষ্ট হবেনা, যতক্ষণ না তিনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন।
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ
ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ।
(সুরা বাকারাহ:১২০)
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা কিবলা পরিবর্তনের বিষয়টিকে বার বার জোর দিয়ে বলেছেন। রসূল (ﷺ) যেখানেই থাকেন, যেখান থেকেই বের হন, সকল স্থানেই এবং সকল অবস্থাতেই তাঁকে কাবার দিকে মুখ ফিরানোর আদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَ مِنۡ حَیۡثُ خَرَجۡتَ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ اِنَّهٗ لَلۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكَ ؕ وَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ
আর তুমি যেখান থেকেই বের হও, তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও। আর নিশ্চয় তা সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে এবং তোমরা যা কর, আল্লাহ তা থেকে গাফিল নন। (সুরা বাকারা:১৪৯)
বারা ইবনু ‘আযিব (রাদি.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল ﷺ মদিনায় হিজরত করে সর্বপ্রথম আনসারদের মধ্যে তাঁর নানাদের গোত্র [আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন] বা মামাদের গোত্রে এসে ওঠেন। তিনি ষোল-সতের মাস বায়তুল মুকাদ্দসের দিকে সালাত আদায় করেন। কিন্তু তাঁর পছন্দ ছিল যে, তাঁর কিবলা বায়তুল্লাহ্র দিকে হোক। আর তিনি (বায়তুল্লাহ্র দিকে) প্রথম যে সালাত আদায় করেন, তা ছিল আসরের সালাত এবং তাঁর সঙ্গে একদল লোক উক্ত সালাত আদায় করেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা সালাত আদায় করেছিলেন তাঁদের একজন লোক বের হয়ে এক মসজিদে মুসল্লীদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা তখন রুকু’র অবস্থায় ছিলেন।
তখন তিনি বললেনঃ “আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, এইমাত্র আমি রাসূল ﷺ -এর সঙ্গে মক্কার দিকে ফিরে সালাত আদায় করে এসেছি। তখন তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন সে অবস্থায়ই বায়তুল্লাহ্র দিকে ঘুরে গেলেন। রাসূল ﷺ যখন বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে সালাত আদায় করতেন তখন ইয়াহূদীদের ও আহলি কিতাবদের কাছে এটা খুব ভাল লাগত; কিন্তু তিনি যখন বায়তুল্লাহ্র দিকে (সালাতের জন্য) তাঁর মুখ ফিরালেন তখন তারা এর প্রতি চরম অসন্তুষ্ট হল।
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ أَوَّلَ مَا قَدِمَ المَدِينَةَ نَزَلَ عَلَى أَجْدَادِهِ ، أَوْ قَالَ أَخْوَالِهِ مِنَ الأَنْصَارِ ، وَأَنَّهُ صَلَّى قِبَلَ بَيْتِ المَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا ، أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا ، وَكَانَ يُعْجِبُهُ أَنْ تَكُونَ قِبْلَتُهُ قِبَلَ البَيْتِ ، وَأَنَّهُ صَلَّى أَوَّلَ صَلاَةٍ صَلَّاهَا صَلاَةَ العَصْرِ، وَصَلَّى مَعَهُ قَوْمٌ ، فَخَرَجَ رَجُلٌ مِمَّنْ صَلَّى مَعَهُ ، فَمَرَّ عَلَى أَهْلِ مَسْجِدٍ وَهُمْ رَاكِعُونَ ، فَقَالَ: أَشْهَدُ بِاللَّهِ لَقَدْ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِبَلَ مَكَّةَ ، فَدَارُوا كَمَا هُمْ قِبَلَ البَيْتِ ، وَكَانَتِ اليَهُودُ قَدْ أَعْجَبَهُمْ إِذْ كَانَ يُصَلِّي قِبَلَ بَيْتِ المَقْدِسِ ، وَأَهْلُ الكِتَابِ، فَلَمَّا وَلَّى وَجْهَهُ قِبَلَ البَيْتِ ، أَنْكَرُوا ذَلِكَ .
[সহীহ বুখারী: ৪০]
আনাস (রাদি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর এ আয়াতটি নাযিল হলঃ
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
“আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি প্রায়ই লক্ষ্য করি। সুতরাং তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, যা তুমি পছন্দ কর। অতএব, তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও”।
অতঃপর সালামা গোত্রের একজন লোক যাচ্ছিল। সে দেখল, লোকেরা ফজরের সালাতের রুকুতে আছে এবং তাঁরা এক রাক’আত আদায় করেছে, সে উচ্চস্বরে বললো, ওহে, কিবলা বদলে গেছে, তখন তাঁরা ঐ অবস্থায়ই কিবলার দিকে ফিরে গেল।
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي نَحْوَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَنَزَلَتْ ( قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ) فَمَرَّ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ وَهُمْ رُكُوعٌ فِي صَلاَةِ الْفَجْرِ وَقَدْ صَلَّوْا رَكْعَةً فَنَادَى أَلاَ إِنَّ الْقِبْلَةَ قَدْ حُوِّلَتْ . فَمَالُوا كَمَا هُمْ نَحْوَ الْقِبْلَةِ .
[সহীহ মুসলিম: ৫২৭,১০৬৩]
লিখেছেনঃ শাইখ আব্দুল্লাহ আল মামুন (হাফি.)