নারীদের প্রতি খোলা চিঠি (পর্ব ২)-আলী হাসান তয়ৈব

আমার স্কুল-কলেজগামী বোন, বখাটেদের ইভটিজিং থেকে বাঁচতে চাও? এসো র্পদার আশ্রয়ে। অমানুষদের এসিড সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে চাইলেও এসো র্পদার নিরাপত্তায়। যৌতুক তোমাকে দিতে হবে না বরং নগদ মোহরানা দিয়ে তোমাকে নিয়ে যতে বাধ্য হবে যদি তুমি হিজাবে সুশোভিত হও। এ আমার দাবি নয়; বাস্তবতা। পরিসংখ্যান দেখলেই জানতে পারবে র্পদানশীনদের অল্পজনই এসব অমানবিকতার শিকার হয়।

বোন, আধুনিকতার নামে তুমি নিজেকে অসম্মান ও অনিরাপদ করো না। হেদায়েতের আলো বঞ্চিতদের প্রচার-প্রপাগাণ্ডায় বিভ্রান্ত হয়ো না। ওরা বুঝাতে চায়, সভ্যতা ও বিজ্ঞানের অভূতর্পূব উৎকর্ষের এই যুগে আবার র্ধম কেন? সভ্যতার্গবী এসব মানুষের অপপ্রচারে তুমি প্রভাবিত হয়ো না। ওরা জানে না এর আগেও পৃথিবীতে তাদের মত সভ্যতার্গবী জাতি ছিল। তারা আজ কোথায়? বল, সপ্তমার্শ্চযের তাজ মহল এবং পিরামিড যারা গড়েছে তাদরে কেউ কি পৃথিবীতে বেঁচে আছে? দয়াময় আল্লাহ কত সুন্দর করে ইরশাদ করছেনে

أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَانُوا أَكْثَرَ مِنْهُمْ وَأَشَدَّ قُوَّةً وَآَثَارًا فِي الْأَرْضِ فَمَا أَغْنَى عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (৮২)

‘তারা কি পৃথিবী ভ্রমণ করে নি, তাহলে তারা দেখত, তাদরে পূর্ববর্তীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল? তারা পৃথিবীতে ছিল তাদের চেয়ে সংখ্যায় অধিক। আর শক্তিতে ও কীর্তিতে তাদের চেয়ে অধিক প্রবল। অতপর তারা যা র্অজন করত তা তাদরে কাজে আসে নি।’

আমার প্রিয় বোন, রূপ বা তারুণ্যের জোয়ারে ভেসে যেও না। দেহের শক্তি ও সৌন্দর্যের কোনো স্থায়ীত্ব নেই। আল্লাহ চাইলে যে কোনো সময় তা কেড়ে নিতে পারেন। দেখ কত সুন্দরী রোগ বা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিরবিদায় নেয়। কতজন না মরে পঙ্গুত্ব বা অন্ধত্বের অভশিাপ নিয়ে বেঁচে থাকে। তুমি যে এর অসহায় শিকারে পরিণত হবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? পৃথিবীতে কত সুন্দরীই তো ইতিহাস হয়ে আছে; কিন্তু তারা কি কেউ মৃত্যুর দংশন থেকে বাঁচতে পেরেছে? হৃদয়কাড়া চেহারা দেখিয়ে অহংকারের সঙ্গে পথ চলো না। জগত অধিপতির ভাষায় :

وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا (৩৭)

‘তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে বড়াই করে চলো না; তুমি তো কখনো ভূমিতে ফাটল ধরাতে পারবে না এবং কখনো পাহাড় সমান উচ্চতায় পৌঁছতেও পারবে না।

প্রাণপ্রিয় বোন, তুমি কি জান বেপর্দার কুফল কি? র্পদার প্রতি যত অবহলো করা হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা ততই বাড়ছে। জাতি হিসেবে আজ আমরা আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত। কিন্তু বল, নারীদের প্রতি সামাজিক অনাচার বেড়েছে না কমেছে? নিত্য-নতুন পন্থায় নারীদরে ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এই র্পদা লঙ্ঘনই কিন্তু অবৈধ যৌন সম্পর্কের প্রথম ধাপ আর নারী-পুরুষরে অবৈধ মেলামেশাই যে নিশ্চিত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে এইডস্-এর মতো নানা রোগ ডেকে আনে, তা তো আজ অমুসলিমরাও স্বীকার করছে।

প্রিয় অমু্সলিম বোনরা আমার, আপনারাই পড়ে দেখুন সুরাইয়া দাসের মতো একজন স্বাধীনচেতা, প্রগ্তিবাদী ও প্রখ্যাত ইংরেজি ভাষার কবি ব্যক্তি পর্দা সম্পর্কে কী বলেছেন। ১৯৯৯ সালের ১২ ডিসেম্বর কেরালার কোচিন শহরে এক সাহিত্য সম্মেলনে তিনি ভাষণ দেন। সে সম্মেলনে ভারতের বহুসংখ্যক রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, কবি, পণ্ডিত গবেষক সাংবাদিকসহ বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। ডক্টর সুরাইয়া কমলা সেখানে তাঁর ভাষণে বলেন,

‘দু্নিয়ার মানুষদের আজ আমি একথা জানাতে চাই যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্ব এবং ভালোবাসার র্ধম। ইসলাম এক র্পূণাঙ্গ জীবন বিধান। আমার এই সিদ্ধান্ত কোন আবেগতাড়িত জজবাতি সিদ্ধান্ত নয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আমি গভীর নিষ্ঠা এবং ধৈর্য্যের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত পড়াশোনা করেছি। আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, অন্যান্য অনকে সৌন্দর্যের পাশাপাশি ইসলাম নারীকে আত্মরক্ষার অনুভূতি শিক্ষা দিয়েছে।

এই আত্মরক্ষার অধিকার নারীর ভীষণ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমি ইসলাম গ্রহণ করার কারণে অসংখ্য খোদার পরিবর্তে আমাকে এক খোদার উপাসনা করতে হবে। এখন রমযান, উপাসনা করতে হবে এখন রমযান মাস চলছে। মুসলমানদের নিকট অত্যন্ত পবিত্র এই মাস। এই মাসে আমি আমার চিত্তচেতনায় বৈপ্লবিক পরর্বিতন এনেছি। আমি জেনে বুঝে সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে ঘোষণা করছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। অতীতে আমার কোন র্ধমবিশ্বাস ছিল না। মূর্তিপূজার প্রতি বিরক্ত হয়ে আমি নাস্তিকতা গ্রহণ করেছিলাম। এখন আমি ঘোষণা করছি যে, আমি এক আল্লাহর এবাদত করবো। কোন রকম র্পাথক্য না করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আল্লাহর সকল বান্দাকে আমি ভালবাসবো।’

পরর্বতীকালে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কারো চাপের মুখে আমি ইসলাম গ্রহণ করিনি। এটা আমার স্বাধীন সিদ্ধান্ত। আমি কোন সমালোচকের সমালোচনার পরোয়া করি না। আমি আমার ঘর থেকে সকল র্মূতি অপসারণ করেছি। আজ আমার মনে হচ্ছে আমি নয়া জন্ম লাভ করেছি’

টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ১৯৯৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ডক্টর সুরাইয়া কমলা বলেন, ‘ইসলামী শিক্ষার মধ্যে নারীদের বোরকা আমাকে দারুণ প্রভাবিত করেছে। মুসলমান নারীগণ সাধারণ এই পোশাক পরধিান করেন। প্রকৃতপক্ষে নারীদরে জন্য বোরকা এক ওয়ান্ডারফুল পোশাক। বোরকা নারীদেরকে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে হেফাজত করে। নারীকে বিশেষ রকমের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়।’

তিনি তাদের বলেন,

‘আমার সিদ্ধান্ত আপনাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হবে। কিন্তু কি করবো বলুন, তথাকথিত স্বাধীনতায় আমি অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। নারীরা নগ্ন চেহারায় স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াবে এসব আমার মোটেই পছন্দ নয়। আমি চাই না কোন পুরুষ আমার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাবে। আপনারা শুনে অবাক হবনে বিফত ২৪ বছর যাবত আমি প্রায়ই বোরকা পরধিান করে আসছি। শপিং করার সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এমনকি বিদেশে সফরের সময় আমি বোরকা পরধিান করেছি। বোরকা পরধিান করার কারণে আমি আত্মরক্ষায় এবং নিজেকে হেফাযত করার বিশেষ আনন্দ অনূভব করেছি। আমি লক্ষ্য করছি যখন নারী র্পদা করে অন্যেরা তাদেরকে সম্মান করে। কেউ তাদেরকে অকারণে উত্যক্ত করে না।

ডক্টর সুরাইয়া আরো বলেন,

‘ইসলাম নারীকে বিভিন্নভাবে অনেক স্বাধীনতা দিয়েছে। ক্ষমতার প্রসঙ্গে বলা যায় ইসলাম নারী পুরুষরে মধ্যে যে সমতার ব্যবস্থা করেছে ইতিহাসের কোন অধ্যায়ে কোন সমাজে অন্য কেউ এরকম সম অধকিার,সমতা নারীকে দেয়নি। নারীকে পুরুষের সমান অধকিার দেয়া হয়েছে। নারী মা, বোন স্ত্রী এবং কন্যা হিসেবে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রেই মর্যাদার অধিকারী। নারীকে পিতার স্বামীর এবং সন্তানের সম্পত্তির অংশীদার করা হয়েছে। ঘরোয়া জীবনে নারী স্বামীর প্রতনিধি এবং স্বামীর সমকক্ষ। স্বামীর আনুগ্ত্যের প্রশ্নে বলা যায়-পারিবারিক জীবনের শৃঙ্খলার জন্য স্বামীর আনুগত্য করা নারীর প্রয়োজন। এই আনুগত্য আমি দাসত্ব মনে করি না। এটা নারী স্বাধীনতার মোটেই পরপিন্থী নয়। এই রকমরে আনুগত্য ব্যতীত সমাজরে কোন অংশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব নয়। ইসলাম এক র্পূণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলাম আল্লাহর নিকট র্শতহীন আত্মসমর্পনের নাম। আল্লাহর রাসূলের র্শতহীন আনুগত্যের নাম। এই আনুগত্য এবং এই দাসত্ব সত্যিকার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করে। তা না হলে মানুষ তো পশু হয়ে যেত। যেখানে সখোনে যার তার ক্ষেতের ফসলে মুখ দিত। মোটকথা ইসলাম ,একমাত্র ইসলাম নারীর মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। হিন্দুধর্মে নারীর র্মযাদা রক্ষার এরকম কোন ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায় না।’

অতএব এসো মুক্তির পতাকাতলে। নিরাপত্তার সুরক্ষিত গণ্ডিতে। র্পদা শুধু তোমার ইহকালীন জীবনকে নিরাপদই করবে না, নিশ্চিত করবে তোমার সম্মান-সমৃদ্ধি। আখিরাতে নাজাত পাবে তুমি জাহান্নামের কল্পনাতীত শাস্তি থেকে। আর চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাত হবে তোমার আবাস। আল্লাহ তা‌’‌আলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দিন। আমীন।

___________________________________

১. কয়েক বছর আগে ঢাকা থেকে ‘অন্যপথের কন্যারা’ নামে বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

২.সূরা গাফিরঃ৮২

৩.সূরা আল-ইসরাঃ৩৭

Collected from

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *